ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা সিটি নির্বাচন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা সিটি নির্বাচন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার করা হয়েছে। শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক জরুরী বৈঠক শেষে তারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশন কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, সব মহলের দাবির প্রেক্ষিতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে এসব বিবেচনায় নিয়ে ভোটের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে ৩ তারিখে নেয়া হয়েছে। নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার বিকেল থেকেই দফায় দফায় নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে। পূজার জন্য ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটের দিন বদলের দাবিতে ব্যাপক সমর্থনের প্রেক্ষাপটে জরুরী বৈঠকে শনিবার বিকেল সোয়া চারটা থেকে জরুরী এই বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। সিইসি কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে আটটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা নির্বাচন পেছানোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষে প্রার্থীরা বর্তমানে প্রচারণায় আছেন। দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ প্রার্থীসহ ৭শ’ ৫৮ জন প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের বাধা ছিল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এরইমধ্যে ইসির নির্দেশনায় পরীক্ষা পিছিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে ভোটের কারণে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারি পাবলিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ এ বিষয়ে নতুন রুটিন দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা পেছানোর এই সিদ্ধান্ত দেয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে সিইসিও ঢাকা সিটির ভোটগ্রহণের তারিখ দুই দিন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণের ঘোষণা দেন। সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দুদিন আগে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করে ইসি। ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা বলে দেখা দেয় জটিলতা। পূজার কারণে তফসিল ঘোষণার পরপরই তার বিরোধিতা করেছিল পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদও ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানায়। কিন্তু তা আমলে নেয়নি ইসি। এরমধ্যে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে হাইকোর্টে রিট আবেদন হলে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ইসি ৩০ জানুয়ারি ভোট করার বিষয়ে আরও শক্ত অবস্থান নেয়। ইসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ৩০ জানুয়ারিই ভোটগ্রহণের জন্য ‘উপযুক্ত’ দিন। কারণ তার পরের দিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বলে সেদিন ভোটগ্রহণের নজির নেই। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে বলে প্রায় এক মাস আর ভোট করা যাবে না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী অনশন শুরু করলে এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ কর্মসূচী ঘোষণা করলে ভোটের দিন বদলের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে শনিবার ইসির জরুরী বৈঠকে ভোট পেছানোর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ভোট পেছানোর এই সিদ্ধান্তের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙ্গান। এদিকে বিকেল সোয়া চারটায় বৈঠক শুরুর পর মাগরিবের নামাজের বিরতির সময় বেরিয়ে এলে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আলোচনা করছি, সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন। এর আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ আগানো কিংবা পেছানো সম্ভব কি না- তা নির্বাচন কমিশন একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন সরস্বতী পূজা পড়ায় নির্বাচন পেছানোর জন্য আন্দোলন করছে ছাত্র সমাজ। ভোটের তারিখ আগানো কিংবা পেছানোর সুযোগ আছে কিনা সেটা এক জিনিস আর সম্ভব কিনা সেটা আরেক জিনিস। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত যদি বলে তাহলে তো আমাদের ভোট পেছাতেই হবে। গত ২২ জানুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। ইসির আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে সরস্বতী পূজার দিনে ভোট না করতে তফসিলের পরপরই হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পূজার দিন ভোটের তারিখ পরিবর্তন করতে আদালতে রিট আবেদন করা হয়। কিন্তু রিট খারিজ করে দেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। পূজার দিনে ভোট পেছাতেও তারা এখন আমরণ অনশন শুরু করে। এছাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে পূজার দিন ভোট বন্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি মাথায় নিয়েই নির্বাচন কমিশন ৩০ জানুয়ারির ভোট পেছাতে জরুরী বৈঠকে বসে। শেষ পর্যন্ত কমিশনের বৈঠকে ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে পূজার দিন সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত করায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ভোটের দিন নির্বাচন করা হলে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা পূজার দিনে ভোট পিছিয়ে দেয়ার দাবি তোলে। ভোট পেছাতেও তারা কমিশনের প্রতি আবেদন জানান। এছাড়ার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মন্তব্য করেন দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোন আপত্তি নেই। তবে সব পক্ষই নমনীয় হওয়ায় কমিশন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরী বৈঠকে বসে। তবে জানা গেছে, এ বিষয়ে আজ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানির পরেই তারা এই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দু’সিটিতে ভোট গ্রহণের তফসিল ঘোষণার পর ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা রয়েছে উল্লেখ করে গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত রিটটি খারিজ করে দেয়। সে সময় আদালত বলে, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৯ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে। সুপ্রীমকোর্টের ক্যালেন্ডারেও ২৯ তারিখ ছুটির কথা বলা আছে। আর নির্বাচন কমিশন ৩০ তারিখ ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। তার দু’দিন পর (২ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোটের তারিখ পেছানোর কোন সুযোগ নেই। তাই আবেদনটি সরাসরি খারিজ করা হলো। হাইকোর্ট বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে আপীল আবেদন করেছে। রিট খারিজ হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কমিশনের সিনিয়র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আদালত সিদ্ধান্ত দেয়ার পর ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। তবে ভোট ও পূজা এক সঙ্গে অনুষ্ঠানের কোন সমস্যা নেই। পূজার জায়গায় পূজা আর নির্বাচনের জায়গায় নির্বাচন হবে। নির্বাচন ও পূজা দুটোই পবিত্র হওয়ায় একসঙ্গে অনুষ্ঠানে কোন সমস্যা হবে না মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যেসব কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পূজা হবে সেখানে ভোটের আয়োজনে কোন সমস্যা হবে না। পূজায় যেন সমস্যা না হয় সে অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করা হবে। পূজার জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন মানেই এমন নয় যে মারামারি হবে তাই পূজা করা যাবে না। নির্বাচন ও পূজা পবিত্র কাজ। সুতরাং কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। নির্বাচন কমিশন আইন, সরস্বতী পূজা, এসএসসি পরীক্ষা, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সর্বোত্তম দিন যেটা, সে দিনটাই ঠিক করেছে। আদালত রিট আবেদন রিট খারিজ করায় ভোট আয়োজনে বাধা নেই। এজন্য সব প্রস্তুতি চলছে। সব স্কুলে কিন্তু পূজা হয় না। বাকি স্কুলে যেখানে পূজা হবে, সে জায়গাটা ছেড়ে দেবে। আবার সরকারী অনেক অফিস, আদালতেও পূজা হয়। সেখানে অনেক রুম থাকে। তাই যেখানে পূজা হবে, সে রুম ছেড়ে দিয়ে অন্য রুমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। পূজার জায়গায় পূজা চলবে, নির্বাচনের জায়গায় নির্বাচন হবে। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে এ বিষয়ে আপীল দায়ের করার পর ইসি সচিব বলেন, আপীল বিভাগে যে রায় হবে কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
×