ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জোবায়দা আক্তার চৌধুরী কবিতার সঙ্গে সংসারের গ্রন্থি

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

  জোবায়দা আক্তার চৌধুরী কবিতার সঙ্গে সংসারের গ্রন্থি

ছোট বেলায় খেলার ছলে অনেকেই গুনগুন করে গান গাইলেও তিনি আওড়াতেন ছড়া। স্কুল-কলেজের ফাংশনেও কবিতা পাঠের আসরে ছিলেন নিয়মিত শ্রোতা। তবে শুধু শ্রোতা হয়ে বসে থাকেননি, নিজের ছড়া বা কবিতাও পাঠ প্রশংসিত হয়েছেন স্কুলে। ব্যাপারটা যে এ পর্যন্তই থেমে থাকবে না সে বিচারবোধ তখন না থাকলেও থেমে থাকেনি কবিতা চর্চা। আর থামবেই বা কেন, যে পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠেছেন সেখানে যে প্রতিনিয়ত চলেছে কবিতা চর্চা। এদেশের প্রতিথযশা কবি বেলাল চৌধুরী তার খালাত ভাই। ছোট বেলায় তার পাশে ঘুর ঘুর করেই ভাললাগা তৈরি করেছেন কবিতার প্রতি। এ ছাড়াও বাবা ছিলেন লেখক। সে সময় বিভিন্ন পাঠ্য বইয়ে তার লেখা ছাপা হতো। বাংলা এবং ইংরেজীতে কলাম লিখতেন দেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে। বলা যায় লেখালেখির হাতটা বাবার কাছ থেকেই পাওয়া। বলছি এ সময়ে কবি জোবায়দা আক্তার চৌধুরীর কথা। কথা হয় কবিতা, ঘর সংসার এবং তার বেড়ে ওঠার নানা দিক নিয়ে। এখনও এ সমাজে অনেকেই ভ্রু কুচকে বলে থাকেন, মেয়েরা এত কবিতা লিখে কি করবে? কবিতা লিখে কোন মেয়ে কি করতে পেরেছে? এই নেতিবাচক কথা যে তাকেও শুনতে হয়েছে। কিন্তু ভাল লাগার জায়গা থেকে কি আর সরে আসা যায়। কি লাভ বা কি ক্ষতি সে হিসেব কখনই নিজর ভাললাগার প্রতি বাধা হতে পারে না। জোবায়দা আক্তার চৌধুরীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। সমসাময়িক প্রেক্ষাপট এবং অতীত স্মৃতি হাতড়ে জোবায়দা আক্তার চৌধুরী বলেন, কবিতার সান্নিধ্য পেতে আমাকে বেগ পেতে হয়নি। পারিবারিক পরিমন্ডল আমাকে এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। বাবা-চাচা-ভাইদের লেখার পৃষ্ঠাগুলো উল্টাতে উল্টাতে ভাললাগা তৈরি হতে থাকে কবিতার প্রতি, লেখালেখির প্রতি। আমার বড় বোনও চমৎকার লিখতেন। আমার লেখায় বোনের ভাবাধারা মাঝে মধ্যে খুঁজে পাই আমি। পাঁচ ভাই এবং চার বোনের মধ্যে আমি সপ্তম। আমার অগ্রজ যারা সবাই সংস্কৃতিমনা, যে কারণে তাদের ভাবাদর্শ আমার ভেতরে প্রবেশ করতে সময় লাগেনি। চট্টগ্রামের অপর্ণাচরণ গার্লস হাই স্কুলে পড়াকালীন সময়ে দেয়ালিকা কিংবা ম্যাগাজিনে আমি কবিতা লিখতাম। তবে প্রতিনিয়ত যে কবিতার পেছনে ছুটে বেরিয়েছি সেটাও না। যখন ভাল লাগত তখনই ডায়েরিতে টুকে রাখাতাম আমার সৃষ্টিগুলো। হাজী মোঃ মহসিন কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করার পর পরই সংসার জীবনে প্রবেশ করতে আমাকে। সে সময় লম্বা একটি বিরতি আমি আমার অজান্তেই নিয়ে নেই। তবে আমার স্বামী মাহবুবুল ইসলাম কখনই আমার ইচ্ছা বা ভাল লাগাকে অসম্মান করেননি। নিজের ইচ্ছাও কখনও চাপিয়ে দেননি আমার ওপর। এমনকি আমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমার সঙ্গে তাদের মেয়ের মতো আচরণ করেছেন। মন দিয়ে সংসার করেছি ঠিকই কিন্তু কবিতার বই পড়া কিংবা কবিতা চর্চা সময় পেলেই করেছি। একদিন আমার ছেলে মুনতাকা আখইয়ার নূর আমার অজান্তেই কবিতার ডায়েরি থেকে একটি কবিতা নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে মেইল করে। সৌভাগ্যক্রমে ছাপাও হয়ে যায় কবিতাটি। সকালবেলা ছেলে যখন পত্রিকাটি নিয়ে আমার সামনে হাজির হলো তখন আমি যেন আনন্দে আত্মহারা। জীবনের অন্যতম সারপ্রাইজও বলা যায়। তখন আমার ছেলে এবং স্বামী আমাকে কবিতা চর্চা নিয়মিত রাখতে অনুপ্রেরণা দিতে থাকে। সে অনুপ্রেরণাতেই আজ আমি পথ চলছি। ধারাবাহিক ছন্দে লিখতে থাকলাম কবিতা। কবিতার ডায়েরি আমার কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকল। এবার তারাই বলতে থাকল কবিতার একটি বই বের করার কথা। বই কিভাবে বের করতে সে অভিজ্ঞতা আমার একেবারেই ছিল না। শরণাপন্ন হলাম এদেশের জনপ্রিয় কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হকের কাছে। তিনি অবশ্য আমার আত্মীয় হন। সে সুবাদে তার সাজেশন পাওয়া আমার সহজ হয়। প্রথমেই তিনি আমার পান্ডুলিপি থেকে কবিতা বাছাই করে দেন এবং সেই সঙ্গে উপদেশ দিতেও ভুললেন না, তিনি বললেন প্রচুর পড়তে হবে, জানতে হবে এবং বুঝতে হবে কবিতার চলন-বলন। আলাপ করিয়ে দিলেন প্রকাশনী সংস্থার সঙ্গেও। ব্যাস, ব্যস্ত হয়ে পড়লাম প্রথম বই প্রকাশের জন্য। ২০১৮ সালের অমর একুশে বই মেলায় পার্ল পাবলিকেশন থেকে আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ‘তোমার জন্য এক পৃথিবী লিখব।’ পরিবার ও বন্ধু মহল বেশ সাড়া পেতে থাকি। উৎসাহ আমার দ্বিগুণ হতে থাকল। অব্যাহত থাকে আমার কবিতা চর্চা। সে ধারাবাহিকতায় পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে অমর একুশে বইমেলাতে একই পাবলিকেশন থেকে প্রকাশ করি দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সে তুমি নও, তোমার ছায়া।’ আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমার মতো ক্ষুদ্র একজন কবিরও একটি পাঠক বলয় তৈরি হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। পরম করুণাময় যেন আমাকে এভাবেই সবার ভালবাসায় সিক্ত রাখে এটা আমার আমৃত্যু চাওয়া এখন।
×