ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি২০ সিরিজ শুরু শুক্রবার

চার্টার্ড ফ্লাইটে লাহোর গেলেন রিয়াদরা

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  চার্টার্ড ফ্লাইটে লাহোর গেলেন রিয়াদরা

মিথুন আশরাফ ॥ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে পাকিস্তান সফর নিশ্চিত হয়েছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল পাকিস্তানেও গেছে বুধবার। রাতে পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের লাহোরে রাতে পৌঁছেও গেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। যেখানে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ হবে। শুক্রবার প্রথম টি২০ দিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি২০ সিরিজ শুরু হবে। বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে করে পাকিস্তান গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘মেঘদূত’ উড়োজাহাজে করে রাত ৮টায় দেশ ছাড়েন ক্রিকেটার, কোচরা। বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টায় লাহোর পৌঁছেও যান। পাকিস্তানে যাওয়ার প্রক্রিয়া একটু জটিলই। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও আকাশ পথে দোহা হয়ে ১২-১৩ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে পাকিস্তান পৌঁছাতে হয়। ক্রিকেটাররা যেন ক্লান্ত না হয়ে পড়েন, এ জন্য বিসিবি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে। যে ফ্লাইটে করে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যায় ক্রিকেটাররা। আজ একদিনের প্রস্তুতি শেষে শুক্রবার সিরিজ খেলতে নেমেও যাবে বাংলাদেশ দল। স্বল্প সময়ের জন্য পাকিস্তান গেছে বাংলাদেশ দল। তিন ধাপে পাকিস্তান যাবে। শুরুতে টি২০ সিরিজ খেলবে। ২৭ জানুয়ারি সিরিজ শেষ হয়ে যাবে। শুক্রবার প্রথম, শনিবার দ্বিতীয় এবং সোমবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচ লাহোরে অনুষ্ঠিত হবে। চারদিনের মধ্যে তিনটি ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। ম্যাচগুলো বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায় শুরু হবে। ৭ দিনের জন্য এবার সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ফেব্রুয়ারির ৭ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। সেই সময়ও ৬ দিনের মতো পাকিস্তান থাকবেন ক্রিকেটাররা। তৃতীয় ধাপে এপ্রিলের ৩ তারিখ একমাত্র ওয়ানডে ও ৫ থেকে ৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি করাচীতে খেলবে বাংলাদেশ। এই সময়ে একটু বেশি ৯-১০ দিনের মতো পাকিস্তান থাকা হবে। প্রায় সাড়ে ১১ বছর পর পাকিস্তান সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল। সেই টুর্নামেন্টের দল থেকে এবার পাকিস্তান যাওয়া দলে শুধু আছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল। বাকি ক্রিকেটারদের মধ্যে সৌম্য সরকার, নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মুস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন ও নতুন মুখ হাসান মাহমুদ প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তান যাচ্ছেন। তখন অবশ্য মাহমুদুল্লাহ ও তামিম ছাড়া বর্তমান টি২০ দলের ক্রিকেটারদের কেউই জাতীয় দলে ছিলেনও না। তাই যাওয়া হয়নি। পাকিস্তানের মাটিতে কখনই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০১ সাল থেকে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ খেলে কখনই জয় আসেনি। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চার টেস্ট খেলে হার হয়। ২০০৩ সালে মুলতানের টেস্টটিতে অবশ্য জয়ের আশা জেগেছিল। কিন্তু ইনজামাম উল হকের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে আর জেতা যায়নি। শেষ পর্যন্ত হার হয়েছে। এরপর আর পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলা হয়নি বাংলাদেশের। শুধু ওয়ানডে খেলা হয়েছে। মাঝখানে ২০০৮ সালে একটি টি২০ খেলা হয়েছে। ১১টি ওয়ানডে খেলে সবকটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। আর একটি টি২০ খেলেও হারই হয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার হিসেব করলে ২০০৮ সালের এপ্রিলে একমাত্র টি২০ ম্যাচের সিরিজটি বাংলাদেশ সর্বশেষ খেলেছে। এবার যখন আবার সিরিজ খেলতে নামবে তখন টি২০ সিরিজ দিয়েই তা শুরু হচ্ছে। পাকিস্তানের মাটিতে সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে ৩ ম্যাচের টেস্ট ও ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। এরপর পাঁচ বছর পর ২০০৮ সালে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে ও এক ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে। সেই হিসেবে চারবার পাকিস্তান সফরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। একবার ২০০১ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের একটি টেস্ট ও ২০০৮ সালে এশিয়া কাপের একটি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। এবার তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এবারের সফরটি অনেক আলোচিত সফরও হতে যাচ্ছে। কারণ ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা টিম বাসের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর গত বছর পাকিস্তানে গিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলে। এবার যাচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা নিয়ে আছে অনেক সংশয়। কিন্তু সেই সংশয় দূর হয়ে এখন মাঠের খেলা শুরু হবে। শুক্রবার সিরিজ শুরু হবে। এ সিরিজের দিকে ক্রিকেট বিশ্বের বিশেষ নজর থাকবে। পাকিস্তানে যে আবার খেলা পুরোদমে হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ভালভাবে সিরিজ হয় কিনা, কোন ঝামেলা ছাড়াই সিরিজ হয় কিনা; সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এর আগে সবমিলিয়ে ১০টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। ৯টিতেই হারে। একটি ম্যাচ ড্র হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানে হয় চারটি টেস্ট। দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ হয় ৩৭টি। বাংলাদেশ ৫টি ম্যাচ জিতে। হারে ৩২টি ম্যাচে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশও করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ ম্যাচ খেলা হয় ১০টি। দুটি টি২০তে জয় মিলে। ৮টিতেই হার হয়। তবে সর্বশেষ তিন ম্যাচের দুটিতেই জিতে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে সাড়ে ১১ বছর পর গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা। শুক্রবার প্রথম টি২০ দিয়ে সিরিজও শুরু হবে। এই সিরিজে এখন নিরাপত্তা শঙ্কাকে পেছনে ফেলে, ভয়ভীতি জয় করে, শান্তিতে খেলে, খেলায় মনোযোগ দিয়ে জয় তুলে নেয়া গেলেই হলো।
×