ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘জীবনের চেয়ে ক্রিকেট বড় না’

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

‘জীবনের চেয়ে ক্রিকেট বড় না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে গত মঙ্গলবার ঠিক হয়েছে তিন ধাপে পাক সফর হবে। আপাতত ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলতে আগামী বুধবার পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করবে বাংলাদেশ দল। ফেব্রুয়ারিতে একটি টেস্ট এবং এপ্রিলে ১ ওয়ানডে ও ১ টেস্ট রয়েছে। এই সফরের জন্য বেশ আগেই গবর্নমেন্ট অর্ডারে (জিও) ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেখানে স্বাক্ষর করেননি মুশফিকুর রহিম। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন পারিবারিক অনুমোদন না পাওয়ার কারণে পাকিস্তান সফরে যাবেন না। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন অধিকাংশ কোচিং স্টাফও যাবেন না এই সফরে। শনিবার মুশফিক আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবির কাছে চিঠি দিয়ে পাকিস্তান সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আর সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ক্রিকেটের চেয়েও জীবন আগে। তাই তিন ধাপের এই পুরো সিরিজেই মুশফিক যাবেন না পাক সফরে। এছাড়া ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন, ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, স্পিন পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেট্টরি ও এ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরও যাচ্ছেন না পাকিস্তান সফরে। ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে থাকা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা হয়েছিল এবং তাতে আহত হন কয়েকজন ক্রিকেটারও। এরপর থেকে আর পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি হয়নি কোন দলই। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরতে শুরু করেছে দেশটিতে। যদিও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চোরাগোপ্তা হামলার খ- খ- ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। এ কারণেই এবার পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের যাওয়া নিয়ে বিসিবিকে অনুমোদন দিতে সময় নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার পর স্বল্প সময়ের জন্য যাওয়ার অনুমোদন দেয় সরকার। অবশেষে তিন ধাপে পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। ২২ জানুয়ারি টি২০ দল যাবে ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলতে। তবে এই সিরিজে তো বটেই পাকিস্তানে পরের দুই ধাপেও যাবেন না মুশফিক। এ বিষয়টি বিসিবিও ক্রিকেটারদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। তাই মুশফিকের চাওয়াকে মেনেও নেয়া হয়েছে। পাকিস্তানে যাওয়ার বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি তো আগেই বলে দিয়েছি যাব না। পারিবারিক কারণে যাব না। আগেই অনুরোধ করেছি, তারা সেটা মেনে নিয়েছে। আমি আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছি (বিসিবিকে)। যদি বলেন, বাংলাদেশ দলের একটি সিরিজে বিশ্রাম নিতে হবে, এর চেয়ে বড় পাপ আর কিছু হতে পারে না। আমার জন্য অনেক বড় সুযোগও ছিল পাকিস্তান সুপার লীগের (পিএসএল) মতো এত বড় টুর্নামেন্টে খেলার। প্রথমেই ওদের না করে দিয়েছি। জানি পুরো টুর্নামেন্টটা পাকিস্তানে হবে। ওদের বলেছি, যেহেতু পরিবার অনুমতি দিচ্ছে না, এখানে যেতে পারব না। জীবনের চেয়ে অবশ্যই ক্রিকেট বড় না।’ অবশ্য সম্প্রতি বিভিন্ন দল পাকিস্তান সফরে যেতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরাও অনুমোদন দিয়েছে সফরের যে অনুমোদন ২০১৩ সালে পায়নি বিসিবি। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘পাকিস্তান হয়তো আগের চেয়ে ভাল। কিন্তু দুই বছর যদি এমন যায় তাহলে হয়তো আত্মবিশ্বাস আমার কাছে আসবে। এর আগেও পাকিস্তান সফর আমি করেছি। ২০০৮ সালে গিয়েছি। খেলার জন্য অনেক ভাল জায়গা। উইকেট অনেক ভাল থাকে। ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক সুবিধা। সেটা অনেক মিস করবে। আমি আশা করব দুই তিন বছর পরিস্থিতি যদি ধারাবাহিকভাবে ভাল থাকে এবং আরও কিছু দল পাকিস্তান সফর করে তখন না যাওয়ার কোন কারণ নেই।’ এই সফরে মুশফিকের মতো অপরিহার্য ব্যাটসম্যান না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু মুশফিকের দাবি বর্তমানে অনেক বিকল্প আছে এবং মুশফিকের বিকল্প পেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দলে বিকল্প খেলোয়াড় খুঁজতে এক ঘণ্টা লাগে। সবসময়ই চেষ্টা করি পরের সিরিজটা কিভাবে ভাল করতে পারি। কখনও লক্ষ্য থাকে না সামনে বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, এই কাপ, সেই কাপ। আমার লক্ষ্য পাকিস্তানের পর যে সিরিজটা আছে, জিম্বাবুইয়ে সিরিজ সামনে রেখে তৈরি হওয়া। অনেক বিকল্প খেলোয়াড় আছে। অনেকেই ভাল খেলছে। সবার জন্যই এটা একটা ভাল সুযোগ। যে-ই সুযোগ পায়, যেন সেটি কাজে লাগাতে পারে। আমি যদি পরের সিরিজে সুযোগ পাই চেষ্টা করব নিজের জায়গাটা যেন ধরে রাখতে পারি। ভারতে তো আমি খেলেছিলাম, কী লাভ হয়েছে? তিনদিন আর আড়াই দিনে হেরেছি দুটি টেস্ট। আমরা পাঁচ সিনিয়র খেলোয়াড় থাকতেই কত ম্যাচ হেরেছি। আবার না থাকার পরও অনেক ম্যাচ জিতেছি। হ্যাঁ, থাকতে পারলে ভাল করার সম্ভাবনা হয়তো থাকত। তবে আমি মনে করি, নতুন খেলোয়াড়দের জন্য এটা ভাল সুযোগ। বাংলাদেশও নতুন খেলোয়াড় খুঁজছে।’
×