ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্দেশ না মানলে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

আবাসিক, বাণিজ্যিক সব ভবনে এসটিপি বাধ্যতামূলক ॥ পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর সরকার

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

  আবাসিক, বাণিজ্যিক সব ভবনে এসটিপি বাধ্যতামূলক ॥ পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর সরকার

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীসহ সারাদেশের সকল স্থানে যে কোন প্রকার ভবন বা বৃহৎ স্থাপনা তৈরিতে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এখন থেকে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা যে কোন সরকারী স্থাপনা নির্মাণ করতেও এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে পরিবেশ দূষণ রোধ করে নাগরিকদের সুরক্ষায় যাতে কোন প্রকার ছাড় না দেয়া হয় সে জন্য প্রতিটি ভবনে এসটিপি স্থাপন ও একইসঙ্গে প্রতিটি শিল্প কারখানার জন্য ইটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এসটিপি ছাড়া আর কোন ভবনের নক্সা অনুমোদন করা হবে না। এ নির্দেশ পরিপালনে কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য যে কোন নক্সা পাস করাতে গেলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসটিপি স্থাপন না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে সরকার। মানবসৃষ্ট পয়োঃবর্জ্য মাটি ও পানির সঙ্গে মেশানোর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর গুলশান বারিধারা লেকের পাশে ও এলাকার সমস্ত ভবন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সকল নতুন শহর উন্নয়ন প্রকল্পের এলাকায় অবস্থিত সকল বহুতল স্থাপনায় এ নির্দেশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ৫ ডিসেম্বরের করা বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, পূর্বাচল প্রকল্পের যে কোন স্থাপনা নির্মাণে বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি নির্মাণ করতে হবে। এমনকি ডিসেম্বর পর্যন্ত পাস হওয়া পূর্বাচল প্রকল্পের ৯০টি ভবনের নক্সা নির্মাণের যে অনুমতি দেয়া হয়েছে সেসব ভবনেও বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি নির্মাণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন করে যে সব ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হবে সে সব ভবনে স্যুয়ারেজ সিস্টেম ঠিক রাখতে বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি ছাড়া নক্সা প্রদান না করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) সুপারিশ বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ইটিপি হচ্ছে শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য পদার্থকে যে প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে সাধারণ পানির মতো করে পুনর্ব্যবহার করার উপযোগী করে বা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত পানি যেন পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে সে জন্য যে প্লান্ট ব্যবহার করা হয় তাকেই ইটিপি বলা হয়। দূষিত পানি উৎপাদনকারী সকল কারখানাতেই ইটিপি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে দেয়া ৯০টি ভবনে এসটিপি ছাড়া নক্সার অনুমোদন দেয়া হয়। সরকার মনুষ্যসৃষ্ট পয়োবর্জ্য সমস্যায় পরিবেশ দূষণ যাতে না হয় সেজন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ সব ভবনেও এসটিপি নির্মাণকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি সরকারের একটি আদর্শ প্রকল্প হিসেবে স্থান করে দিতেই এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীর গুলশান বারিধারা লেকের পানি খুবই দূষিত হয়ে পড়েছে। এ থেকে নাগরিকদের পানিবাহিত নানা ছোঁয়াচে রোগ হচ্ছে। এছাড়া লেকের কোন কোন স্থান দিয়ে দুর্গন্ধের কারণে অভিজাত এলাকায় চলাচলও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে জানা গেছে, মনুষ্যসৃষ্ট পয়োঃবর্জ্যরে সকল মলমূত্র ও বর্জ্য এ লেকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে অত্যন্ত কম সময়েই এ লেকটি দূষণ হয়ে গেছে। রাজউক সূত্র জানায়, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী গুলশান বারিধারা লেকের আশপাশসহ এ এলাকার সকল নতুন বাড়ির নক্সা অনুমোদনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করতেই হবে। যাতে করে অভিজাত এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা তথা নাগরিকদের কষ্ট লাঘব হয়। গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণেও নিজস্ব এসটিপি রাখা হবে। এছাড়া পূর্বে যে সব বহুতল ভবনের কোন প্রকার এসটিপি রাখা