ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট

মাত্র ১৫ হাজার টাকায় সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

মাত্র ১৫ হাজার টাকায় সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বহুল আলোচিত সগিরা মোর্শেদকে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর পরিকল্পিত খুনের ঘটনাটি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার জজ মিয়া নাটকের মতো ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছিল। এমনকি ছিনতাই নাটক সাজিয়ে মিন্টু নামের এক ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে চার্জশীটটি দেয়া হয়েছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল প্রয়াত মাহমুদুল হাসান ছিলেন সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলাকে ছিনতাই মামলা বানানোর অন্যতম কারিগর। কারণ মাহমুদুল হাসান ছিলেন সগিরা মোর্শেদকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা মারুফ রেজার আপন ফুপা। বৃহস্পতিবার মামলার সচিত্র চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম আদালতে ১৩০৯ পৃষ্ঠার বিশাল আকারের চার্জশীটটি দাখিল করা হয়। চার্জশীটে চার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন জনই সগিরার নিকটাত্মীয়। অপর আসামি মারুফ রেজা ঢাকার বেইলী রোডের ওই সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল। খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। মিন্টু নামের এক ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়েছিল। তদন্তে মিন্টু ওরফে মন্টুর কোন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে নির্দোষ বলা হয়েছে চার্জশীটে। অপর আসামিদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ মামলার অনেক আলামত গায়েব হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের ধানমন্ডি সদর দফতরে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তদন্তকারী সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বলেন, মামলাটির তদারককারী কর্মকর্তা করা হয় পিবিআইয়ের ঢাকা দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহাদত হোসেনকে। আর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআই ঢাকা মেট্রোর দক্ষিণের পরিদর্শক রফিকুল ইসলামকে। তদন্তে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেল পাঁচটার দিকে খুন হওয়া মোসাম্মৎ সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪) হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। ঘটনার দিন সগিরা মোর্শেদ ভিকারুননিসা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণী পড়ুয়া তার মেয়ে সারাহাত সালমাকে (৮) আনতে রিক্সাযোগে স্কুলের দিকে যান। স্কুলের সামনে পৌঁছা মাত্রই অজ্ঞাতনামা দুই দুষ্কৃতকারী একটি ৫০ সিসির মোটরসাইকেলযোগে সেখানে হাজির হয়। তারা মোটরসাইকেল দিয়ে সগিরার রিক্সা অবরোধ করে। তারা নেমে সগিরার হাতে থাকা স্বর্ণের বালা টেনে খুলে নেয়ার চেষ্টা করে। বালা নিতে না পেরে সগিরার কাছে থাকা হাতব্যাগ নেয়ার চেষ্টা করে। দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে সগিরা এক ভাসুরের শ্যালকও ছিল। তাকে চিনে ফেলায় সগিরা তাকে জোরে ধমক দেন। এ সময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অপর দুষ্কৃতকারী মারুফ রেজা কোমর থেকে রিভলভার বের গুলি করে। প্রথম গুলিটি সগিরার হাতে লাগে। এরপর আরেকটি গুলি করলে সেটি গিয়ে সগিরার বুকে বিদ্ধ হয়। এরপর আরও দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তারা পালিয়ে যায়। রিক্সাচালকসহ স্থানীয়রা সগিরাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানেই সগিরার মৃত্যু হয়। পরে সগিরার পোস্টমর্টেম হয়। এ ঘটনায় সগিরার স্বামী আব্দুস ছালাম চৌধুরী বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেন। মামলার আলামত হিসেবে সগিরার হাতে থাকা স্বর্ণের বালা ও হাতব্যাগ জব্দ করা হয়। তা পুলিশের করা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়। মামলাটি ইতোপূর্বে ২৫ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করেন। তারা প্রত্যেকই একজন করে গ্রেফতার করেছিলেন। যার মধ্যে ১৯৯০ সালে ডিবির পরিদর্শক আব্দুল জলিল শেখ ছিনতাইকারী হিসেবে দেখিয়ে মিন্টু ওরফে মন্টুর বিরদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। আদালতে মামলার চার্জশীটের সঙ্গে আলামত হিসেবে স্বর্ণের বালা, হাতব্যাগ, গুলির খোসা ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়া হয়। পরবর্তীতে মিন্টু জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। সর্বশেষ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বিদায়ী বছরের ১১ জুলাই ক্রিমিনাল মিস মামলাটি খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়। মামলাটির