ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইসিজের রায়ে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা, আশ্রয় ক্যাম্পে মোনাজাত

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

 আইসিজের রায়ে সন্তুষ্ট  রোহিঙ্গারা, আশ্রয় ক্যাম্পে মোনাজাত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর আউং সান সুচি যা বলেছিলেন তা সব পুরনো কথা। ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মিথ্যাচার করে সুচি বলেছিলেন, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়নি। আজ তা মিথ্যা প্রমাণিত। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মানবতার দোহাই তুলে লাখ লাখ রোহিঙ্গার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়ে সামরিক কর্মকর্তাদের মন রক্ষা করতে দেশছাড়া করার উদ্দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছেন। নির্বিচারে গুলি করেছে রোহিঙ্গাদের। ধর্ষণ করেছে হাজারো রোহিঙ্গা নারীকে। জ্বালিয়ে দিয়েছে পাড়ার পর পাড়া। অথচ ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক আদালতে মিথ্যাচার করে সুচি বলেছিলেন, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়নি। রোহিঙ্গা নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সুচির ভাষ্য মতেÑগণহত্যা না হলে ইতোপূর্বে তার সরকার তথা সেনাবাহিনী গণকবরের বিষয় স্বীকার করেছিল কিভাবে? ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা শেষে গণকবর দেয়ার চিত্র ধারণ করায় রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল কেন? বহু প্রমাণাদি নিয়ে গণহত্যার বিচার করেছে আন্তর্জাতিক আদালত। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের আবেদন খারিজ করে দেয়ায় শুকরিয়া আদায় করে মোনাজাতে শরিক হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক আদালতে সঠিক রায় দেয়ায় শুকরিয়া আদায় করতে রোহিঙ্গারা বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের মসজিদে জমায়েত হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে শুকরানা সভা। এ সময় রোহিঙ্গারা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ার ৩২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার আছর ও মাগরিবের নামাজের পর দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। বালুখালী ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের হেড মাঝি আবু তাহের বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার ন্যায়বিচার পেয়েছে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী গৃহবধূ দিল বাহার, চেমন আরা, ইসমত আরা ও নুর নাহার জানায়, আউং সান সুচি নারী আমরাও নারী। আমাদের চোখের সামনে সেনা সদস্যগণ ও রাখাইন যুবকরা রোহিঙ্গা কিশোরীদের ধর্ষণ করেছে, বহু যুবতিকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি। একজন নারী হয়ে নারীর ওপর অত্যাচার-জুলুম সহ্য করেছেন সুচি। আজ তার সঠিক বিচার হয়েছে। রোহিঙ্গা নারী নেত্রী আয়েশা বেগম বলেন, রোহিঙ্গাদের সমর্থন নিয়ে আউং সান সুচি মিয়ানমারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ ক্ষমতার মসনদে বসে তা সব ভুলে গিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে গুলি করে মেরেছে। সুচির নির্দেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা প্রমাণিত। মিয়ানমারের আবেদন খারিজ হয়েছে। চাকমারকুল ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ছৈয়দুল বশর বলেন, ২০১৭ সালের ২৬আগস্ট সকালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে শতাধিক রোহিঙ্গা যুবক খুন হয়েছে, তা আমার চোখে দেখা ঘটনা। ওই সময় আমরা দুজন কাঁটাবনে লুকিয়ে সব প্রত্যক্ষ করেছি। দেখেছি, মংডু সিকদারবিলে একটি পরিত্যক্ত স্কুলে ধরে এনে জমায়েত করেছিল শতাধিক রোহিঙ্গা যুবককে। তাদের দু’হাত বেঁধে লাইন করে বসিয়ে রাখা হয়। আমরা বের হতে না পেরে একদিন আগে থেকে পাণে বাঁচতে ওই কাঁটাবনে লুকিয়েছিলাম। দেখেছি সেনাবাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে ওই রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যা করে একাধিক ডাম্পারে তুলে নিয়ে গেছে গন্তব্য স্থানে। আদালতে আউং সান সুচি ডাহা মিথ্যা কথা বলেছিলেন। ওই মিথ্যা বলার জন্য আমরা আউং সান সুচিকে ধিক্কার জানাই। তারা বলেন, মিয়ানমার (বর্মা) আমাদের নাভিছেঁড়া দেশ।
×