হয়নি তাদেরও এসটিপি নির্মাণ করতে হবে। গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীর বাইরে কক্সবাজারের সকল হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোকে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন সকল বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণে বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি নির্মাণ করতে হবে। অপরদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এসটিপি নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজারের ১৪৪টি হোটেল মোটেল গেস্টহাউস ও কটেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পয়োঃবর্জ্য পরিশোধনে এসব স্থাপনার মধ্যে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানে ২ থেকে ৩ চেম্বার বিশিষ্ট সেপটিক ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ট্যাঙ্কও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। এছাড়া এসটিপি নির্মাণের শর্ত তেমন কেউই মানেননি। এর বাইরে বাকি ভবনগুলোর কেউই এসব নির্দেশ মানেননি বা কোন এসটিপি বা সেপটিক ট্যাঙ্ক পর্যন্ত নির্মাণ করেননি। সরাসরি ড্রেনের সঙ্গে পয়োঃবর্জ্যওে লাইন সংযোগ করে দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় কক্সবাজার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় যেন আগামী ৩ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কক্সবাজারের সকল হোটেল মোটেল কটেজ ও গেস্টহাউসেই ভবনেই বাধ্যতামূলকভাবে এসটিপি নির্মাণ করতে অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। এ নির্দেশনার পর কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। কিছু হোটেল মালিক এসটিপি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত পূর্বাচল প্রকল্পের শতাধিক বাড়ির নক্সা নির্মাণের জন্য আবেদন করে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করলেও সরকারের নতুন এ নির্দেশনা অনুযায়ী এসব নক্সায় নতুন করে এসটিপি সংযোজন করে পুনরায় রাজউকের কাছ থেকে নক্সা নিতে হবে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বেশ বিপাকেই রয়েছে অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করা বাড়ির মালিকরা। তবে রাজউকের পক্ষ থেকে সরকারের এ নির্দেশনা না মানলে তাও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে প্রকল্প থেকে নির্দেশনা থাকায় বাড়ির মালিকদের এসটিপিসহ বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পূর্বাচলের প্রতিটি ভবনেই এসটিপি বাস্তবায়নের নির্দেশ পেয়েছি। পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণ রোধে এসটিপি ছাড়াই যেসব ভবনের নক্সা প্রদান করা হয়েছিল সেসব ভবনেও নতুন করে এসটিপি স্থাপন করতে হবে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এসটিপি ছাড়া কোন ভবনের নক্সা প্রদান করা হবে না। এছাড়া ব্যত্যয়কারীদের ভবন নির্মাণ করতেও দেয়া হবে না। তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে আবাসিক বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা যে কোন সরকারী স্থাপনা নির্মাণ করতেও এসটিপি স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে পরিবেশ দূষণ রোধ করে নাগরিকদের সুরক্ষায় যাতে কোন প্রকার ছাড় না দেয়া হয় সে জন্য প্রতিটি ভবনে এসটিপি স্থাপন ও একইসঙ্গে প্রতিটি শিল্প কারখানার জন্য ইটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ নির্দেশ পরিপালনে কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও বিভাগকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের যে কোন স্থানে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের জন্য যে কোন নক্সা পাস করতে গেলে কোন ভবন সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসটিপি স্থাপন না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে সরকার। মানবসৃষ্ট পয়োঃবর্জ্য মাটি ও পানির সঙ্গে মেশানোর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। মূলত দেশের প্রতিটি স্থানকে পরিবেশবান্ধব করতে ও দূষণমুক্ত সুস্থ জীবনের জন্য নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্বাচল প্রকল্পের যে কোন ভবনের জন্য নেয়া নক্সা ও ভবিষ্যতের সকল নক্সায় এসটিপি বা ইটিপি বাধ্যতামূলকভাবে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া কক্সাবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল স্থাপনায় এসটিপি স্থাপন করার নির্দেশ বাস্তবায়নের ও পরীবিক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শতভাগ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসটিপি বা ইটি স্থাপন অত্যন্ত জরুরী।
×