ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ইশরাত নিশাতের চির বিদায়

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২১ জানুয়ারি ২০২০

  অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী  ইশরাত নিশাতের  চির বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ইশরাত নিশাত আর নেই (ইন্নালিল্লহি .....রাজিউন)। রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় গুলশানে বোনের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। প্রয়াত অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ারের মেয়ে ইশরাত নিশাত ঢাকার মঞ্চ নাট্যাঙ্গনে বিদ্রোহী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ‘দেশ নাটক’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চের প্রিয় মুখ ইশরাত নিশাতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রতিমন্ত্রী এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোকবার্তায় প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের থিয়েটার অঙ্গনে বিদ্রোহী কণ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন ইশরাত নিশাত। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার কণ্ঠ ছিল সবসময় সোচ্চার। অসংখ্য নাটক, আবৃত্তি প্রযোজনার মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করে সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি নিজেকে করে তুলেছেন অনন্য। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ইশরাত নিশাতের মরদেহ রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সামনে সোমবার দুপুরে রাখা হয়। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই কথা বলেন ভালবাসার মানুষগুলো। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, নাট্যজন আলী যাকের বলেন, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, নাট্যজন কামাল আহমেদ, নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেত্রী সারা যাকের, সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী, কামাল বায়েজিদ, বৃন্দাবন দাসসহ মঞ্চ ভালবাসা অসংখ্য মানুষ। দলগতভাবে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়সহ বেশকিছু সংগঠন। ইশরাত নিশাতকে নিয়ে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, নিশাত আমার কন্যার মতো নয়, সে আমার কন্যা। ওর মা-ও মারা গিয়েছিল এমন গভীর রাতে। ওকে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু এমন উচ্ছল প্রাণের মানুষকে কী আর আগলে রাখা যায়! আপনারা সকলে মঞ্চের মানুষ হারিয়েছেন, আমি ঘরের মানুষ এবং মঞ্চের মানুষ, দু’জনকেই হারিয়েছি। নিশাত মানুষকে ভালবাসতে জানতো। সে নাটক ও জীবনকে একীভূত করেছিল। নির্দেশক এবং অভিনেতা আলী যাকের বলেন, নিশাতকে আমি মেয়ের মতো স্নেহ করতাম। তার চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া কঠিন। তাকে হারিয়ে মঞ্চ অনেক কিছু হারালো। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এই শিল্পকলা থাকবে, শিল্পকলার আড্ডা থাকবে, শুধু এখন থেকে সেখানে নিশাত থাকবে না। সে কখনো শুধু একটি দলের হয়ে নয়, বরং সকল দলের হয়ে কাজ করেছে। সকলকে ভালবেসেছে। ইশরাত নিশাতের নাট্য দল দেশ নাটকের কামাল আহমেদ বলেন, নিবেদিত একজন নাট্যকর্মী ছিল নিশাত। নাটকের যুদ্ধকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, নাটকের জন্য অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিল নিশাত। এমন নিবেদিত প্রাণ আর ভালবাসার মানুষ আরেকজন পাওয়া কঠিন। পরিবারের পক্ষ থেকে নিশাতের ছোটবোন নারিতা বলেন, আমার বোনের কাছে আপনারা, থিয়েটারের মানুষগুলোই ছিল প্রথম পছন্দ। এই থিয়েটার থিয়েটার করেই জীবনটা দিয়ে গেল ও। আপনাদের কাছে কখনো যদি আমার বোন কোন অন্যায় বা ভুল করে থাকে, তাহলে তাকে আজ ক্ষমা করে দেবেন, এটাই প্রত্যাশা। সোমবার নাট্যশালার সামনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ইশরাত নিশাতের মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। সেখানে তার জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানা যায়, ইশরাত নিশাতকে নিবেদন করে আগামী ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
×