ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও জীবনধারা নিয়ে প্রদর্শনী ‘স্বর্ণালি যুগ’

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২১ জানুয়ারি ২০২০

বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও জীবনধারা নিয়ে প্রদর্শনী ‘স্বর্ণালি যুগ’

সাজু আহমেদ ॥ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার পোশাক ও জীবনধারা নিয়ে ‘স্বর্ণালি যুগ’ শিরোনামের বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের তরুণ মেধাবী ফ্যাশন ডিজাইনার বদরুন নাহার রক্সি। জাতির জনক যে শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সবক্ষেত্রেই ছিলেন আদর্শ অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তা তরুণ প্রজন্মকে জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্টাইল তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া এবং প্রতিটি ফ্যাশন ইউনিভার্সিটি ও ইন্সটিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর পোশাক নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি করতে এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রদর্শনী আয়োজনের আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তরুণ প্রজন্ম জাতির জনকের জীবনের অন্যদিকের পাশাপাশি তার পোশাক সম্পর্কেও জানবে এবং তাদের নিজের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটাবে। তবে এ প্রদর্শনী আয়োজনের সংশ্লিষ্টদের কাছে পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন উদ্যোক্তা ও শিল্পী বদরুন নাহার রক্সি। ডিজাইনার বদরুন নাহার রক্সি জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনধারাকে নিয়ে বিশেষ এ প্রদর্শনীটি ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্শনীর সঙ্গে থাকবে সেমিনার এবং বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও মুজিব কোট নিয়ে বিশেষ ফ্যাশন শো। এছাড়া তরুণ ডিজাইনারদের জন্য এ বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও ইন্সটিটিউটের ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ডিজাইন আহ্বান করা হয়েছে। যাতে তরুণ ডিজাইনাররা বঙ্গবন্ধুর লাইফ স্টাইল নিয়ে গবেষণার সুযোগ পান। সেখান থেকে বাছাই করা ডিজাইনারদের পুরস্কার প্রদান করা হবে বলে জানান রক্সি। রক্সি জানান প্রদর্শনীতে আরও থাকবে বঙ্গবন্ধুর পোশাক নিয়ে গান (থিম সং), বঙ্গবন্ধু সাধারণ পোশাকে কতটা অসাধারণ ছিলেন তা নিয়ে থাকবে একটি তথ্যচিত্র। এ প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা ডিজাইনার বদরুন নাহার রক্সি বলেন, প্রদর্শনী উদ্বোধনের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, আমি আশাকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই বিশেষ প্রদর্শনীটি বছরব্যাপী সকল বিভাগীয় শহরে করার ইচ্ছে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে আগামী মার্চ মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু করব। পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় শহরে এ আয়োজন করা হবে। শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী জাতির জনকের পোশাক ছড়িয়ে দিতে কাজ করবেন রক্সি, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। রক্সি জানান, ‘স্বর্ণালি যুগ’ শীর্ষক এই বিশেষ প্রদর্শনীতে থাকবে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত মুজিব কোট, পাজামা, পাঞ্জাবি, শর্টহাতা শার্ট, ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট, নাইট গাউন, শাল, ঘড়ি, টুপি, তাসবিহ, প্রিন্স কোট, সাফারি স্যুট, শেরওয়ানি, টাই, লুঙ্গি, গেঞ্জি, জুতা, স্যান্ডেল, চশমা ও পাইপসহ সকল কিছুর অনুলিপি। এছাড়াও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে থাকবে মুজিব কোটের ১০০টি ডিজাইন। আর এসব তৈরি হবে দেশীয় কাপড় যেমন সূতি, পাট, খাদি, সিল্ক, জামদানি, ডেনিম, নিট, উপজাতি কাপড়সহ দেশীয় সবধরনের কাপড়ের, তাছাড়াও ব্যবহার করছেন চামড়া, রিসাইকেল ফেব্রিক। