ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে আক্রান্ত ৪৪০, মৃত ৯, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের ভাইরাস

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  যুক্তরাষ্ট্রে চীনের ভাইরাস

চীনের কর্মকর্তারা বুধবার নিশ্চিত করেছেন যে, ৪৪০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহান থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়। এই ভাইরাসে ৯ চীনার মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও মঙ্গলবার একজনের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তিনি এর আগে চীনে গিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এখনই ‘জনস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করা হবে কি না তা নিয়ে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বৈঠক করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। বিবিসি ও আলজাজিরা। করোনা ভাইরাসে প্রথম কোন রোগী সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করার খবর যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) নিশ্চিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের আগে থাইল্যান্ডে দুজন এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই উহান থেকে ফেরেন। তিনি ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষ। ১৫ জানুয়ারি তিনি উহান থেকে সিয়াটলে ফেরেন। সিডিসি এক বিবৃতিতে জানায়, ওই রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীর ভ্রমণ ইতিহাস এবং রোগের লক্ষণ দেখে স্বাস্থ্যবিষয়ক পেশাজীবীরা তাকে নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন। গবেষণাগারে পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে সোমবার ভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উত্তর কোরিয়া বিদেশী পর্যটকদের জন্য সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান ও জাপানে উহান থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, লস এ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে শিকাগো ও আটলান্টা বিমানবন্দরে এই পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার চীন প্রথম স্বীকার করে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এর আগে চীন দাবি করেছিল, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোন প্রমাণ পায়নি তারা। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান। তাদের হিসাবে চীন যা বলছে, তার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এর আগে রোগীর কাছ থেকে ভাইরাসটির নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সংক্রমণটি করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস সাধারণত মানুষকে ঠা-াজনিত রোগে ভোগায়। তবে করোনা ভাইরাসের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সিভিয়ার এ্যাকুয়েট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাস মৃত্যুর কারণও ঘটায়। ২০০২ সালে চীনে সার্স ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হয়েছিল, আক্রান্ত ৮ হাজার ৯৮ জনের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা যায়। নতুন ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মানবদেহের জন্য যে কোন করোনা ভাইরাসের তুলনায় এটি সার্সের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মেলে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে কারও কারও নিউমোনিয়া হয় এবং তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বেজিং ও সাংহাইসহ চীনের বড় শহরগুলোতে ৪৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই উহান শহরের। শহরটির ১ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন এই প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে গত বছর। রোগের প্রাদুর্ভাব সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বাজারে জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণীও বিক্রি হয়। নতুন ভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অরক্ষিত অবস্থায় প্রাণীদের সরাসরি সংস্পর্শে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে।
×