ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাহোরে জয় দিয়ে শুরুর প্রত্যাশা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

লাহোরে জয় দিয়ে শুরুর প্রত্যাশা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার টি২০ সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ হবে। আজ প্রথম টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হবে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় ম্যাচটি শুরু হবে। পাকিস্তানের মাটিতে কখনই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার যদি সিরিজ জেতা যায় তাহলে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান জয়ই হয়ে যাবে। এ সিরিজে বাংলাদেশ জিততে চায়। বাংলাদেশ টি২০ দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেমন বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাই দিচ্ছে। আমার মনে হয় যেভাবে আমরা ক্রিকেট খেলছি, শেষ কয়েকটি সিরিজে আমি খুব আশাবাদী যে ভাল কিছু ম্যাচ আমরা উপহার দিতে পারব। আমরা সিরিজ জেতার চেষ্টা করব। আমরা শুধু খেলার কথাই চিন্তা করছি। আমাদের চিন্তা করতে হবে আমাদের পারফর্মেন্সটা যেন যথাযথ দিতে পারি। এখন আমাদের খেলতে হবে। আমাদের ভাল পারফর্মেন্স করতে হবে। আমরা এটা নিয়ে আগ্রহী।’ সিরিজ জিততে হলে বাংলাদেশকে অন্তত তিন ম্যাচের দুটিতে জিততে হবে। আজ সেই সিরিজ জেতার মিশন শুরু হচ্ছে। আজ প্রথম টি২০ খেলার পর শনিবার দ্বিতীয় টি২০ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এরপর সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানে গিয়ে কখনই জেতার স্মৃতি নেই বাংলাদেশের। এবার এই সুখ স্মৃতি মিললেই হয়। বাংলাদেশ কী পারবে সিরিজ জিততে? পাকিস্তানে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল সিরিজ জিতেছে। তাতে পাকিস্তান টি২০তে এক নম্বর দল হলেও তাদের যে তাদের মাটিতে হারানো সম্ভব; তা শ্রীলঙ্কা বুঝিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ তো এখন শক্তিশালী দলই। র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান যতই নয় নম্বরে থাকুক, আট নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কা যদি গত বছর অক্টোবরে টানা তিন টি২০ ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারাতে পারে। তাহলে বাংলাদেশেরও পারার কথা। ম্যাচগুলো লাহোরেই হবে। যেখানে লঙ্কানরা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। পাকিস্তানে গিয়ে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার সাড়ে ১১ বছর পর পাকিস্তানে গেল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বুধবার রাতে বিশেষ ফ্লাইটে করে পাকিস্তানের লাহোরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। সেখানে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনের আলোয় অনুশীলন করে। আজ মাঠে নামার পালা। বাংলাদেশ দল যখন পাকিস্তান যায়, বিমানেই কেক কাটা হয়। লাহোরে মাহমুদুল্লাহদের উষ্ণ অভ্যর্থনাও দেয়া হয়। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা সব। ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে মাহমুদুল্লাহবাহিনীকে স্বাগত জানান। নিরাপত্তার কড়াকড়ি যেন ক্রিকেটারদের ওপর কোন প্রভাব না ফেলে এদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। দেশ ছাড়ার আগে নিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কিত নন ক্রিকেটাররা, খেলা নিয়েই ভাবছেন; তা সবাই জানান। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে সাবেক অধিনায়ক, বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান জানান, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, যদি টিম পারফর্মেন্স ভাল হয় তাহলে অবশ্যই ফল ভাল হবে। সব সফরেই চ্যালেঞ্জ থাকে। সবসময় বাংলাদেশ ভাল খেলতে চায়। আমরাও চাই দল ভাল খেলুক। মানসিকভাবে তৈরি হতে এবার অনেক কম সময় পেয়েছে ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানে ক্রিকেটের জন্য দারুণ পরিবেশ আছে। (আগে) আমরা অনেক ক্রিকেট খেলেছি সেখানে। দল হিসেবে খেললে ভাল করব আশাকরি।’ সৌম্য সরকার বলেছেন, ‘অনেক সিনিয়রই নাই, থাকলে অবশ্যই ভাল হতো। অবশ্যই রেসপন্সিবলভাবে খেলতে হবে আমাদের। চেষ্টা করব ওভাবে খেলার। চেষ্টা করব দুই সাইডই শতভাগ দেয়ার জন্য। যেভাবেই সুযোগ পাই যেখানেই সুযোগ আসে চেষ্টা করব ১০০ ভাগ দেবার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অবশ্যই দল হিসেবে প্রত্যাশা ভাল। যারা আমরা যাচ্ছি এবার সবাই বিপিএলে ভাল পারফর্ম করেছে। সবাই যদি বিপিএলের পারফর্মেন্সটা ধরে রাখতে পারে তাহলে দলের রেজাল্টটা ভাল আসবে।’ সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ থাকায় পাকিস্তান সফরের দলে থাকতে পারেননি। মুশফিকুর রহিম নিজে থেকেই পাকিস্তান যেতে রাজি হননি। তাতে করে দলে অভিজ্ঞতার কমতি দেখা দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতার অভাব তরুণদের খেলা দিয়ে পূরণ করতে হবে। ক্রিকেটাররাও প্রস্তুত। মোহাম্মদ মিঠুন বলেছেন, ‘মনের দিক থেকে তৈরি আছি দলের জন্য যেখানে খেলতে বলা হবে, সেখানেই খেলতে এবং সেরাটা উপহার দিতে। প্রতিটা ম্যাচ জেতার লক্ষ্যে খেলব। সিরিজ জেতার চেষ্টা করব। আর দলের জন্য যা দরকার তা করার চেষ্টা করব।’ পেসার শফিউল ইসলাম জানান, ‘সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে তরুণদের ঘাড়ে বাড়তি দায়িত্ব বর্তেছে। দায়িত্বটা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তাই বেশি এবং আমি প্রস্তুত দায়িত্ব নিয়ে পারফর্ম করতে। কোন টেনশন নেই (পাকিস্তান সফর নিয়ে)। (ক্রিকেট) বোর্ড আমাদের বুঝেশুনেই পাঠাচ্ছে। ভাল খেলে দেশে ফিরতে চাই।’ পাকিস্তানে বাংলাদেশ দল ‘প্রেসিডেনশিয়াল নিরাপত্তা’ পাচ্ছে। তিন স্তরবিশিষ্ট একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার হয়েই কেবল স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবেন একজন দর্শক। মোট ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। ১৭টি সুপার পুলিশ ডিভিশন এবং ৪৮টি ডেপুটি সুপার পুলিশ ডিভিশন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩৪ জন ইন্সপেক্টর এবং ৫৯২ জন উর্ধতন সাব-অর্ডিনেট অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদেরও একই ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের টিম বাসে যে হামলা হয়েছিল, তা ঘটেছিল হোটেল থেকে ক্রিকেটাররা স্টেডিয়াম যাওয়ার পথে। তাই ক্রিকেট দল যেসব পথ দিয়ে যাবে ও আসবে, সেসব জায়গায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবনের ছাদগুলোতে স্নাইপার, প্রয়োজনে ডলফিন স্কোয়াড (যারা বাইকে টহল দেবেন), এলিট পুলিশ স্কোয়াড এবং পুলিশের রেসপন্স টিম থাকছে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে দেশ থেকে পাঠানো নিরাপত্তা প্রতিনিধিদলও থাকছে। কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে নিরাপত্তা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না। এ দায়িত্ব পাকিস্তানেরই। বাংলাদেশ দল গেছে পাকিস্তানে খেলতে। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে এর দায় পাকিস্তানকেই নিতে হবে। তাছাড়া ২০০৯ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা দল ১০ বছর পর পাকিস্তানে খেলতে গেছে। তাতে পাকিস্তানও ক্রিকেট দলগুলোকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে। এখন যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ঠিকমতো না দেয়া হয়, কোন অঘটন ঘটে; তাহলে পাকিস্তানেরই বেশি অসুবিধা হবে। তখন যাও পাকিস্তানে যাওয়ার কথা দলগুলো ভাবছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে যত না চিন্তা করতে হবে, তারচেয়ে বেশি পাকিস্তানকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কিছু ঘটে গেলে যে তাদেরই বেশি ক্ষতি। আর তাই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা না করে ক্রিকেটাররা খেলা নিয়েই ভাবছে। আজ প্রথম টি২০ দিয়ে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলতে নেমেও যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। পাকিস্তান জয়ের মিশনে নামবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদবাহিনী।
×