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সোনালি আঁশ পাট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পোশাক তৈরি করে পাটের ব্যবহারের চাহিদা বাড়ানোর প্রচেষ্টা থাকবে। পাশাপাশি অন্য দেশীয় ঐতিহ্য যেমন তাঁত, জামদানি, খাদি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসগুলো তৈরি করে দেশীয় ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কারণ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আর বাঙালী সংস্কৃতি এক ও একাকার। তিনি সবসময় দেশীয় ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিতেন, দেশপ্রেম ফুটিয়ে তুলতেন পোশাকে, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাতির জনকের মুজিব কোট। উদাহরণ হিসেবে রক্সি বলেন, সাধারণত কোটে ৫ বোতাম ব্যবহার হলেও জাতির পিতা বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রতীক হিসেবে মুজিব কোটে ৬ বোতাম ব্যবহার করতেন। তাছাড়া থাকবে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি চশমা ও পাইপ, বাহারি ডিজাইনের টাই। আরও থাকবে বোতামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, দেশের মানচিত্র, বর্ণমালার ব্যবহার। ডিজাইনার রক্সি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যখন ইংল্যান্ডে যান সেখানকার টেইলার্স থেকেও মুজিব কোট তৈরি করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি আজও আছে। আমি যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকেও দুটো মুজিব কোট তৈরির অর্ডার দিয়েছি। ‘স্বর্ণালি যুগ’ প্রদর্শনী আয়োজনের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে রক্সি বলেন-২০১৩ সালে ফ্যাশন ডিজাইনে গ্র্যাজুয়েশন করার পর জাতির পিতার পোশাক নিয়ে কাজের চিন্তা করি। এরপর এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করেছি। বঙ্গবন্ধুকে জানার পর মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর যুগটাই ছিল ‘স্বর্ণালি যুগ’। তিনি আজীবন সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য অবিরাম কাজ করে গেছেন। তাই ২০১৬ সালের শেষের দিকে এসে জাতির পিতার পোশাক নিয়ে ‘স্বর্ণালি যুগ’ শিরোনামেই প্রদর্শনীর সিদ্ধান্ত নেই। এ প্রদর্শনীর অনুমতি চেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্মানিত সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করি। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আমাকে ‘স্বর্ণালি যুগ’ প্রদর্শনীর অনুমতি দিয়েছেন। রক্সি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার মুখে স্বাধীনতার গল্প তথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গল্প শুনে বড় হয়েছি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা, ত্যাগ, অবদান এসব শুনতাম সবসময়। বাড়ির দেয়ালে সবসময় বঙ্গবন্ধুর বড় বড় ছবি টানানো দেখতাম, আগস্ট মাস আসলে আব্বু আম্মাকে রোজা রাখতে দেখেছি সবসময়, আর এভাবেই সেই বাল্যকাল থেকেই জাতির পিতার প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়ে যায়। জাতির পিতার আদর্শে জীবন গঠনের শপথ নিয়েই বেড়ে উঠি। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়তে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেই জীবনের প্রথম কাজটাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করব। সবাই রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুকে জানলেও আমার কাছে তিনিই ফ্যাশন আইকন, তিনিই বাংলাদেশ। একজন তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জাতির জনকের আদর্শিক কন্যা হিসেবে তার প্রতি অগাধ ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে আমি জাতির পিতার পোশাক নিয়ে কাজ করছি, আর এটা আমি পৌঁছে দিতে চাই তরুণ প্রজন্মের প্রতিটি সদস্যের কাছে। তাদের কাছে এই বার্তা দিতে চাই যে বঙ্গবন্ধু সবদিকের মতো পোশাকেও ছিলেন দেশপ্রেমিক, উন্নত রুচি ও স্টাইলের অধিকারী। এটাই আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস যাতে তরুণরা স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্ন পূরণে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়। এ লক্ষ্যে আমি গত চার বছর যাবত আমি সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে, এই আয়োজন করতে যাচ্ছি। তবে এ জন্য ভাল বাজেটের প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন স্পন্সরের সাড়া পাইনি। তবে আমাকে এ কাজের অনুমতি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাননীয় সদস্য, শেখ পরিবারের পুত্রবধূ শাহানা ইয়াসমিন শম্পা, বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা কন্ট্রোলার অব এ্যাকাউন্টস্ সিদ্দিক হোসেন চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের অনেকেই সহযোগিতা করছেন। তাদের সবার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
×