তদন্তের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তের ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত আট জন সাক্ষীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। যার মধ্যে ওই দিনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেই রিক্সাচালক ছালাম মোল্লাও আছেন। পরবর্তীতে আসামিদের দেয়া হুমকির সূত্রধরে সগিরা মোর্শেদ খুনের রহস্য উদঘাটিত হতে থাকে। তদন্তে পাওয়া তথ্য এবং সাক্ষীদের দেয়া জবানবন্দী মোতাবেক গত বছরের ১০ নবেম্বর মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আনাছ মাহমুদ ওরফে রেজওয়ানকে (৫৯) ঢাকার রামপুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক গত বছরের ১২ নবেম্বর তার বোন জামাই ডাঃ হাসান আলী চৌধুরী (৭০) ও ডাঃ হাসান আলীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনকে (৬৪) ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক গত বছরের ১৩ নবেম্বর মোঃ মারুফ রেজাকে (৫৯) বেইলী রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাকৃতরা আদালতে সগিরার মৃত্যু সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তারা জানায়, মামলার বাদী সগিরার স্বামী আব্দুস ছালাম চৌধুরী ও তার অপর দুই বড় ভাই সামছুল আলম চৌধুরী, মেজো ভাই ডাঃ হাসান আলী চৌধুরী। সগিরা ও আব্দুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালের ২৫ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। ১৯৮০ সালে সগিরা ও তার স্বামী শিক্ষকতা করার জন্য সপরিবারে ইরাকে চলে যায়। ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে ১৯৮৪ সালে তারা আবার দেশে ফেরেন। বসবাস শুরু করেন পৈত্রিক বাড়ি রাজারবাগ পেট্রোল পাম্পের কাছের দু’তলা বাড়িতে। তাদের তিন কন্যা সারাহাত সালমা চৌধুরী (৮), সামিয়া সারোয়াত চৌধুরী (৫) ও সিফাত আবিয়া চৌধুরী (২) ছিল। আর সগিরার ভাসুর ডাঃ হাসান আলী চৌধুরী বারডেম হাসপাতালে ওই সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৮০ সালে সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮০ সালের ২২ জুন এই দম্পতি লিবিয়ায় চলে যান। আবার ১৯৮৫ সালে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ দেশে ফেরেন। বসবাস শুরু করেন ৯৫৫ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডস্থ রাজারবাগের দোতলা পৈত্রিক বাড়িতে। যে বাড়িতে সগিরারা দ্বিতীয় তলায় বসবাস করত। পিতা মাতা ছাড়াও আরেক ভাই সামসুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে নিচতলায় কিছুদিন বসবাস করেন ডাঃ হাসান আলী দম্পতি। তারপর বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় আব্দুস ছালাম চৌধুরীর বাসায় একটি রুমে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন ডাঃ হাসান আলী চৌধুরী ও তার পরিবার। এক বাসায় থাকার কারণে ডাঃ হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে সগিরার ঝামেলা হতে থাকে। মাস ছয়েক পরে ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে বাড়িটির তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়। ডা. হাসান আলী তৃতীয় তলায় ওঠেন। বর্তমানে বাড়িটি দশ তলা হয়েছে। তৃতীয় তলা থেকে প্রায়ই ময়লা ফেলা হতো। এ নিয়ে হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের সঙ্গে সগিরার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তা এক পর্যায়ে চরম আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে একদিন সগিরার গৃহকর্মী জাহিনুর বেগম ভুলক্রমে ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে নামার সময় হাসান আলীর দরজা সামনে থু থু ফেলে। এ নিয়ে বাসায় সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে জাহিনুরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। হাসান আলীর স্ত্রীর ধারণা সগিরা জাহিনুরকে তার বাসার সামনে থু থু ফেলতে বলেছে। এমন ঘটনার পর শাহিন সগিরাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। হাসান আলীর স্ত্রী শাহিন সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে। তাতে সায় দেন তার স্বামী ডাঃ হাসান আলী চৌধুরী। হাসান আলীর রোগী ছিলেন তৎকালীন সিদ্ধেশ্বরী এলাকার নামকরা সন্ত্রাসী মারুফ রেজা। মারুফ রেজার আপন ফুপা ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। এজন্য তার দাপট ছিল বেশি। ওই সময় হাসান আলী চৌধুরীর চেম্বার ছিল ইস্কাটনের যমুনা ফার্মেসিতে। বর্তমানে সেই ফার্মেসি নেই। সেখানে এখন বহুতল ভবন হয়েছে। চেম্বারে বসেই সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার জন্য মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকার চুক্তি করেন হাসান আলী। মারুফ রেজার সঙ্গে হাসান আলী তার শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজোয়ানকে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে বলেন। আনাস মাহমুদ রেজোয়ান হাসান আলী চৌধুরীর বাসায় যাতায়াতের সুবাদে সগিরাকে ভালভাবে চিনতেন। ঘটনার দিন ডাঃ হাসান তার শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজওয়ানকে দুপুর ২টার দিকে মৌচাক মার্কেটের সামনে আসতে বলে। অপর আসামি মারুফ রেজা মোটর সাইকেলযোগে মৌচাক মার্কেটের সামনে যায়। হাসান আলী চৌধুরী তার শ্যালককে মারুফ রেজার সঙ্গে গিয়ে সগিরাকে দেখিয়ে দিতে বলে। আনাস মাহমুদ ও মারুফ রেজা একটি ৫০ সিসি লাল মোটরসাইকেল নিয়ে সিদ্ধেশ^রী কালি মন্দিরের গলিতে যায়। তারা সগিরাকে রিক্সাযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিকে যেতে দেখে পিছু নেয়। স্কুলের সামনে মারুফ রেজা মোটরসাইকেল দিয়ে সগিরার রিক্সা সামনে গিয়ে পথরোধ করে। মারুফ রেজা সগিরার হাত ব্যাগ নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আর হাতে থাকা স্বর্ণের বালা খুলে নেয়ার চেষ্টা করে। সগিরা আনাস মাহমুদকে চিনে ফেলায় জোরে ধমক দেন। ধমক দেয়ার পর মারুফ রেজা ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে সগিরাকে কোমর থেকে রিভলভার বের করে গুলি করে। প্রথম গুলিটি সগিরার হাতে লাগে। এরপর সে সগিরারকে আরও একটি গুলি করে। গুলিটি বুকে বিদ্ধ হয়। পরে মারুফ রেজা আরও দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেলযোগে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামিরা মামলাটি তুলে নিতে সগিরার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে। সগিরাকে সেখানে হত্যা করা হয়, সেখান থেকে মারুফ রেজার বেইলী রোডের ৬৭ নম্বর বাড়ি থেকে মাত্র ৪শ’ গজ দূরে। ওই সময় মারুফ রেজার বয়স ছিল ১৮ বছর সাড়ে চার মাস। পিবিআই প্রধান বলেন, হত্যাকা-ের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল রিক্সাচালক। যে রিক্সায় সগিরা ছিল। ওই রিক্সাচালককে খুঁজে বের করা হয়েছে। তার নাম ছালাম মোল্লা। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৬ বছর। খুনের ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। পরে তিনি সগিরা খুনের বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এখন পর্যন্ত আট জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এমন ঘটনার পর মারুফ রেজা তার মোটরসাইকেলটি আনোয়ার হোসেন নামের এক চালকের কাছে দেন। তার গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। আর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রিভলভারটি মারুফ রেজা ভাষ্য মোতাবেক সায়েদাবাদ এলাকার ওই সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক মনু মিয়া ওরফে মুন্না ওরফে হরর মুন্নার। তার কাছ থেকে ভাড়ায় রিভালভারটি এনেছিল মারুফ রেজা। ঘটনার পর মারুফ রেজা রিভলভারটি আবার হরর মুন্নাকে ফেরত দেয়। ২০০৫ সালের ২৮ নবেম্বর র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হরর মুন্নার মৃত্যু হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলভবার উদ্ধার হয়েছিল। সেই রিভলভার আইন মোতাবেক সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে রিভলভারটি আর আলামত হিসেবে পাওয়া যায়নি। কারণ অস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে মামলার আলামত হিসেবে সগিরা মোর্শেদের ব্যাগ ও স্বর্ণের বালা আর পাওয়া যায়নি। তবে সগিরা মোর্শেদের সুরতহাল প্রতিবেদন বহু কষ্টে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। ১৯৯২ সালে সাইদুর রহমান নামের একজন আইনজীবীর জিম্মায় সেই আলামত ছিল। পরবর্তীতে আইনজীবীর আর হদিস মেলেনি। এ নামে একজন আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি সেই কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যাকা-ের পাঁচ দিন পর মারুফ রেজাকে ১৫ হাজার টাকা দেয় হাসান আলী চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক সেই সময়ের ১৫ হাজার টাকার বর্তমানে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫শ’ ৪৪ টাকা। বাকি টাকা আর দেয়নি হাসান আলী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুনের মামলা ছিনতাই মামলা সাজিয়ে চার্জশীট দেয়া এবং মামলার আলাতম গায়েবের সঙ্গে ওই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মাহমুদুল হাসানের মদদ ছিল। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের ঢাকা দক্ষিণ বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি সগিরা মোর্শেদের ভাই গউস নিয়াজ সাব্বির ও সগিরার স্বামী আব্দুস ছালাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ত্রিশ বছর পর স্ত্রীর হত্যার রহস্য উদঘাটিত হওয়ায় তিনি পিবিআইকে ধন্যবাদ জানান। এমন তদন্তে তিনি খুবই খুশি বলে জনকণ্ঠকে বলেন। তিনি এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
×