ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ

টি২০’র পাকিস্তান কতটা শক্তিশালী!

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

টি২০’র পাকিস্তান কতটা শক্তিশালী!

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ অনেক নাটকীয়তার পর পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার রাতে লাহোরে পৌঁছে গেছে টাইগাররা। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুক্রবার প্রথম টি২০ দিয়ে শুরু মাঠের দ্বৈরথ। একই ভেন্যুতে পরের দুই ম্যাচ শনি ও সোমবার। গত কিছুদিন এ সফর ঘিরে আলোচনায় কেবলই নিরাপত্তা ইস্যু। বাইশ গজে দু’দলের অবস্থান, শক্তিমত্তা, কি ঘটতে যাচ্ছে সেটি নিয়ে ছিল না তেমন কোন আলোচনা। নিরাপত্তা, ভয়-সংশয়ের মাঝে মাঠের ক্রিকেটেও কিন্তু মাহমুদুল্লাহ-তামিম ইকবালদের জন্য স্বস্তির খবর নেই। কারণ ছোট্ট ফরমেটের পাকিস্তান সত্যিই ভয়ঙ্কর। দুর্বার। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত আর ওয়ানডেতে ছয় নম্বরে থাকা দলটা টি২০তে আছে এক নম্বরে। যেখানে বাংলাদেশ নয় নম্বরে, আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কারও পেছনে। পার্থক্যটা পরিষ্কার। অধিনায়ক বাবর আজম টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে শীর্ষ দশের চারে ইমাদ ওয়াসিম, সাতে শাদাব খান। যদিও মোহাম্মদ আমির আর ওয়াহাব রিয়াজের জায়াগা না পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তুখোড় দুই তারকা পেসারের অনুপস্থিতি বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে তাক লাগিয়ে দিলেও পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে আর টেস্টে পাকিস্তানের পারফর্মেন্স নিম্নমুখী। কিন্তু সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বে টি২০তে দলটি ঠিকই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখে। কিন্তু ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ঘরের মাটিতে দুর্বল শ্রীলঙ্কাকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করলেও টি২০তে হেরে বসে সমান ৩-০ ব্যবধানে। নেতৃত্ব তো বটেই দল থেকেই বাদ পড়েন সরফরাজ। অথচ পাকিস্তান যে টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেছে, সেখানে তার অবদান অস্বীকার্য। টেস্টে নতুন অধিনায়ক করা হয় আজহার আলিকে, টি২০তে বাবর আজম। নবেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিন ম্যাচের টি২০ ২-০ ব্যবধানে হারের পর প্রকারান্তরে নেতৃত্বের বাড়তি চাপের বিষয়টি স্বীকার করেন বাবর আজম। শোনা যাচ্ছিল অন্তত রঙিন পোশাকে হলেও সরফরাজকে ফেরানো হতে পারে। কিন্তু সেটি হয়নি। বাদ পড়েছেন অভিজ্ঞ দুই পেসার মোহাম্মদ আমির আর ওয়াহাব রিয়াজ। পারফর্মেন্স নয় মূলত হুট করে টেস্ট থেকে অবসর নেয়ায় তাদের ওপর চটেছেন প্রধান নির্বাচক ও প্রধান কোচ মিসাবাহ উল হক। এছাড়া ওপেনার ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, হারিস সোহেলও বিবেচনায় আসেননি। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা সিরিজের দলে ছিলেন আসিফ, ফখর, হারিস, আমির ও ওয়াহাব। অবশ্য এতে বাংলাদেশের খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দলে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ দুই অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজকে। ৩৯ বছর বয়সী হাফিজ গত ১৫ বছর আর ৩৭ বছর বয়সী মালিক গত ১৯ বছর ধরে খেলে চলেছেন। এবার বেশ কিছু আনকোরা তরুণের ওপর আস্থা রাখেছে পাকিস্তান। আহসান আলী, আম্মাদ বাট ও হারিস রউফ প্রথমবারের মতো দলে ঢুকেছেন। নতুনদের মধ্যে ২৬ বছর বয়সী আহসান অক্টোবরে ন্যাশনাল টি২০ কাপে ৫ ম্যাচে ১৩১ রান করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল প্রায় ১৫০। আর রউফ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশের দল মেলবোর্ন স্টারসের হয়ে খেলছেন এবং ১৬ উইকেট নিয়ে আছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। ২৬ বছর বয়সী বর্তমানে পাকিস্তান তো বটেই বিশ্বেরই অন্যতম গতিময় পেসার। নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরের গতিতে বল করতে সক্ষম। কখনও সেটা ১৫০-এ পৌঁছায়। আমির-ওয়াহাব না থাকলেও রউফ হয়ে উঠতে পারেন মাহমুদুল্লাহদের মাথাব্যথার কারণ। প্রধান নির্বাচক ও কোচ মিসবাহ-উল-হক বলেছেন, ‘আমরা টি২০তে শেষ নয় ম্যাচের আটটিতেই হেরেছি। র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম দল হিসেবে এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। আমাদের হারের বৃত্ত ভাঙ্গতে হবে এবং এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপের আগে জয়ের ধারায় ফিরতে হবে। আর এ কারণেই কিছু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ অভিজ্ঞ মালিক-হাফিজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিছু ভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করে দেখেছি। তবে ঠিক যেমনটা আমরা চেয়েছিলাম, সেভাবে কাজ করেনি। হাফিজ ও শোয়েব দু’জনে ২০০’র বেশি টি২০ খেলেছে। এছাড়া বেশ কিছু তরুণকেও সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমার ধারণা এটা খুব ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল হবে।’
×