ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইটভাঁটি মালিকের থাবায় আবাদি জমি হচ্ছে অনাবাদি

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২০ জানুয়ারি ২০২০

 ইটভাঁটি মালিকের থাবায় আবাদি জমি হচ্ছে অনাবাদি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৯ জানুয়ারি ॥ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাঁটির আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলের ক্ষেত ও পরিবেশ। সেইসঙ্গে ভূমিদস্যু ও দালালদের প্রলোভনে শত শত আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদী। এ ধ্বংস ঠেকানোর যেন নেই কেউ। সদর উপজেলার সালন্দর, ফারাবাড়ি, আকচা, জগন্নাথপুর, নারগুন ইউনিয়ন ও পীরগঞ্জের ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজা ও তার আশপাশ এলাকার আবাদি জমিগুলোর মাটি কেটে ভাঁটিগুলোতে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখিত এলাকার সহস্রাধিক একর আবাদি জমির মাটি কেটে বড় বড় পরিখা, পুকুর ও খাল করায় ওইসব জমিতে ২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। ভাঁটি মালিকরা তাদের এক শ্রেণীর দালাল চক্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আবাদি জমির মালিকদের মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তাদের আবাদি জমিগুলোর ওপর অংশের মাটি খুঁড়ে ইটভাঁটিতে সরবরাহ করছে। যে সব জমিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছেন তার সংলগ্ন জমিগুলোও অনাবাদি হয়ে পড়ছে। কারণ খাল সংলগ্ন জমির উঁচু অংশে আর পানি জমে থাকছেনা। ফলে ওইসব জমিতে এখন বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গম ক্ষেতগুলোতে সেচের পানি জমছেনা। সেচের পানি চুইয়ে খাল, গর্ত ও পরিখাগুলোতে চলে যাচ্ছে। ভাঁটি মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা প্রতি বিঘা জমির মাটি কাটার জন্য অভাবী কৃষককে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিশোধ করা হচ্ছে অর্ধেক টাকা। এমনি করে জমির মালিক হয়ে উঠছে ভূমিহীন আর চিরদিনের জন্য এই জমিগুলো পরিণত হচ্ছে অনাবাদি খালে। ইটভাঁটি মালিক শাহাজাহান আলী (এসবি) জানান, দালালরা তাদের ইটভাঁটির মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাঁটি মালিকরা কেউ সরাসরি জড়িত নয়। উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় পরিবেশ অধিদফতরের দফতর থাকলেও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন না করায় ইটভাঁটি মালিক ও দালালচক্র ভূমিদস্যুতায় মেতে উঠে। জেলার উল্লেখিত ইউনিয়ন ও মৌজাগুলোতে ধান, গম, সরিষা ফসল উৎপাদনে সেরা রেকর্ড ছিল। কিন্তু ইটভাঁটির আগ্রাসী তৎপরতায় এই মৌজা দু’টি এখন ফসলহীন মাঠে পরিণত হতে চলেছে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলমকে জানালে তিনি উপজেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিলেও রবিবার পর্যন্ত কোন ফল পাওয়া যায়নি বলে জানান। ইটভাঁটি মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা সদর উপজেলার আক্চা, দক্ষিণ বঠিনা, রাজাগাঁও, পাটিয়া ডাঙ্গি এলাকায় একই কায়দায় ও কৌশলে আবাদি জমির উপড়ের মাটি কেটে ভাঁটিতে জোগান দিয়ে জমিগুলোকে অনাবাদি করে ফেলছে। গত মৌসুমে ওইসব এলাকায় কমপক্ষে ২শ’ একর জমির বোরো খেত ধ্বংস হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জেলা প্রশাসক অফিসে দলবদ্ধভাবে ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
×