ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জের মুখে শীর্ষ আদালত

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২২ জানুয়ারি ২০২০

চ্যালেঞ্জের মুখে শীর্ষ আদালত

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের বহুল বিতর্কিত নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ‘সিএএ’ নিয়ে দেশটির সুপ্রীম কোর্ট এখন এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। কেরল দেশটির প্রথম রাজ্য হিসেবে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটির শীর্ষ আদালতের দারস্থ হয়েছে। কমিউনিস্ট শাসিত কেরল রাজ্য সরকার ছাড়াও সিএএ’র বিরুদ্ধে আরও ৬০টি পিটিশন দায়ের হয়েছে। ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি মামলাগুলো দায়ের করেন। বুধবার থেকে এসব মামলার শুনানি শুরুর কথা রয়েছে। শীর্ষ আদালত দীর্ঘদিন থেকে অনেক মামলার রায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে দিয়ে আসছে। গত ৫০ বছরের অনেক রায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রায়গুলো বিজেপি অথবা হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষে গেছে। ভারতজুড়ে সিএএ বিরোধী গণআন্দোলন চলার মধ্যে কেরল সরকার আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে ১৪ জানুয়ারি সুপ্রীম কোর্টে যায়। সিএএকে দেখা হচ্ছে বসবাসরত মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার একটি কৌশল হিসেবে। আইনটি হওয়ার পর বিক্ষোভে অন্তত ২৩ নিরপরাধ প্রাণ হারিয়েছে। বহু আহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই মামলা প্রসঙ্গে এক ফেসবুক বার্তায় লিখেন, সিএএ ভারতীয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। কারণ সংবিধানে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সকলের স্বাধীন সত্তা চর্চার অনুমোদন দেয়া আছে। তিনি আরও লিখেন, নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রতি কুঠারাঘাতের শামিল। কেরলের ওই মামলায় সুপ্রীম কোর্টের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সিএএ’তে কেন মুসলিমদের মধ্যে সংখ্যালঘু আহমাদিয়া ও শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি কেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষও প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকতে পারে। প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী অধ্যাপক মনোজ মাতে বলেন, কেরল সরকার সংবিধান ও আইনী দৃষ্টিকোন থেকেই শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে কেরল সরকার ধর্মীয় বহুত্ববাদ নীতির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। কারণ রাজ্যটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাম, প্রগতিশীল ও কমিউনিস্ট রাজনীতি চলছে। সেখানে এর আগে সিএএ চালু না করতে বিধান সভায় একটি আইন পাস করে। মনোজ মাতে আরও বলেন, কেরল সরকারের এই মামলার পক্ষে জোড়ালো আইনী যুক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বুঝিনি শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয় কিভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ হতে পারে। অন্যান্য ধর্মের লোকেরা এই পরিচয়ে নাগরিকত্ব পেলে মুসলিমরা বাদ যাবে কেন। তিনি বলেন, এখন দেখার বিষয় শীর্ষ আদালত বিষয়টির সুরাহার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে। বিষয়টি সমাধানের জন্য শীর্ষ আদালত কঠিন অবস্থার মুখে পড়তে পারে। কারণ পূর্বের অনেক মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মামলাগুলোর রায় শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে গেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বাবরি মসজিদ মামলার রায় ও কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বিলোপের বিষয়টি সামনে আনেন। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এসব রায়ে হিন্দুত্ববাদী মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। গতবছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল জয় পেয়ে দ্বিতীয় দফা সরকার গঠন করে। তবে এরপর দলটি কয়েকটি রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হারায়। ডিসেম্বরে সিএএ পাসের পর ভারতজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ধাঁচের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভারতের কয়েক দশকের ইতিহাস ঘেঁটে এই ধরনের বিক্ষোভের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ইতিহাস বিশ্লেষক রোহিত দে বলেন, শুধুমাত্র রাজ্যগুলোর সমর্থনের ফলেই সিএএ বিরোধী আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারছে।-টাইম অবলম্বনে
×