ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিপক্ষ আফ্রিকার বুরুন্ডি

ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

 ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ বনাম ‘দ্য সোয়ালোস’। ১৮৭ বনাম ১৫১ ফিফা র‌্যাঙ্কিধারী। এশিয়া বনাম আফ্রিকা। তারপরও যদি বুঝতে না পারেন তাহলে পড়ুন বাংলাদেশ বনাম বুরুন্ডির লড়াই। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় দেশ দুটি মুখোমুখি হবে আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। ১৯৭৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল (বিপক্ষ থাইল্যান্ড, স্কোর ২-২)। সেই থেকে এ পর্যন্ত লাল-সবুজরা ৪৬ দেশের বিরুদ্ধে মোট ২৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে (জিতেছে ৬০ ম্যাচে, ড্র করেছে ৫১ ম্যাচে এবং হেরেছে ১৩৪ ম্যাচে)। এই ম্যাচগুলোর মাত্র ২টি ম্যাচ তারা খেলেছে আফ্রিকান দেশের বিরুদ্ধে। ১টি আলজিরিয়া এবং ১টি সুদানের বিরুদ্ধে। আজ আফ্রিকান দেশ বরুন্ডির বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে এই আসরে বাংলাদেশ তিনবার সেমিফাইনালে খেলেছিল (২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে)। আজকেরটাসহ চতুর্থবার। একমাত্র ২০১৫ আসরেই তারা পেরোতে পেরেছিল শেষ চারের গন্ডি। সেবার তারা সেমিতে ১-০ গোলে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কেটেছিল। যদিও ফাইনালে মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২২ জাতীয় দলের কাছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা জিততে পারেনি। এবার চার বছর পর আবারও ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে জেমি ডে’র শিষ্যদের। কিন্তু ফাইনালে ওঠার কাজটি বড্ড কঠিনই তাদের জন্য। কেননা প্রতিপক্ষ দেশটি তাদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে ৩৬ ধাপ। বুরুন্ডি জিতেছে ৩টি আন্তর্জাতিক ট্রফি। সিই কাফা কাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮০, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি ট্রফি। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে জেতে এসএ গেমস ফুটবল, ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ এবং ১৯৯৫ সালে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা। এবারের আসরে বাংলাদেশ এ-গ্রুপে ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে হারে এবং শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে ওঠে। পক্ষান্তরে বি-গ্রুপে বুরুন্ডি ৪-১ গোলে মরিশাসকে এবং ৩-১ গোলে সিশেলসকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ চারে নাম লেখায়। বুরুন্ডির ফরোয়ার্ড জসপিন শিমিরিমানা ৪টি গোল করেছেন যা এখন পর্যন্ত এই আসরের সর্বোচ্চ। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া ২টি গোল করে ৫ জনের সঙ্গে মিলিতভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। সেমির ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি ডে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে আমরা ভাল করেছি। সেই ম্যাচে তিনটি গোল করে কোন গোল হজম করিনি। জিতে সবাই এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী। গত দুই তিনদিন অনুশীলনও ভাল হয়েছে। তবে সেমির ম্যাচটি অনেক কঠিন হবে। তাদের (বুরুন্ডি) আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী। ফিজিক্যালিও তারা শক্তিশালী। তবে আমরাও তৈরি আছি।’ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে লালকার্ড পাওয়ার সেমির ম্যাচে খেলতে পারবেন না ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। এ নিয়ে জেমির ভাষ্য, ‘তপুকে হারানোটা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি। বুরুন্ডির মতো শক্তিশালী আক্রমণ ভাগের বিপক্ষে তপুকে প্রয়োজন ছিল। আমাদের আরেকজন ডিফেন্ডারও ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টে নেই (টুটুল)। দলে ইনজুরি থাকায় আমি মনে করি আমরা কঠিন পরিস্থতিতে আছি। একজন সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়া খেলতে নামাটা অনেক কঠিন। তারপরও করার কিছু নেই। বিকল্প তো অবশ্যই আছে। তপু না থাকায় যে কোন খেলোয়াড়ই আসতে পারে একাদশে। তাকে ™ি^তীয় হলুদ কার্ডটা যে কারণে দেখানো হয়েছে সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না। তবে তপুর বদলে কাকে খেলাবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। সেমির ম্যাচেই আপনারা দেখতে পারবেন। সুশান্ত, রাফি, রায়হান যে কাউকেই খেলাতে পারি।’ জেমি আরও যোগ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ। এই টুর্নামেন্টে জিততে পারলে সেটা আমাদের জন্য বড় অর্জন হবে। তবে আগে তো আমাদের সেমিফাইনাল জিততে হবে। ফাইনালে খেলার জন্য আমরা সর্বোচ্চটাই দেব। প্রতিটি দলই জিততে চায়, আমরাও চাই। এখানে ভালমানের দল আছে। গত ১৮ মাসে আমরা একটা দল হয়ে খেলেছি। আসলে এই টুর্নামেন্টটি আমাদের জন্য র‌্যাঙ্কিং বাড়ানোর সুযোগ। তবে এখন দল হয়ে যদি খেলতে পারি তাহলে শিরোপা জেতার ভাল একটা সুযোগ আমাদের সামনে।’ সেমির ম্যাচে খেলার কৌশল প্রসঙ্গে জেমি বলেন, ‘প্রথম ২০ মিনিটে গোল করতে পারব কি পারব না সেটা কোন ব্যাপার না। যদি ৯০ মিনিট খেলে গোল করি আর দল জিতে, তাহলে তো ভালই। গোল করতে হলে আপনাকে সুযোগ তৈরি করতে হবে। সেটা করতে পারলে অবশ্যই গোল আসবেই। তবে আমরা যদি আক্রমণাত্মক খেলতে যাই তাহলে দেখা যাবে কাউন্টার এ্যাটাকে বুরুন্ডি দ্রুত গোল পেয়ে যাবে। তাই সবার আগে ডিফেন্সে মনোযোগ দিতে হবে। এটা ঠিক, সব দলেরই টার্গেট থাকে শুরুতে গোল করার। সেটা করতে পারলে আমাদের আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে যাবে। ম্যাচের শেষদিকে কোনমতেই গোল খাওয়া যাবে না। শেষদিকে মনোযোগের ঘাটতির কারণে এটা হয়। সেমিফাইনালে এমন ভুল করা যাবে না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘শ্রীলঙ্কান ম্যাচের চেয়ে বুরুন্ডির বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচটি ভিন্ন। আশাকরি আমরা ম্যাচটি জিততে পারব। এসএ গেমসে আমরা খারাপ খেলেছি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জেতায় আশাকরি কালও জিততে পারব।’ জামাল আরও বলেন, ‘র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা (বুরুন্ডি) এগিয়ে আছে। কিন্তু ফুটবলে র‌্যাঙ্কিংই সব নয়। আমি চাই কাল দর্শক আসুক। দর্শক না আসলে আমাদের খারাপ লাগে।’ বুরুন্ডি কোচ জসলিন বিফুসা বলেন, ‘সেমিফাইনালের প্রস্তুতি খুবই ভাল। বাংলাদেশ ভাল দল। সেরাটা খেলতে পারলে অবশ্যই আমরা ফাইনালে যাব। এসব মানের টুর্নামেন্টে বুরুন্ডি অনেকবারই ফাইনালে খেলেছে। এটা আমাদের জন্য নতুন নয়। আশাকরি এবারও খেলতে পারব। আমরা অতীতে হোমটিমের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। এটাতে কোন চাপ অনুভব করছি না। স্বাগতিক দলকে হারিয়েই আমরা ফাইনালে যাব। স্বাগতিকদের কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা আমাদের জানা আছে।’ বিফুসা আরও বলেন, ‘আগের দুই ম্যাচে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ফর্মেশনে খেলেছি। মরিশাসের বিপক্ষে ৪-২-৩-১, সেশেলসের বিপক্ষে ৩-৫-২-১এ খেলেছি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভিন্ন ফর্মেশনে নামব। কারণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে তারা অনেক শক্তিশালী দল।
×