ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি-জামায়াত নানা ষড়যন্ত্র করছে ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণ আলোচনা

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২১ জানুয়ারি ২০২০

 বিএনপি-জামায়াত নানা ষড়যন্ত্র করছে ॥  রাষ্ট্রপতির ভাষণ আলোচনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, এক সময়ের শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধানকে (খালেদা জিয়া) বলা হতো আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এখন সেই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিশ্বের অন্যতম সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান শক্তি। দেশের এই অগ্রযাত্রা বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। এরা দেশকে আবারও পেছনে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এ দাবি জানান। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান, সরকারী দলের আবদুল আজিজ, শহিদুল ইসলাম বকুল, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ’৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। বৈরী অবস্থায় দেশে ফিরে পিতার (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্ন পূরণের কাজে তিনি হাত দেন। ২১ বছর সংগ্রাম করে ’৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, আর আমাদের কারাগারে বন্দী করে নির্যাতন করে। আমাদের হাতে হাতকড়া, আর তখন যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার পর অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ হবে দরিদ্রতার মডেল। কিন্তু আজ বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করছেন। শহীদ আসাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমরা কারাগার থেকে মুক্তি করেছিলাম। কিন্তু দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও আমরা যথাযথভাবে পালন করি না। পৃথিবীতে অনেক নেতা আসবেন, যাবেন, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো বিচক্ষণ নেতা বিরল। কারাগার থেকে মুক্ত করে এনে পল্টনের ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ থেকে আমরা জাতির পিতাকে কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম। পাকিস্তানের হানাদাররা বঙ্গবন্ধুর কারাগারের সামনে কবর খুঁড়ে রেখেছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মৃত্যুর ভয় করি না, বাঙালী জাতি হাসতে হাসতে জীবন দেবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। স্বাধীনতার পর ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে ফেরত আসায় স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে আজ উন্নয়নের রোলমডেল। এক সময়ের শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধানকে (খালেদা জিয়া) বলা হতো আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এখন সেই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিশ্বের অন্যতম সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছে, এজন্য আমরা গর্বিত। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর শপথ ভঙ্গ করে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরাও তা স্বীকার করেছে। এই জিয়াই কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিলকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাৈন্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে। ৩৪ বছর জাতিকে অপেক্ষা করতে হয়। কারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু, জঙ্গীবাদ এবং অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তা দেশবাসী জানে। তাই তাদের কোন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বাংলাদেশের মাটিতে বাস্তবায়িত হবে না। নিজ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৯২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের দুদকের মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছি। অসাধু ঠিকাদারদের কালোতালিকাভুক্ত করে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছি। বিপুলসংখ্যক দখলকৃত জমি উদ্ধার করেছি। হয়রানি বন্ধ করতে এখন মানুষ ঘরে বসে বাড়ি নির্মাণের নক্সা অনুমোদন নিতে পারছে। যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফাইল একদিনের বেশি ফাইল থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রণালয়ের কাজ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মানসম্মত উন্নয়ন ও দুর্নীতি নির্মূলকেই প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি। জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে যাদের নিরাপত্তা প্রদানের কথা ছিল, তারা করেননি। মুজিববর্ষে এই ব্যর্থতার কথাও বলতে হবে। ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের এলাকায় সমভিত্তিকহারে উন্নয়ন বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বিমান এক সময় ধ্বংসের পথে ছিল। আজ বিমান ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাঁচটি অত্যাধুনিক বিমান ক্রয়ে করে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং সুন্দরবনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিদেশীদের জন্য সেইফজোনসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলে হাওয়া ভবন ছিল দুর্নীতির আখড়া। খালেদা জিয়াসহ তাঁর দুই পুত্র হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা। এসব কারণে দেশের জনগণ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারী দলের শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান শক্তি। দেশের এই অগ্রযাত্রা বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। এরা দেশকে আবারও পেছনে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। জঙ্গীবাদ এই অপশক্তিকে নির্মূল করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করে না, তাদের কঠোর আইন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
×