ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চালকলের দখলে নিষ্কাশন খাল ॥ ফসলের ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২১ জানুয়ারি ২০২০

 চালকলের দখলে নিষ্কাশন খাল ॥ ফসলের ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১৮ জানুয়ারি ॥ নওগাঁ সদর উপজেলায় নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের খাট্টাসাহাপুরে কালভার্টের মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় অটো রাইস মিলের দূষিত পানি মাঠের অন্তত ২০০ বিঘা জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ওই দূষিত পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় পানি আটকাপড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ করছে পাল্লা দিয়ে। জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে খাট্টাসাহাপুরে ‘বেলকন চাউল কল’ তৈরি করা হয়। কিন্তু তারও অনেক আগে পাকিস্তান আমলে তৈরি করা হয় কালভার্টটি। কালভার্টের মুখ ঘেঁষে চালকলের স্থাপনা তৈরি করায় এলাকাবাসীর কোন কাজে আসে না। এতে রাস্তার উত্তর পাশের ধামকুড়ি, সাহাপুর ও বশিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পানি ওই কালভার্ট দিয়ে নামতে পারে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। চালকল থেকে দূষিত কালো পানি তার আশপাশে ফসলের জমিতে পড়ছে। আবার সরাসরি কালভার্ট দিয়ে রাস্তার দক্ষিণ পাশে দোগাছী গ্রামের মাঠের ব্যক্তিগত ফসলের জমিতে গিয়ে পড়ে। এতে শতাধিক কৃষকের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। চালকলের দূষিত পানিতে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের প্রায় দুই থেকে আড়াই শ’ বিঘা জমিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা বিষয়টি বার বার চালকল মালিককে বলার পরও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দোগাছী গ্রামের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মুসা বলেন, আগে তারা গাড়ি দিয়ে দূষিত পানি ফেলে দিত। কিন্তু সেটা কয়েক বছর থেকে আর দেখা যায় না। এখন চালকলের দূষিত পানি কালভার্টের ভেতর দিয়ে নালা দিয়ে সরাসরি ফসলের খেতের মধ্য দিয়ে চলে যায়। যেসব পানি যাচ্ছে তা ফসলের ওপর দিয়ে যায়। ফলে মাঠের ফসল পোকা ধরে নষ্ট হয়। নির্ধারিত কোন নালা নেই। শুধু চালকলের পানি এ কালভার্ট দিয়ে যায়। দোগাছী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ দুলাল হোসেন ও সাহাপুর গ্রামের মঞ্জুর রহমান বাবু বলেন, আগে কয়েকটি গ্রামের পানি এ কালভার্ট দিয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে কালভার্টটি প্রায় দখলে নিয়েছেন মিল কর্তৃপক্ষ। দূষিত পানি ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয় সিমেন্ট ব্যবসায়ী মেহেরুল হাসান সাবু বলেন, আমাদের জমিটা ওয়াক্ফ স্টেটের। যার কারণে বেলকন গ্রুপের মালিক একটু বেশি সুবিধা নিতে চান। চালকলের দূষিত ও গরম পানি তাদের হাউসে ফেলার পরে সেখান থেকে ওভারফ্লু হয়ে আমার জমিতে পড়ে। এ কারণে আমার ৪৬ শতাংশ জমির পুরোটাই ফসল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। এছাড়া একটু দূরে ২৫ শতাংশ জমির অর্ধেক পরিমাণ ফসল পাই। আমি অনেক বার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু তারা ক্ষমতাবান হওয়ায় কোন কর্ণপাত করেননি। আমাদের দাবি দূষিত পানি বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে বেলকন গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ বেলাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৮৪ সালে চালকলটি স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে শুধু আমার চালকলের পানি না, অন্যান্য চালকলের পানিও যায়। আমার জানা মতে, আমি কারও উপকার ছাড়া ক্ষতি করিনি। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাস্থল দেখার পর যদি কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় তবে সরকারী বিধিমোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, দূষিত পানি ফসলি জমিতে পড়লে ফসল নষ্ট হয়। তবে ওই চালকলের দূষিত পানি যে ফসলের মাঠে যায় বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
×