ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ খেলা ব্রাজিলিয়ান তারকা গোলরক্ষকের ঢাকা সফর

বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রশংসায় সিজার

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

 বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রশংসায় সিজার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পুরো নাম জুলিও সিজার সোয়ারেস ডি এসপিন্দোলা। সংক্ষেপে জুলিও সিজার বললেই পাঠক নিমিষেই চিনে ফেলবেন তাকে। বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার-গোলরক্ষক। ২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন ৮৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। জিতেছেন কোপা আমেরিকা কাপ (২০০৪), ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের (২০০৯, ২০১৩) শিরোপা। ক্লাব পর্যায়ে খেলেছেন ফ্লেমেঙ্গো, বেনফিকা, ইন্টার মিলান ও কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মতো বিশ্বখ্যাত ক্লাবে। জিতেছেন ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগসহ মোট ২৬টি ক্লাব শিরোপা। সেই জুলিও সিজার এখন বাংলাদেশে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় তিনি ব্যস্ত দিন পার করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাফুফের নানা আয়োজনের একটি শুভেচ্ছাদূত হিসেবে জুলিও সিজারকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রচার-প্রচারণার লক্ষ্যেও আনা হয় তাকে। বুধবার রাতে ঢাকায় আসার পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যক্রম শুরু হয় সিজারের। ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন, দুপুরে বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের সঙ্গে এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন। বিকেলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও বুরুন্ডির মধ্যকার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচটি উপভোগ করেন। এছাড়া তিনি বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে মহিলা ফুটবলারদের সঙ্গে পেনাল্টি শট ফেরানোর একটি সেশনে অংশ নেন। সব পেনাল্টি শট ফিরিয়ে দিলেও একমাত্র সিরাত জাহান স্বপ্নার শটটিই ফেরাতে পারেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সিজার বলেন, ‘এত লোক দেখে আমি অভিভূত। যখন আমি খেলোয়াড় ছিলাম, বিশেষ করে বিশ্বকাপের সময়কার কথাটি বেশি মনে পড়ছে। আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি বাফুফে সভাপতিকে ধন্যবাদ জানাই। ফিফার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে এখানে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এই প্রথম আমি বাংলাদেশে এসেছি। মাত্র একদিন এখানে থাকতে হচ্ছে। আর বেশি সময় থাকতে পারলে ভাল লাগত। তারপরও যতটুকু সময় কাটিয়েছি তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’ জুলিও আরও বলেন, ‘আমার কাছে এই সফরটি বিশেষ কিছু। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর টুর্নামেন্টে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আসতে পেরে আমি গর্বিত। এটা আমার জন্য ভাল একটা অভিজ্ঞতা। আমি আশাকরি বাংলাদেশ দল এই টুর্নামেন্ট জিতবে। আমি দলের জন্য শুভ কামনা জানাই।’ জুলিও আরও যোগ করেন, ‘বাফুফের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখানকার ফুটবল সম্পর্কে জেনেছি। এখানে আমি গোলকিপার নিয়ে অল্প সময় কাজ করেছি। একসময় এই পজিশনে খেলেছিলাম। মেয়েদের সঙ্গেও ফুটবল খেলেছি। চেষ্টা করেছি তাদের কিছু টিপস দিতে। কিভাবে স্কিলে উন্নতি করা যায়। আমি জানি ফিফা নারী টুর্নামেন্টের উন্নতির জন্য কাজ করছে। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্টিনো মেয়েদের ফুটবল নিয়ে অনেক কাজ করছেন। এখানে অনেক মেয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’ মজা করে জুলিও সবাইকে বলতে চাই ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কী হয়েছে সেটা যেন না জিজ্ঞেস করে!’ উল্লেখ্য, সেই সেমির ম্যাচে ব্রাজিল হেরেছিল ৭-১ গোলে যা তাদের ইতিহাসের জঘন্য পারফর্মেন্সগুলোর একটি। অবশ্য জুলিও ঠাট্টা করলেও সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণ ঠিকই করেন, ‘জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। অনেকে তো চেঁচিয়ে কান্না করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন আমিও ছিলাম। সেই মুহূর্তটা আমাদের ফুটবলের জন্য অনেক কষ্টের ছিল। কারণ বিশ্বকাপটা ছিল আমাদের মাঠে। তখন ব্রাজিল ছিল তারুণ্যনির্ভর দল। জার্মানির কাছে হারের পর সবাই বুঝতে পারছিল না কি। ওই মুহূর্তটা ছিল হতাশাজনক। তখন আমাদের সমর্থকদের হৃদয় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এরপর আমাদের প্রেসিডেন্ট এসে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। আমি ছাড়া ওই দলের অনেকেই কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলেছে। পরদিন সবাই অনুশীলনে যোগ দিয়েছিল; কারণ তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে হয়েছিল। আমার ক্যারিয়ারে এর আগে কখনই আমি তৃতীয়-চতুর্থ স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলিনি। বেশিরভাগ সময়ই সেমিফাইনাল খেলেছিলাম। সেখান থেকে উঠে গেছি ফাইনালে। তাই হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।’ সিজারের বয়স যখন নয় বছর তখন থেকেই গোলকিপার পজিশনে খেলা শুরু করেন। পেশাদারী ফুটবল জীবন শুরু করেন ক্লাব ডি রেগাতাস দো ফ্ল্যামেঙ্গো’র মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে ক্লেমারের সহযোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। পরের মৌসুমে তিনি আরও উজ্জীবিত ভূমিকা পালন করে মূল একাদশে আসেন ও দলের শীর্ষ গোলরক্ষকের দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে দলকে চারবার ক্যাম্পিওনাতো ক্যারিওকা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে ২০০৪ সালে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল জাতীয দলের শীর্ষ গোলরক্ষকের ভূমিকায় আসীন ছিলেন। ২০০৫ সালে দলের পক্ষে রেকর্ডসংখ্যক ১৩০টি খেলায় অংশগ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টান্যাজিওনালে তিন বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হন। এ চুক্তি সম্পাদনে ইন্টারের ব্যয় হয় ২.৪৫ মিলিয়ন ইউরো। ২০০৯ সালে আইএফএফএইচএস কর্তৃক তিনি বিশ্বের তৃতীয় সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হন। তিনি কেবল ইকার ক্যাসিয়াস এবং জিয়ানলুইজি বুফনের পেছনে ছিলেন। এছাড়াও তিনি ২০০৯ ও ২০১০ সালে পরপর দুই বছর সিরি’এ বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে ‘ব্যালন ডি’অর’ পুরস্কারের তালিকায় ২১তম স্থান দখল করেন। ওই বছর তিনিই ছিলেন একমাত্র গোলরক্ষক, যিনি এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
×