ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ৫ চা শ্রমিক খুন

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ৫ চা শ্রমিক খুন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার ॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাল্লাতল চা বাগানে স্ত্রী,শাশুড়ি ও দুই প্রতিবেশীকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নির্মল কর্মকার (৩৮) নামের এক চা শ্রমিক। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার খবর শোনে ঘটনাস্থলে আসেন বিজিপি,পুলিশ,র‌্যাব, পিবিআই পুলিশ ও সিআডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা। সীমান্তবর্তী পাহাড়ী নির্জন এলাকায় এই প্রথম নির্মম লোমহর্ষক এই ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শোকে মোহমান পাল্লারতল চা বাগানের শ্রমিক,কর্মচারী ও এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে পাল্লারতল বাজার ঠিলা লাইনের ওই বাড়িতে আসছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান পাল্লারতল বাজার লগুয়া নির্জন ওই বাড়িতে বসবাস ছিল বিষ্ণু বুর্নাজী ও বসন্ত ভক্তার পরিবারের। ওই বাড়িতে কাছাকাছি আলাদা দুটি ঘরে বসবাস ছিল ওই দুই পরিবারের। বিষ্ণু বুর্নাজীর পরিবারের সদস্য ৪ জন আর বসন্ত ভক্তার পরিবারের সদস্য ৩ জন। বিষ্ণু বুর্নাজী দীর্ঘদিন থেকে নিজ বাড়িতে না থেকে তার আরেক মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বিষ্ণু বুর্নাজীর দুই মেয়ের মধ্যে জলি বুর্নাজী তার স্বামী নির্মল কর্মকার,মা লক্ষী বুর্নাজী ও চন্দ্রনা কে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। নির্মল ও জলি দুজনরেই এটি ছিল ২য় বিয়ে। প্রায় বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের নিজেদের কোন সন্তান ছিলনা। চন্দ্রনা ছিল জলির আগের স্বামীর সন্তান। এলাকাবাসী জানায় নির্মল গেল ৭-৮ মাস থেকে শশুর বাড়িতে বসবাস করছে। সে সবসমই চুপচাপ থাকত। এলাকার লোকদের সাথে কতাবার্তা বলত কম। নির্মল অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্থ ও মাদকাসক্ত ছিল। প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রবিবার ভোরের দিকে তারা ওই বাড়ি থেকে হাল্লা চিৎকার শোনে এসে এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পান। বসন্তের ঘরে নির্মলের ঝোলানো লাশ ও তার স্ত্রী জলির রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পাশের ঘরে বসন্ত,তার মেয়ে শিউলি ও নির্মলের শ্বাশুড়ী লক্ষীর লাশ পড়ে থাকে। আর মুমূর্ষু আহত অবস্থায় ছিলেন বসন্তের স্ত্রী কানন। আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া জলির মেয়ে চন্দ্রনা (১০)। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান নির্মল ঝগড়া ঝাটির একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর ঠেকাতে আসলে প্রথমে শাশুড়িকে এবং পরে দুই প্রতিবেশীকে কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে খুনি নিজের ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল নামে ওই যুবক চারজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নির্মল ছাড়া ৩জনই চা বাগানের শ্রমিক ও একজন শিক্ষার্থী। গতকাল রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার) বলেন খবর শোনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এঘটনা ঘটেছে। তবে আরো অধিকতর তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলার প্রস্তুতি চলছে। হত্যার শিকার চারজন ও হত্যাকারী হলেন নির্মল কর্মকার (৩৮),তার স্ত্রী জলি বুর্নাজী (৩৪),তার শ্বাশুরী লক্ষী বুনার্জী (৪৮)পাশের ঘরের বসন্ত ভক্তা (৫২),বসন্তের মেয়ে শিউলি ভক্তা (১১) ও বসন্তের স্ত্রী সিলেট এমজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কানন ভক্তা (৪৬)। চা বাগানের কর্মকর্তা আতাউর রহমান নোমান ও আশিস রঞ্জন কর জানান, নির্মলের বাড়ি এই এলাকায় নয়। সে এ বাগানেরও শ্রমিক নয়। বছর খানিক আগে বিয়ের সুবাধে সে ওখানে থাকত। স্থানীয়রা জানান ভোর ৫টার দিকে নির্মল ও জলির মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে জলিকে মারধর করতে থাকলে জলি দৌড়ে অন্য ঘরে চলে আসে। তখন নির্মল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জলিকে কোপাতে থাকে। মেয়েকে রক্ষা করতে শাশুড়ি ছুটে আসলে তাঁকেও কোপায় নির্মল। এরপর বসন্ত ও শিউলি সেখানে আসলে দুজনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নির্মল। পরে চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত হলে নির্মল নিজের ঘরে গিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখেছে সিআইডি পুলিশ। সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিলেট জুন) অপূর্ব সাহা জানান আমরা আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছি যাতে পরবর্তী তদন্ত কাজে আসে। পিবিআই পুলিশের মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে পারিবারিক কলহের বিষয়টি ধারণা হচ্ছে। তবে ঘটনার সাথে অন্য কিছু আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জেলাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
×