ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাঈন উদ্দিন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ॥ যা জানতে হবে

প্রকাশিত: ১২:১১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ॥ যা জানতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর অনেকেরই জানা নেই কিছু বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অনেক শিক্ষার্থীরই চিন্তা থাকেÑ প্রথম সেমিস্টারে ভাল ফল কিভাবে করা যায়? শিক্ষার্থীকে বুঝতে হবে : বিগত সময়ে পড়ে আসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় শিক্ষা ক্ষেত্র। বিষয়ের আঙ্গিকতার পাশে ব্যবহারগত দিকটাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের প্রত্যাশার রকমও অন্যরকম। শিক্ষাদান ও গ্রহণের প্রক্রিয়াও ভিন্ন। তাই অধিক প্রয়োজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ। নিয়মতান্ত্রিকতা ও কাজের সময়কে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারা কলেজ পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাল ফলের মূলমন্ত্র। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সফল হওয়া যাবে খুব সহজে। এটা ভাবলে ভুল হবে। স্কুল ও কলেজের তুলনায় এ পর্যায়ে ভাল ফল করাটা সহজও। আসুন জেনে নিই কিছু টিপসÑ ক্লাসে মনোযোগী হওয়া, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বোঝার সামর্থ্য অর্জন, ক্লাসে পড়ার আগে লেকচার দেখে নেয়া কিংবা পড়ানোর পর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া। ফলশ্রুতিতে বিষয়ের অস্পষ্টতা কেটে যাবে। আজকের ক্লাসে পড়াটা কালকের জন্য ফেলে না রাখা। নিয়মিত ক্লাস করা, ক্লাসে মনোযোগী থাকা আর পঠিত বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝতে পারার সদিচ্ছা থাকা। বাসায় এসে মূল বই পড়ে মিলিয়ে নিতে হবে ক্লাসে পড়ানোর বিষয়টির সঙ্গে। এ সুচর্চাটা শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখবে আর দশ শিক্ষার্থী থেকে। ভাল গ্রেড কিংবা ফলনির্ভর করে সার্বিক লেখাপড়ার ওপর। তাই শুরু থেকে ভাল ফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভাল যুক্তিবাদী সামর্থ্য থাকা চাই। ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অনেক ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় বিষয়ের পাশাপাশি পঠিত বিষয়ের ব্যবহারিক হিসেবে প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্ট থাকে। যেখানে তত্ত্বীয় জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটাতে হয়। প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে প্রথমেই ভাবতে হবে শুরু কিভাবে হবে। কতটা সময়ের প্রয়োজন হবে কিংবা যতœ নিয়ে কিভাবে তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয়ভাবে তা উপস্থাপনা করা যায়। প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্ট তৈরির পরে তা উপস্থাপন করতে হবে। উপস্থাপন কৌশল নিজেকেই ঠিক করতে হবে। কৌশলপত্রে তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে ভুল করা যাবে না। এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বৈ কমবে না। দলগত প্রজেক্ট কিংবা এ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষকদের সামনে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে দলের সবচেয়ে কুশলী ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুযোগ দিতে হবে সর্বাগ্রে। মানবিক বিভাগ মানবিকের বিষয়সমূহের বৈচিত্র্য ও পরিধি ব্যাপক। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তি ভাল থাকা দরকার। মানবিকের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের নেপথ্যে বোঝার ক্ষমতার বড় ভূমিকা পালন করে। নির্বাচিত বিষয়ে কি কি আছে এ ব্যাপারে ভালভাবে জানতে হবে শিক্ষার্থীকে। এক্ষেত্রে বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে পূর্ণ মাত্রায়। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে নিজেকেই; শিক্ষক শুধু জানতে চাইবেন কি বুঝলে বা জানলে। মানবিক সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে সাফল্য পেতে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য বেশি করে লেখার চর্চা নিজেকেই করতে হবে। এক্ষেত্রে ধৈর্য খুব প্রয়োজন। ব্যবসায় শিক্ষা বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষা চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। এ বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে দ্রুত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা যায়। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে মূল্যায়ন করা যায় সহজেই। ফাইন্যান্স, হিউম্যান রিসোর্স, মার্কেটিং অপারেশন কিংবা ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রভৃতি বিষয় ব্যবসায় শিক্ষায় ব্যাপকভাবে পড়ানো হয়। এগুলো ভাল করে বুঝতে হবে এবং তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে ইংরেজী বলা ও লেখায় দক্ষ হতে হবে। এ্যাসাইনমেন্ট লেখা ও উপস্থাপনা ব্যবসায় শিক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ। এ জন্য লেখার পাশাপাশি উপস্থাপনার কৌশলপত্র ঠিক করতে হবে। টার্ম পেপারের ব্যাপারেও শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে; যা অনেকটা গবেষণাধর্মী। এতে তথ্যের যথাযথ উপস্থাপনার পাশাপাশি তথ্যসমূহের সর্বশেষ উল্লেখ থাকতে হবে। অন্য ভুবন প্রতিযোগিতার এ যুগে শুধু পড়ালেখা একজন শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি প্রয়োজন সহশিক্ষার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একজন শিক্ষার্থীর সরব পদচারণার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের। সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে পূর্ণ মাত্রায়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ক্লাব; যেমন বিতর্ক, নাটক, সায়েন্স, ন্যাচার, কুইজ ক্লাব। এগুলোয় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে ওঠে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা। ভর্তির পর ১. সব সময় ক্লাস করতে হবে। ফাঁকি দেয়া চলবে না একদম। সর্বদা বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা ফাইলে নোটগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। ২. বিষয় নির্বাচনের আগে জেনে নিতে হবে বিষয় সম্পর্কে। ৩. হাতে সময় নিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপার ও প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। ৪. ক্লাস নোটের লেকচার শিটের সমৃদ্ধ করার জন্য মূল বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। ৫. বিষয় সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয় বুঝতে না পারলে কোর্স শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। ৬. আত্ম উন্নয়নের জন্য নিজেকে যুক্ত করতে হবে সহশিক্ষার কার্যক্রমের সঙ্গে।
×