ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান সফরে টি২০ সিরিজে নতুন রেকর্ডের সামনে এ বাঁহাতি ওপেনার

তামিমের অভিজ্ঞতাই ভরসা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  তামিমের অভিজ্ঞতাই ভরসা বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তামিম ইকবাল। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে তেমন ভাল করতে পারেননি। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে মাশরাফি বিন মর্তুজার অনুপস্থিতিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পরে সাময়িক বিরতিতে গিয়েছিলেন। গত নবেম্বরে ভারত সফরে ফেরার কথা থাকলেও সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জন্য যেতে পারেননি। অবশেষে পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরছেন তামিম। অভিজ্ঞ এ ওপেনারের এবার সুযোগ আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটেও দেশের পক্ষে সর্বাধিক রান করার। তামিমের ওপরে আছেন সাকিব আল হাসান ১৫৬৭ রান করে। সেখানে তামিমের রান ১৫৫৬। পাক সফরের ৩ টি২০-তে মাত্র ১২ রান করতে পারলেই তিন ফরমেটে দেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে যাবেন তিনি। নিষেধাজ্ঞায় থাকার কারণে সাকিব না থাকাতে তাই সুবিধাই হয়েছে এ বাঁহাতি ওপেনারের। সাড়ে ৫ মাস পর তামিম ফেরায় তার অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা করছেন টি২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। এবার পাকিস্তান সফরের জন্য ঘোষিত টি২০ দলে আছেন কয়েকজন উদীয়মান তরুণ। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলতে নামার অপেক্ষায় আছেন তরুণ ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। ফিরেছেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। এছাড়াও মাত্র ১ টি২০ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান, তরুণ বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ, অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুব ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব যাচ্ছেন পাক সফরে টি২০ সিরিজ খেলতে। পেসার হাসান ও শান্ত ব্যতীত বাকি চারজনেরই সিরিজের সব ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা প্রবল। এই দলটিতে সবচেয়ে বড় ঘাটতি হবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীমের অনুপস্থিতি। পারিবারিক কারণে পাক সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এ নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এছাড়াও আইসিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার কারণে নেই অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব। পরীক্ষিত দুই অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও নেই ইনজুরির কারণে। এই অভাবগুলো এখন পূরণ করতে হবে তরুণদের দিয়ে। দীর্ঘ ১১ বছর পর পাকিস্তান সফরে যাওয়া দলটির জন্য প্রায় নতুন অভিজ্ঞতা হবে। অচেনা পরিবেশই বলা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য। এমন এক সিরিজে অভিজ্ঞতম ওপেনার তামিম ফিরেছেন দলে। তার সঙ্গে অভিজ্ঞতার দিক থেকে পাল্লা দেয়ার মতো আছেন শুধু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এ কারণে অধিনায়ক মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমি এবং তামিম- আমরা দুজনই ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে আমাদের দায়িত্ব বেশি থাকবে। টপঅর্ডারে তামিমের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি কাজে আসবে। ও খুব ভাল ছন্দে আছে, রান করেছে এই বিপিএলে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করব যে আমার দায়িত্ব যেন ভালভাবে পালন করতে পারি।’ তামিম আর মাহমুদুল্লাহকেই দায়িত্ব নিতে হবে এই সফরে। অভিজ্ঞতম এ দুই সদস্যের পারফর্মেন্সই সাহস জোগাবে দলের বাকিদের। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে তামিম দারুণ ছন্দে ফিরেছেন। তিনি ১২ ম্যাচে ৩৯.৬০ গড়ে ৩ ফিফটিতে ৩৯৬ রান করেছেন। সেই সাফল্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের টানা ব্যর্থতা থেকে এবার পাকিস্তান সফরে নিজেকে উজ্জ্বলভাবে মেলে ধরবেন তামিম এমনটাই প্রত্যাশা দলের। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমার যে ভূমিকা থাকবে, শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা- আমি ওই জিনিসটা করার চেষ্টা করব। আমার মনে হয় যে সবারই দায়িত্ব থাকবে। অনেকের হয়তো ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসতে পারে। তো এই জিনিসটা ওরা ইতোমধ্যেই মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে বা চিন্তা করছে। আশা করব তারা এটার সঙ্গে মানিয়ে নেবে।’ ব্যাটিং অর্ডারে একটা বড় পরিবর্তন ঘটবে তা জানা কথাই। এবার বিপিএলে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন নাইম শেখ, লিটন দাস, আফিফ ও শান্ত। তামিম ফেরাতে দলে মোট ওপেনারের সংখ্যা এখন ৫। আর সৌম্য সরকার বিপিএলে ওপেনিং না করলেও তিনি নিজেও ওপেনার। তামিম নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিং করবেন। তার সঙ্গী হবেন কে তা নিয়ে বেশ আগেই ভাবনা শুরু করেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। দায়িত্ব নেয়ার পর গত ৪ মাসে তামিমকে দলে পাননি তিনি। তাই এই বাঁহাতি ওপেনারের সঙ্গে এখনও তেমন বোঝাপড়া গড়ে ওঠেনি ডোমিঙ্গোর। এজন্য তামিমের সঙ্গে আলোচনাও করে নিয়েছেন তিনি। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরিকল্পনার কথাও শুনিয়েছেন, ‘সৌম্যর মতো একজন যে কি না ভারতে ৩ নম্বরে ব্যাট করেছে, তাকে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে হতে পারে। রিয়াদ সম্ভবত ৫ নম্বরে। আফিফকে তিন কিংবা চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। শান্ত দারুণ একটি মিশন শেষ করেছে। তাই প্রচুর বিকল্প দেখতে পাচ্ছি। ২ ওপেনার ছাড়া সব পজিশন পূর্ণ হয়েছে। লিটন ৪ নম্বরে, মিঠুন লোয়ার অর্ডারে, আফিফকে দিয়ে ওপেনও করানো যেতে পারে।’ অন্যদের অবস্থানের নড়চড় হলেও তামিমের পজিশন নিশ্চিতভাবেই ঠিক থাকছে। আর এই সফরে নতুন আরেকটি রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ২০৪ ওয়ানডেতে ৬৮৯২ রান এবং ৫৮ টেস্টে ৪৩২৭ রান করে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে তামিম। এ দুই ফরমেটে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই সর্বাধিক রান তার। তিন ফরমেট- ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ মিলিয়ে সর্বাধিক ১২ হাজার ৭৭৫ রান করলেও শুধুমাত্র টি২০ ফরমেটে তিনি আছেন দুই নম্বরে। সাকিব ৭৬ টি২০ খেলে সর্বাধিক ১৫৬৭ রান করে সবার ওপরে। ৭১ টি২০ খেলে ১৫৫৬ রান করে দ্বিতীয় অবস্থানে তামিম। এবার পাক সফরে টি২০ সিরিজে সাকিবকে টপকাতে মাত্র ১২ রান প্রয়োজন তার। সেক্ষেত্রে তিন ফরমেটেই তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে যাবেন। সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে যাওয়ার সুযোগটা এবার কাজে লাগাবেন তামিম তা অবধারিতভাবেই বলা যায়। আর যেহেতু দায়িত্বও বেশি থাকছে এবার, তাই তার ব্যাট থেকে ভাল ইনিংস বেরিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা দলের কোচ ও অধিনায়কের।
×