ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ॥ ঝুঁকিতে তিন শতাধিক বানর

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ॥ ঝুঁকিতে তিন  শতাধিক বানর

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের খেসারত গুনতে হচ্ছে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর বনের ৩ শতাধিক বানরকে। বনের ভেতর খোলা তারে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন স্থাপনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে এসব বানর। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ঝলসে গেছে অন্তত পাঁচটি বানর। স্থানীয় বন বিভাগের অভিযোগ, নিষেধ করার পরও পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ সন্তোষপুর বনের ভেতর তাদের কভারবিহীন তারে সরবরাহ লাইন স্থাপন করে। এর মাসুল গুনতে হচ্ছে এখন বনের নিরীহ বানরকে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সন্তোষপুর বনে বেড়াতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। বন বিভাগের স্থানীয় সূত্র জানায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর বনের ভেতর ৩ শতাধিক বানরের বাস। যুগ যুগ ধরে এসব বানর বনের ভেতর বিচরণ করে আসছে। গত ডিসেম্বরে সন্তোষপুর বনের ভেতর ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ পাঁচ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন নির্মাণ করে খোলা তারে সংযোগ দেয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এই লাইনের উদ্বোধন করেন বলে জানায় এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনের ভেতর স্থাপন করা সরবরাহ লাইনে ইনসুলেশন ছাড়া খোলা তার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে বনের বানর খেলা করতে গিয়ে নির্বিচারে এই সরবরাহ লাইনে জড়িয়ে বিদ্যুস্পৃষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ইতোমধ্যে পাঁচটি বানরের হাত পা ও মুখ ঝলসে গেছে বলে দেখেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। সময়মতো চিকিৎসার অভাবে এসব বানরকে হাত ও পাসহ মুখে দগদগে ক্ষত নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। একটি বানরের এক হাত প্রায় খসে পড়া অবস্থায় দৌড়াতে দেখা গেছে। বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইনের কাছে গেলেই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হচ্ছে বানর। এই ক্ষেত্রে কোন বানর আক্রান্ত হলে দল বেঁধে অন্যসব বানর উদ্ধারে চেষ্টা চালাতে গিয়ে বাকিরাও দগ্ধ হচ্ছে। এমতাবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বনের ৩ শতাধিক বানর। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অনিতা বর্মণ জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে তাদের সরবরাহ লাইনের ঝুলানো তারের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এতে নতুন করে কোন বানর আক্রান্ত হবে না বলে দাবি এই কমকর্তার। তবে স্থানীয়রা জানান, বনের ভেতর খোলা তারের ঝুঁকি থেকেই গেছে। বনের ভেতর সরবরাহ লাইন স্থাপনে বন বিভাগের অনুমতি প্রশ্নে জানান-এটি উর্ধতন কর্মকর্তারা ভাল বলতে পারবেন। এসব নিয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা একেএম রুহুল আমিন জানান, বনের ভেতর যে কোন উন্নয়ন কাজ করতে হলে বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। অথচ পল্লী বিদ্যুত সমিতি এই অনুমোদন নেয়নি। বানরের চিকিৎসায় উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান এই বন কর্মকর্তা। এদিকে সন্তোষপুর বনের জহুর উদ্দিন (৮০) ও গাদল চন্দ্র বর্মণ (৯০) জানান, এক সময় সন্তোষপুর বনে ময়ূর, বাঘ, শূকর, বিড়াল, মোরগ দেখা যেত। কিন্তু বনে ফলসহ খাবারের অভাবে এসব প্রাণীর দেখা নেই এখন। খাবার সঙ্কটসহ বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের কারণে এখন বানরও বন ছাড়ার উপক্রম হচ্ছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে ভাবার কিংবা দেখার কেউ নেই। এখন পর্যন্ত কোন মহল বানরের সুচিকিৎসায় এগিয়ে না আসায় হতাশ এলাকাবাসী। সন্তোষপুরের হানিফা (৭০) জানান, দিনে দুই বেলা খাবার বরাদ্দের কথা শোনা গেলেও এসব বানর প্রতিদিন একবেলা পাচ্ছে এক মুষ্ঠি চাল মাত্র! এ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দাবি, বানরের জন্য ২ লাখ টাকার বাজেট ছিল খাবারে। চলতি অর্থবছর থেকে এটি বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। বন কর্মকর্তার এমন দাবির বিপরীতে বাস্তবতার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
×