ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  একনেকে কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পকারখানার পাশে জলাধারসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে কারিগরি শিক্ষকদের প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এসব নির্দেশ দেন তিনি। সভায় কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দসহ অন্যরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রতিটি শিল্প-কারখানার পাশে জলাধার রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেক সময় অবকাঠামোতে আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। জলাধার থাকলে ভাল হয়। অনেক সময় দেখা যায় অবকাঠামো নির্মাণে মাটি কাটতেই হয়। সুতরাং সহজেই আমরা একটা জলাধার নির্মাণ করতে পারি। একইসঙ্গে শিল্প-কারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে বলেছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ও তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) অবশ্যই থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আবদ্ধ ঘর নির্মাণ না করে খোলামেলা ঘর নির্মাণ করতে হবে। ঘরের বারান্দা থাকতে হবে। যাতে ঘরের ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। একনেক সভায় বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। দেশে-বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যত চাকরি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মক্ষম যুবকদের দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা ও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে যে নতুন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপনের প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলো, তাতে তো শিক্ষক দিতে হবে। শিক্ষকের প্রকট অভাব আছে। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে মানের আমরা প্রশিক্ষণ দেব। সুতরাং ক্রাশ প্রোগ্রাম করে শিক্ষকদের ট্রেনিং দাও। প্রয়োজন হলে শিক্ষকদের বিদেশে পাঠাও। কয়েক শ’ হলেও আমার আপত্তি নেই। যাক, তাড়াতাড়ি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসুক।’ মন্ত্রী নিজের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, উনার (প্রধানমন্ত্রী) একটা আশঙ্কা রয়েছে। অনেক জায়গায় সরকারের স্থাপনা নির্মাণ করার পর দেখা যায়, লোক নেই, চেয়ার নেই, বেঞ্চ নেই, যন্ত্র নেই। এটা পরিহার করতেই হবে। এখানে (নতুন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রকল্পে) যেন এটা না হয়। ৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাচ্ছেন, এটা নির্মাণ হতে হতে যেন যন্ত্রপাতি, চেয়ার-টেবিল ও শিক্ষক প্রস্তুত থাকে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। এটি আমাদের অন্যতম শক্তি। আমরা বিশ্বাস করি ভালমানের জনশক্তি যদি বেশি বেশি পাঠাতে পারি তবে রেমিটেন্স আরও বাড়বে। তাই ৩২৯ উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জের বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা; এসআরডিআই’র ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা; জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এছাড়া কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা; বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা; লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক ও লক্ষ্মীপুর-চরআলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।
×