ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যানগ্রোভ রক্ষার দাবি উপকূলবাসীর

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

ম্যানগ্রোভ রক্ষার দাবি উপকূলবাসীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৩ জানুয়ারি ॥ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের গ্রাসে থাকা জনপদ কলাপাড়ার গোটা উপকূলকে রক্ষা করে আসছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল। এ গাছপালা বুক আগলে সবুজ দেয়ালের মতো ঠেকিয়ে দেয় জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চলের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার অবলম্বন এই বনাঞ্চল নিধনে অনিরাপদ উপকূলে ফের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়নের কাজ শুরু করেছে স্থানীয় বনবিভাগ। ফলে বাড়তে শুরু করেছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল। কোথাও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এ প্রজাতির ছইলা, কেওড়া, গোল, বাইনসহ বিভিন্ন গাছের চারা রক্ষায় বনবিভাগ কঠোর নজরদারি রাখছে। কোথায় জেগে ওঠা নতুন চরে লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা। গঙ্গামতির চরাঞ্চল ও আন্ধারমানিক নদী তীরের নতুন চরে লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির লাখো গাছের চারা। যা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন সবুজ দেয়াল হিসেবে কলাপাড়া ও পায়রা বন্দরের মানুষকে রক্ষা করবে। রক্ষা হবে মানুষ ও তাদের সম্পদ। ইতিবাচক এ উদ্যোগ দুর্যোগে মানুষকে নিরাপদ রাখবে বলে স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের মতামত। তবে বনাঞ্চলের আশপাশে নির্মিত স’মিল বন্ধের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহলটি। ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চলে বাড়িঘর তোলা বন্ধ করার দাবি উপকূলবাসীর। জানা গেছে, বনের মধ্যেসহ আশপাশে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হয় স’মিল। কোন নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই স’মিলে ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ কেটে চোরাই করে দেদার বিক্রি চলছে। বনবিভাগের কর্মীরা এতটাই উদাসীন যে কলাপাড়ায় কত স’মিল রয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান তারা দিতে পারেনি। এসব স’মিলের অধিকাংশের বৈধ কাগজপত্র নেই। অভিযোগ রয়েছে মাসোহারায় চলছে এসব। এছাড়া ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মীর কারণেও বনবিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। যেমন মধুখালীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ায় সেখানে আরও দশ বছর আগে থেকে প্রাচীন শত শত ছইলা, কেওড়া, বাইনগাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। করা হচ্ছে বসতবাড়ি। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন মধুখালী লেকসহ দুই পাড়ের বনাঞ্চলটি ধ্বংসের মুখোমুখি রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর এ বনটির দেখভাল বনবিভাগ করে আসছে। গাছ কাটার ঘটনায় অসংখ্য বনদস্যুসহ সাধারণ মানুষকে আসামি করে মামলা পর্যন্ত করেছে। এখন তারা বলছে এটি তাদের বাগান নয়। তাই বনদস্যুদের হয়েছে সোনায় সোহাগা। এ বনটির বিশাল এলাকা উজাড় করে অন্তত ছোট-বড় ১০টি মাছের ঘের করা হয়েছে। মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণ রয়েছে। ধুলাসার ক্যাম্পের অর্ধেকটা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। একই দৃশ্য গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাজুরা লেম্বুরচর বনাঞ্চলের। উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি এবং কলাপাড়ার ইউএনও মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, শীঘ্রই এ কমিটির সভা ডেকে অবৈধ করাতকল বন্ধ করা হবে। এছাড়া ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বন রক্ষায় পরিকল্পিত পরিকল্পনা নেয়া হবে।
×