ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লভ্যাংশের জন্য ব্যাংকের শেয়ার কিনছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

লভ্যাংশের জন্য ব্যাংকের শেয়ার কিনছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা পতনের কারণে আশাহত হয়ে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার সময় এগিয়ে আসায় বিক্রির পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন বেশি। যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৯টির বেশি ব্যাংকে। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ডিএসইর হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে এসব ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রেখেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যখন বাজারে শেয়ার দর কমে তখন আমাদের দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে বা গুজবে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। বিপরীত দিকে প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তা করেন না। তারা কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালভাবে এ্যানালাইসিস করেন। তারপর তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশীরা বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রেখেছে সেগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, এসআইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক। একই সঙ্গে তারা যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ডাচব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হতাশ হলেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হন। বাজারের সূচক ৪ হাজার পয়েন্টের কাছে আসায় লভ্যাংশ পেতে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান ব্যাংেকর শেয়ার কিনছে। আর ব্যাংকের শেয়ার লোভনীয় পর্যায়ে চলে আসায় অনেকেই এই দামে শেয়ার হাতে রাখতে চাচ্ছেন। আগামীতে অল্প দামে ব্যাংকের শেয়ার কিনে লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন। কারণ এই দামে শেয়ার কিনলে লভ্যাংশ পাবেন অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বেশ ভাল তাই সেই হিসাবটিই তারা মাথায় রেখে ব্যাংকের শেয়ার কিনছেন। জানা গেছে, ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩০। বুধবার পর্যন্ত ডিএসইরতে ১৮ ব্যাংকের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণ গত ডিসেম্বর মাসে বেড়েছে ৯ প্রতিষ্ঠানে। তবে অপরিবর্তিত ছিল ২টির। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৭ কোম্পানিতে এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারণ কমিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে যেসব ব্যাংকে সেগুলো হচ্ছে- ডাচ্বাংলা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। অন্যদিকে বিনিয়োগ কমেছে এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। এছাড়া দুটি ব্যাংকের বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রেখেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক দুটি হচ্ছেÑ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এদিকে, বিদেশীদের শেয়ার ধারণ চিত্রে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে তারা ৮ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রেখেছে। তারা ২ ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ৪ ব্যাংকের শেয়ার থেকে তারা বিনিয়োগ কমিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দা কারণে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বেশ কিছু ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির দর কমে বিনিয়োগ উপযোগী অবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিসেম্বরে হিসাব বছর শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা মন্দা বাজারে ক্যাপিটাল গেইন করতে না পারলেও এসব কোম্পানির লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশীরাও এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ রেখেছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। তবে ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা।
×