ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্ক্র্যাপ হিসেবে কিনে মেরামত

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলছে পরিত্যক্ত জাহাজ

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে  চলছে পরিত্যক্ত জাহাজ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা টেকনাফ সেন্টমার্টিন যাতায়াতে বিলাসবহুল জাহাজ চলাচল করলেও এরই মধ্যে লক্কড়-ঝক্কড় একাধিক জাহাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে অধিক মুনাফা অর্জনে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এলসিটি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) নামে অচল ঘোষণা করা জাহাজটি প্রতিদিন পর্যটকদের নিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করছে। এর আগে এটি ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচল করত। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে জাহাজটির মালিক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম জাহাজটিকে নতুনভাবে রং করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের ব্যবস্থা করে। তৎকালীন এলসিটি কুতুবদিয়াকে (আটলান্টিক) খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর প্রধান ছিলেন নটিকেল সার্ভেয়ার এ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। ওই কমিটি ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট দিয়েছিল, এতে বলা হয়, জাহাজটির সার্বিক কাঠামো দুর্বল, ইঞ্জিনরুমে আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যাত্রী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ। কমিটি এলসিটি কুতুবদিয়ার ১১টি ত্রুটি শনাক্ত করে। ত্রুটিগুলো সংশোধন না করে বরং উপরে অস্থায়ী ছাদ তৈরি করে আরও বেশি যাত্রী বহনের ব্যবস্থা করেছে তারা। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতা থেকে ৩/৪ গুণ বেশি পর্যটক বহন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রে জানা যায়, এলসিটি কুতুবদিয়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুনভাবে রং করে তারা টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন পর্যটক আনা নেয়ার বাহন হিসেবে নৌরুটে চলাচল করছে। এতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক না জেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই জাহাজ নিয়ে যাতায়াত করছে। জাহাজটি বিগত দিনে বিআইডব্লিউটিসির একটি জাহাজ স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার পরেও তা মেরামত করে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে কিভাবে চলাচল করাচ্ছে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, পুরাতন ও অচল হয়ে পড়ায় এলসিটি কুতুবদিয়া স্ক্রাপ হিসেবে ২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল বিক্রি করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৬শ’ টাকায় জাহাজটি কিনে নেয় মেসার্স এ রহমান এ্যান্ড সন্স কোম্পানি। এরপর এটি ২০১৫ সালে কিনে নেন ভোলার চরফ্যাশনের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর সন্দ্বীপ কুমারীগুপ্তা নৌপথে কিছুদিন চলাচল করে এবং সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রায় তিন বছর পড়ে থাকে। পরবর্তীতে এটির মালিক নজরুল ইসলাম নতুনভাবে রং করে বর্তমানে তার মালিকানায় জাহাজটি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল করাচ্ছেন। জাহাজটির ফিটনেস সনদ কিভাবে দেয়া হলো বা আদৌ আছে কিনা বিভিন্ন মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণের ১৫ বছর পর সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং অভ্যন্তরে (ইনল্যান্ড) সর্বোচ্চ ৩০ বছর চলাচলের জন্য উপযোগী থাকে। এলসিটি কুতুবদিয়ার বয়স বর্তমানে ৩৮ বছর। সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে নির্মাণের পর ১৯৮১ সালে এটি কেনে বিআইডব্লিউটিসি। সমুদ্র নৌপরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, নির্মাণ তথ্য অনুযায়ী এটি পরিত্যক্ত জাহাজ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে কোন জাহাজ বা লঞ্চ নির্মাণের ৩০ বছর পর্যন্ত চলাচল উপযোগী থাকে। এরপর এর রেজিস্ট্রেশন এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। এলসিটি কুতুবদিয়ার (আটলান্টিক) কক্সবাজার ইনচার্জ ও ম্যানেজার মোঃ নাছির উদ্দিন জানান, জাহাজের অবকাঠামো আমরা পরিবর্তন করে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চালু করেছি। তিনি বলেন, এটি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে আনা জাহাজ আমরা তা মেরামত করে এখনও চালু রেখেছি। বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার জানান, যে কারণে কোন জাহাজ সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করার যোগ্য নয়, একই কারণে ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ (আটলান্টিক) জাহাজটিরও কোস্টাল ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের যোগ্য নয়। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আসলে উপজেলা প্রশাসনের হাতে তেমন কিছু থাকে না জেলা প্রশাসন থেকে কাগজ রেডি করে এখানে পাঠালে আমরা তাদের নৌপথে চলাচল করতে দিতে পারি। যদি এলসিটি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) বর্তমানে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলা করছে তাদের কোন বৈধ কাগজ না থাকে তবে আমরা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জাহাজের মালিক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, জাহাজটি স্ক্রাপ হিসেবে কেনা হয়নি। অলাভজনক হিসেবে কেনা হয়েছে। এ কারণে তারা এখনও জাহাজটি সচল রেখেছেন। এটি টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী পরিবহন করার জন্য আমি ব্যবহার করছি বর্তমানে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) (উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, ফিটনেসের ব্যাপারটা বিআইডব্লিউটিএ দেখে। যদি ফিটনেস ও বৈধ কাগজ দেখাতে না পারেন তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
×