ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই শতাধিকের মধ্যে লাইসেন্স আছে ১২১টির

খুলনায় ইটভাঁটির ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

খুলনায় ইটভাঁটির ধোঁয়ায়  জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় ইটভাঁটির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। কালো ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে ভাঁটি এলাকার আশপাশে। এতে ওই জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাঁটিতে। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট ও কৃষিজপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া ইটভাঁটির চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ইটভাঁটির বর্জ্যে এলাকার গাছপালা, উদ্ভিদ ও কৃষিক্ষেতের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। জানা গেছে, খুলনার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাঁটি রয়েছে দুই শতাধিক। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ১২১টির। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাঁটি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে যে দূষণ সৃষ্টি হয় তাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার আশপাশের মানুষ বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। ইটভাঁটির চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে তা গাছপালা ও কৃষিজমিতে পড়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদন হ্রাস পায়। ওই কালো ধোঁয়ায় গাছের পাতায় এক ধরনের বাদামি আবরণ তৈরি হয়। যা টক্সিন নামে বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে। সেটা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। ইটভাঁটিগুলোতে ব্যবহার নিষিদ্ধ জ্বালানি কাঠও পোড়ানো হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের কয়লা। কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্তেও বেশিরভাগ ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে লোকালয়ে, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরের অতি সন্নিকটে, কৃষিজমিতে, নদীর তীরে। ইটভাঁটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির উপরিভাগ, নদীতীরে পুকুর করে পলি জমিয়ে সেই মাটি দিয়ে ইট বানানো হয়। যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অনেকেই তা মানছেন না। সূত্র জানায়, ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ইটভাঁটি স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ ওই আইন লঙ্ঘন করে খুলনা শহরের আশপাশ, রূপসা, ভৈরব ও আঠারোবেকি নদীরপারে অনেক ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত আইনে বলা হয়েছে, জ্বালানি সাশ্রয়ী, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন জিগজ্যাগ কিলন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিক কিলন, হাইব্রিড হফম্যান কিলন, টানেল কিলন বা অনুরূপ কোন ভাঁটি স্থাপন/পরিচালনা করা যাবে। অন্য কোন প্রকারের ইটভাঁটি স্থাপন করা বেআইনী। কিন্তু খুলনায় দুই শতাধিক ইটভাঁটি গড়ে উঠলেও লাইসেন্স আছে ১২১ টির। আইন লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি করে বেশিরভাগ ইটভাঁটি পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি ডুমুরিয়া এলাকায় আইন লঙ্ঘনের দায়ে চারটি ইটভাঁটি মালিককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, খুলনায় দুই শতাধিক ইটভাঁটি রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাঁটিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অধিদফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব ভাঁটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাঁটির চিমনির কালো ধোঁয়া ও ভাঁটির বর্জ্যে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ইটভাঁটির সংখ্যা ১২১টি। এরমধ্যে ২/৩টি বন্ধ রয়েছে। এছাড়ও কিছু ভাঁটি রয়েছে যাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ আইন অনুযায়ী কাগজপত্র না থাকায় তাদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। সূত্র মতে, নদী দখল করে ও কৃষিজমিতে ইটভাঁটি স্থাপন করার কোন বৈধতা নেই। বেআইনী এ সকল ইটভাঁটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, ইটভাঁটির কালো ধোঁয়া ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাছাড়া কৃষিজ পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল ইটভাঁটিতে চলে যাচ্ছে। এতে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
×