ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেসিডেনসিয়াল মডেল ছাত্রের মৃত্যু

প্রথম আলোর মতিউর, আনিসুলসহ ১০ জনের নামে ওয়ারেন্ট

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

প্রথম আলোর মতিউর, আনিসুলসহ ১০ জনের নামে ওয়ারেন্ট

কোর্ট রিপোর্টার ॥ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার রাহাত দৈনিক প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হওয়ার মামলায় পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম এ সংক্রান্ত পুলিশ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ পরোয়ানা জারি করেছেন। পরোয়ানাপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, হেড অব ইভেন্ট এ্যান্ড এ্যাকটিভিশন কবির বকুল, নির্বাহী শুভাশিষ প্রামাণিক শুভ, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম পাভেল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসিম উদ্দিন অপু, মোশারফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার। গত বছর ৬ নবেম্বর নিহত নাইমুল আবরারে পিতা মোঃ মজিবুর রহমান একই আদালতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দ-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় এ মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের পর মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক আব্দুল আলীম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালত আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর ছেলে নাইমুল আবরার (১৫) গত ১ নবেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে প্রথম আলোর মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যায়। সে ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান চলাকালে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আবরার বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানের জন্য যে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করা হয় তা অরক্ষিত ছিল। এরূপ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার যে নিরাপত্তামূলক ও সাবধানতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি। ঘটনাস্থলের অতি সন্নিকটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থাকলেও আবরারকে দূরবর্তী ‘মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালে’ নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গত ১ নবেম্বর ইস্যুকৃত মৃত্যুর সনদে দেখা যায়, আবরার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ভর্তি হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪টা ৫১ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। যেখানে আবরার সাড়ে ৩টায় বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। আর মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও মৃত্যুর সংবাদ গোপন রেখে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আবরারের পরিবারকে ৭টার পর সহপাঠীর মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ জানানো ছিল পরিকল্পিত অবহেলাজনিত। পরে বাদী ও তার পরিবার হাসপাতালে আসলে মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এরপর বাদী দ্রুত লাশ চাইলে মুচলেকা রেখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন হয়। পরবর্তীতে নাইমুল আবরারের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা দৃশ্যমান হতে থাকে। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গত ২ নবেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এজাহারে আরও বলা হয়, বাদীর দৃঢ় বিশ^াস নাইমুল আবরারের মৃত্যু অপমৃত্যু নয়। বরং আসামিগণের চরম অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসায় অবহেলা, অযতœ, অমনোযোগী, গাফিলতি এবং অনবধানতার কারণে ঘটেছে- যা বাংলাদেশ দ-বিধির ৩০৪-এ ধারার অপরাধ।
×