ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গুনিয়ার শিলক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র

জরাজীর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

জরাজীর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া, ১৮ জানুয়ারি ॥ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক বাজার এলাকায় তিন কক্ষের শিলক ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে প্রথমে এটিকে লোহা সিমেন্টের অনেক পুরনো দোকান মনে হবে। হাসপাতালটির সামনে পাশ ঘেঁষেই চলছে রড সিমেন্টের ব্যবসা ও গ্রিল ওয়ার্কশপ। ভেতরে তিন কক্ষবিশিষ্ট ভবনের প্রত্যেক দেয়ালেই রয়েছে বিশাল বিশাল ফাটল। দেয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। জানালাও ভাঙ্গাচোরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নেই কোন বিদ্যুত ব্যবস্থা। নেই কোন শৌচাগার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডটিও নষ্ট। তবে ষাটের দশকে বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন শিলক, কোদালা ইউনিয়নের শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র জুড়ে বেহাল পরিস্থিতি, যে কোন সময় ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এবং স্বাস্ব্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে । এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটি কক্ষসহ বারান্দার দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে ভেতরের জং ধরা লোহার রড বের হয়ে গেছে। সব দরজা-জানালা ভাঙ্গা। মরিচা পড়ে টিনের চাল ভেঙ্গে গেছে এবং কোথাও কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এ সময় চিকিৎসা-সরঞ্জামসহ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। দেয়ালে শেওলা পড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ অঞ্চলের লোকজনের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রটি টিকে থাকা খুব জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয়দের দান করা জমিতে ১৯৫৫ সালে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একতলা টিনশেড ভবনটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর থেকে এই ভবনেই এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কোন ধরনের সংস্কার না থাকায় বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরপরও বিকল্প না থাকায় এখানে রোগীদের নিয়মিত সেবা দেয়া হচ্ছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা মাসকুরা বেগম বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ ও শৌচাগারও নেই। এরপরও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয় বিধায় চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিদিন ভিড় জমালেও অনেক সময় রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়।’ স্থানীয় যুবক ও যুবনেতা মাহমুদুল হাসান বাদশা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এ এলাকা থেকে অনেক দূরে। কর্ণফুলী পার হয়ে কিংবা গোডাউন ব্রিজ দিয়ে সড়কপথে যেতেও দীর্ঘপথ পেরুতে হয়। এ কারণে এই গ্রামের মানুষ এখানেই চিকিৎসা নিতে আসেন। জনস্বার্থে এটি সংস্কার করে এলাকার গরিব রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুব জরুরী। এলাকার সমাজসেবক ও রাজনীতিক লিয়াকত আলী জানান, শিলক কোদালা ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের জন্য এই হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হাসপাতালটি দ্রুত মেরামত করা হোক । শিলক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্মাণের পর থেকে এটি আর কোন সংস্কার না করায় দিন দিন তা আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেও জনস্বার্থে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যে কোন সময় ভবনটি ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একজন নারী চিকিৎসক সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন এলাকার শতাধিক রোগীদের। অথচ এখানে নেই কোন টয়লেট কিংবা বৈদ্যুতিক সংযোগ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কারের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আমি বেশ কয়েকবার বলেছি।
×