ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে উৎপাদন ৮ লাখ মেট্রিক টন

সবজি আবাদে দেশসেরা যশোর

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২২ জানুয়ারি ২০২০

 সবজি আবাদে দেশসেরা যশোর

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলন সর্বোচ্চ ও দেশের সবজির চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর। যৌথভাবে দ্বিতীয় রংপুর, জামালপুর ও তৃতীয় পাবনা জেলা। সম্প্রতি ঢাকায় শেষ হওয়া জাতীয় কৃষি মেলা শেষে এই স্বীকৃতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সারা বছর যশোর জেলায় সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষীরা বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেন। যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে যেতে থাকে। যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জেলায় সবজির আবাদ করা হয় ২৮ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবাদ করা হয় ২৭ হাজার ১৮২ হেক্টর। উৎপাদন হয় ৫ লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সবজির আবাদ হয়েছিল ২৯ হাজার ৭৪০ হেক্টর, সবজি উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ২ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবাদ করা হয় ৩০ হাজার ১৭৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবাদ করা হয়েছিল ৩২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। যা থেকে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন। যশোর জেলায় মোট ৩৩ ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেগুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৩৩ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন, পটোল ২৩ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন, বাঁধাকপি ৪৪ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন, ফুলকপি ৩১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন, ওলকপি ৩৪ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন, মুলা ৩৪ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন, টমেটো ৩৪ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন, শিম ১৫ দশমিক ৬৪ মেট্রিক টন। দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির বাজার যশোরের বারীনগর। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস হচ্ছে সবজির মৌসুম। এ সময় হাটে বিপুল পরিমাণ সবজি ওঠে। যা ট্রাকযোগে যায় ঢাকাসহ সারাদেশে। চলতি মৌসুমে চাষীরা সবজির দাম ভাল পেয়েছেন। এতে লাভেল মুখ দেখেছেন চাষীরা। সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের মফিজুর রহমান জানান, এবার মুলা, শিম ও টমেটো আবাদ করেছেন। প্রথমে দাম ভাল পেলেও বর্তমান সময়ে সেই দাম পাচ্ছেন না। মথুরাপুর গ্রামের ওহিদুল ইসলাম বলেন, এবার কুমড়ার আবাদ করে ভাল ফলন পাওয়া গেছে। যা বিক্রি হয়েছে লাভজনক দামে। রহমতপুর এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান চলমি মৌসুমে আমি ৫ বিঘা জমিতে বেগুন ও শিম চাষ করেছিলাম। ফলন ভাল হয়েছে। আমরা সারা বছর সবজির আবাদ করে থাকি। কয়েকদিন আগেও ৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছেন রসুলপুরের মুন্সি রহমত। এখন কোনভাবেই ১৫ টাকার বেশি দাম দিতে চাইছেন না পাইকাররা। তিনি জানান, বেগুনের জন্য সার আর কীটনাশকেই বেশি খরচ হয়ে যায়। গাছ থাকলেও ফলন এখন একটু কম। প্রথম দিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলন ভাল হয় তাদের। সে সময় দামও ভাল পেয়েছেন তারা। ঢাকার ব্যাপারী মোহাম্মদ হাসান জানান, এক মাস আগেও সবজির ব্যাপক চাহিদা ছিল। যশোর জেলা আগাম সবজির আবাদ করায় আমরা এখান থেকে ট্রাকযোগে ঢাকায় নিয়ে যায়। তবে বর্তমানে ঢাকায় সবজির চাহিদা কম। কারণ ঢাকা বা চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। তাছাড়া চর অঞ্চলের সবজি বাজারে উঠায় তারা এখন ঢাকায় পাঠাতে পারছেন না। অল্পকিছু সবজি কিনেছেন। এদিকে বারীনগর বাজারে মুলা ৬ টাকা কেজি, বেগুন ১৫ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, শিম ১৬ টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা পিস দরে বিক্রি হয়েছে। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় এবার শীতকালীন মৌসুমে সবজি চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে। বছরে দু’বার সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে যশোর সদরে ২ হাজার ৩১৫ হেক্টর, শার্শায় ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, ঝিকরগাছায় ২ হাজার ১০ হেক্টর, চৌগাছায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর, কেশবপুরে ১ হাজার ১০ হেক্টর, মনিরামপুরে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, অভয়নগরে ৫৫০ হেক্টর ও বাঘারপাড়ায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ বিষয়ে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক এমদাদ হোসেন বলেন, যশোরে সারা বছর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। জেলাটি গড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি সবজি উৎপাদন করে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৩-২৫ মেট্রিক টন করে সবজি উৎপাদন হয়। সম্প্রতি কৃষি বিভাগ সবজি উৎপাদনে যশোরকে প্রথম ঘোষণা করেছে। আমরা প্রথম হওয়ায় আনন্দবোধ করছি। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ দিচ্ছি সবজি চাষীদের। যারা আগাম সবজির আবাদ করেছেন তারা লাভবান হয়েছেন বেশ।
×