ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসন নীরব

দৌলতপুরে ২৬ ইটভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০২০

দৌলতপুরে ২৬ ইটভাঁটিতে  পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ১৯ জানুয়ারি ॥ দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ স্থায়ী বা অস্থায়ী চিমনির ইটভাঁটিতে অবাধে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরকারী ভাঁটি স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন না মেনে যত্রতত্রভাবে গড়ে ওঠা ওইসব ইটভাঁটিতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ বা কাঠের গুঁড়ি। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাঁটি মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন। আর এসব ইটভাঁটিগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে করে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ অপরদিকে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। দৌলতপুর উপজেলার হাসপাতাল রোডের সরকারী শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা ৪টি ইটভাঁটি, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মানিকদিয়াড় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনা ও ফসলের খেতে গড়ে তোলা হয়েছে ৮টি ইটভাঁটিসহ উপজেলার কল্যাণপুর, ডাংমড়কা, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া, স্বরুপপুর ও প্রাগপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ২৬টি ইটভাঁটিতে হাজার হাজার মণ গাছের গুঁড়ির স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব ইটভাঁটির চুল্লিগুলোতে ১২০ ফুট উঁচু স্থায়ী চিমনির পরিবর্তে কোন কোন ভাঁটিতে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। স্বরুপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর এলাকার ইটভাঁটিসহ সব ইটভাঁটিতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিবমোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই শত শত ট্রাক ভর্তি জ্বালানি কাঠ ওজন দেয়া হচ্ছে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাঁটিতে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সেইসব মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ইটভাঁটিতে এক রাউন্ড ইট পোড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পোড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাঁটিতে এক মৌসুমে (০১) এক লাখ মণ জ্বালানি হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পোড়ানো হলে ২৬টি ইটভাঁটিতে ২৬ লাখ মনেরও বেশি কাঠ পুড়ানো হয়। এছাড়াও ইটভাঁটিগুলো সরকারী নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো উর্বর ফসলি জমি, স্কুলের আঙ্গিনা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশপাশে ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাঁটির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। সেই সঙ্গে আবাদী জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। এদিকে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ এসব ইটভাঁটিতে প্রশাসনের অভিযান চললেও দৌলতপুরে এর উল্টো চিত্র। দৌলতপুরের ইটভাঁটি মালিকদের দম্ভোক্তি রয়েছে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিটি ইটভাঁটিতে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ জ্বালায় এমন কথা বিভিন্ন মহলে প্রচার রয়েছে। তবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেছেন, গত নবেম্বর মাসে অবৈধ এসব ইটভাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
×