ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বার্লিন সম্মেলনে সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ

লিবিয়ায় স্থায়ী অস্ত্রবিরতি

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২১ জানুয়ারি ২০২০

 লিবিয়ায় স্থায়ী অস্ত্রবিরতি

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে রবিবার লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে। ১১টি দেশের সরকার প্রধান এতে অংশ নেন। গৃহযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ অবসানের জন্য তারা জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটলে এখনও দেশটিতে শান্তি ফেরেনি। দু’জন শাসক দেশটি পূর্ব ও পশ্চিম দুই অংশ শাসন করছেন। বিবিসি ও আলজাজিরা। লিবিয়া ইস্যুতে জার্মানির বার্লিনে শান্তি সম্মেলনে ত্রিপোলির বিবদমান দু’পক্ষের উপস্থিতিতে বিশ্বনেতারা এ অঙ্গীকার করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব ও জার্মানির পাশাপাশি এতে অংশ নেন ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের রাষ্ট্রনায়করা। লিবিয়ার ক্ষমতাশালী জেনারেল খলিফা হাফতার ও জাতিসংঘ সমর্থিত গবর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল এ্যাকর্ড (জিএনএ)দুই পক্ষই সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করেননি। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল অবশ্য জানিয়েছেন, বিবদমান দুই পক্ষ পরস্পর আলোচনায় বসেনি বলে উপস্থিত অন্য পক্ষগুলো সম্মেলনের বিষয়ে তাদেরকে ব্রিফ করেছে এবং তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছে। তিনি বলেন, কোন সামরিক হস্তক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক উপায়ে তিনি সঙ্কটের সমাধান চান। সম্মেলন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, লিবিয়া সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বনেতারা ‘পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। গৃহযুদ্ধ অবসানে বিদেশী হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা। লিবিয়ার জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ আল-সররাজ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি কমান্ডার (এলএনএ) খলিফা হাফতার বাহিনী যুদ্ধ অবসানে তুরস্ক, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। লিবিয়ার সংঘাতে জড়িত দু’পক্ষের মধ্যে এর আগে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ফের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য এ সম্মেলন করা হয়। উভয়পক্ষ এ মাসের শুরুতে রাশিয়া এবং তুরস্কের উদ্যোগে ওই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু জিএনএর পক্ষে সররাজ চুক্তিতে সই করলেও হাফতার চুক্তি সইয়ের আগেই নাটকীয়ভাবে মস্কো ত্যাগ করেন। ফলে চূড়ান্ত চুক্তি সই হয়নি। বার্লিন সম্মেলনটি লিবিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর সর্ব সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা। এ সম্মেলনে বিদেশী শক্তিগুলোর কাছ থেকে জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা এবং লিবিয়া সঙ্কটে আর হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত নয় মাস ধরে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার ও হাফতার বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এই প্রেক্ষাপটে বার্লিন সম্মেলন থেকে কোন সমাধান বেরিয়ে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এ বৈঠক থেকে সঙ্কটের সমাধান বেরিয়ে না আসলেও এর মাধ্যমে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে জার্মান সরকার। লিবিয়ার সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা হিসেবে ২০১৮ সালের পর এটাই প্রথম কোন বৈঠক। মেরকেল ও গুতেরেসের যৌথ সভাপতিত্বে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আসসিসি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আরব লীগের নেতারা। বৈঠক শুরুর আগে এরদোগান বলেন, লিবিয়ার লৌহমানব হাফতারকে অবশ্যই তার সংঘাতপূর্ণ মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। এর আগে ১২ জানুয়ারি তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় লিবিয়ায় স্বীকৃত সরকার এবং বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী। পরে রাশিয়ায় উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসলে কোন চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই মস্কো ছাড়েন জেনারেল হাফতার।
×