ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা চেম্বারের সংবাদ সম্মেলন ;###;পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি ‘ইতিবাচক’

এক অঙ্কের সুদে ঋণ শুরু হলে বিনিয়োগ বাড়বে

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২১ জানুয়ারি ২০২০

এক অঙ্কের সুদে ঋণ শুরু  হলে বিনিয়োগ বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যবসায়ীদের এক অঙ্কের সুদে ঋণ দেয়া শুরু হলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ। সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২০ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ আট শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার। ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে আসলে এসএমই খাতেও বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার অস্বাভাবিক হারে যে ঋণ নিচ্ছে তা বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহের জন্যও কোন সমস্যা নয়। তার দাবি সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য। এ খাতের উন্নয়ন হলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। এতে বেসরকারী খাতে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ বিদেশে বেসরকারী খাতের ঋণ নেয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, অনেকে ঋণ নিয়ে কারখানা স্থাপন করেন। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার কারণে উৎপাদনে যেতে পারেন না। ফলে সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। খেলাপী বাড়ে। এছাড়া জাপান, ভারতসহ অনেক দেশে নন-পারফর্মিং লোন বেশি রয়েছে; এটি তেমন সমস্যা নয়। নয় শতাংশ ব্যাংক ঋণ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নয় শতাংশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাস্তবায়ন এর আগে কয়েকবার পিছিয়েছে। এটি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ মহল পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চাই এবার সঠিক সময়ে নয় শতাংশ ব্যাংক ঋণের বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে। সম্প্রতি ব্যাংকের নির্বাহীরা এসএমই খাত নয় শতাংশ ঋণের আওতার বাইরে রাখার দাবি করেন। এর বিরোধিতা করে শামস মাহমুদ বলেন, এসএমই ঋণ যেন নয় শতাংশ সুদহারের আওতার বাইরে না থাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি এতে সমস্যার সমাধান হবে।’ তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে ডিসিসিআই যে ক’টি খাতের ওপর অগ্রাধিকার দেবে তার মধ্যে পুঁজিবাজার রয়েছে। বছরটিতে বন্ড মার্কেটের পলিসি উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। এতে একদিকে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থের জোগান হবে, অন্যদিকে বন্ডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। পুঁজিবাজারের সমস্যার কারণও তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী উভয়ের মধ্যে ডে-ট্রেডিং মানসিকতা রয়েছে। বন্ড মার্কেটের অভাব রয়েছে। এর সঙ্গে ভাল কোম্পানিরও অভাব রয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক আমাদের রফতানি আয়ের প্রধান খাত হলেও, রফতানি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্য খাতসমূহে উন্নতি করতে হবে। একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় খাতসমূহের উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাতের মতো বন্ডেড ওয়ারহাউস সুবিধা, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, কর অবকাশ সুবিধা প্রদান ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি জানান, আমাদের রফতানির মোট ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে। এক্ষেত্রে তিনি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার সম্প্রসারণের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। এটুআই প্রকল্প পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, অটোমেশনের ফলে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য, পর্যটন এবং চামড়া খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০ শতাংশ হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ লক্ষ্যে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বাড়াতে ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতো সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য ১১ খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানায় ডিসিসিআই। এর মধ্যে রফতানি বহুমুখীকরণ, জনশক্তি উন্নয়ন, অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, পুঁজিবাজার পুনঃগঠন, জ্বালানি নিরাপত্তা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ইজ অব ডুইং বিজনেসে অগ্রগতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, অবকাঠামো ও এসএমই খাতে জোর দেয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ে উর্ধতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশির উদ্দিনসহ সংগঠনের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
×