ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ॥ জড়িতদের শনাক্তে মাঠে গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

রাজধানীতে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ॥ জড়িতদের শনাক্তে মাঠে গোয়েন্দারা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকায় দফায় দফায় সিরিজ ককটেল বোমা বিস্ফোরণে জড়িত কারা তা শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকা থেকে পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনের এলাকায় ১১ দিনে অন্তত ১০ দফা ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী-ক্যাডার এই ধরনের ককটেল বোমা রাজনৈতিক উদ্দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। এসব ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে কেন ? এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার নেই। এই ঘটনায় জড়িত কারা ? রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। গত ডিসেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় এসব ককটেল-বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এসব ককটেল-বোমা বিস্ফোরিত হলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার মতো প্রযুক্তিও ব্যবহৃত হয়নি। শুধু ভয়ভীতি দেখানো, আতঙ্ক সৃষ্টি ও আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য এই ধরনের ককটেল-বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের দাবি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর প্রথম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেলে ২টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একই দিন রাতে আরও একটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। এরপর চার দিনের বিরতিতে ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। পরদিন ২৭ ডিসেম্বর আবার পল্টনে ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। একদিন বিরতি দিয়ে ২৯ ডিসেম্বর দুই দফায় মধুর ক্যান্টিন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একইদিন দুপুরে পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় দিনের মতো মধুর ক্যান্টিন এলাকায় এবং সর্বশেষ ১ জানুয়ারি দুপুরে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায়। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা চলছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতদের একটি অংশ বিক্ষোভ শুরু করে। যারা সদ্য ঘোষিত কমিটির বিরোধিতা করে আসছে। এই বিরোধিতা ও ক্ষোভ থেকে পদবঞ্চিতরা দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পদবঞ্চিতরা নিজেদের ক্ষোভের কথা জানানো ও বর্তমান কমিটির সদস্যদের অসহযোগিতার পাশাপাশি নেতৃবৃন্দকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) অফিসে হামলার ঘটনা, ডাকসু ভিপি নূরসহ অন্যদের ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে মোড় ঘুরানোর জন্য তৃতীয় কোন পক্ষের হাত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ককটেল- বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা আতশবাজি বোমা জাতীয়, যা বিধ্বংসী নয়। যেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেগুলো ককটেল, আইইডি না। এগুলো শুধু শব্দ করে। তবে অচিরেই এসব বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশে গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। গত ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিকট আওয়াজে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এতে বিকট শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও রাজধানীতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকতার স্থানে ককটেল নিক্ষেপ করে বিকট শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির পর মানুষজনের মুখে মুখে আলোচনায় আসে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও পল্টনের বিএনপি অফিস কেন্দ্রিক ককটেল-বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর বিষয়টিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আকস্মিকভাবে হঠাৎ করে ককটেল-বোমাগুগুলো নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কোথা থেকে ককটেল-বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, প্রথমে তা টের পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তা শনাক্ত করে। বিস্ফোরিত ককটেল- বোমাগুলোর বিধ্বংসী ক্ষমতা সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়। অতীতে কারা কি উদ্দেশে এই ধরনের ককটেল- বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সেই কেইস স্টাডি করে তা তদন্ত করা হচ্ছে। ককটেল-বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য মাঠ পর্যায়ে সোর্স নিয়োগ, নজরদারিসহ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×