ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী সীতাতলার মেলায় প্রচুর মাছ

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী সীতাতলার মেলায় প্রচুর মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৬ জানুয়ারি ॥ নওগাঁর আত্রাইয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী সীতাতলার মেলা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যা থেকে এ মেলা শুরু হয়েছে। ৩দিন চলার কথা থাকলেও এ মেলা প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিন থেকে শুরু হয়ে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। এই মেলায় বিশেষ করে বৌ ঝি’রা বেশি অংশগ্রহণ করেন। আর এ কারণেই এই মেলাকে বৌ মেলা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে স্থানীয়ভাবে। আত্রাই উপজেলার ভোঁ-পাড়া ইউনিয়নের জামগ্রাম মাঠে একটি প্রাচীন বিশাল বটবৃক্ষের তলায় এই মেলার আয়োজন করা হয়। যুগ যুগ থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই ঐতিহ্যবাহী সীতাতলার মেলা। স্থানীয়ভাবে প্রাচীনকাল থেকেই জনশ্রুতি রয়েছে যে, ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা দশরথের সত্যবাক্য পালন করতে পুত্র শ্রীরাম চন্দ্র তার পতœী সীতা দেবীকে জামগ্রামের এ মাঠে বনবাস দিয়েছিলেন। তখন এই এলাকা ছিল বিশাল বনে আবৃত। সীতা দেবী এই বটবৃক্ষের তলায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। এই গাছের ডাল ধরে সীতা দেবী জয় শ্রী শ্রী রাম, জয়শ্রী রাম বলে কাঁদছিলেন। গাছের ডালে সীতা দেবীর হাতের ছাপ ছিল বলে প্রবীণরা জানান। যে ডালটি পরবর্তীতে ঝড়ে ভেঙ্গে যায়। সেই কারণে এই মেলাকে সীতাতলার মেলা হিসেবে নামকরণ করা হয়। এখানে সেই প্রাচীন যুগের একটি ইদারা (কুয়া) স্মৃতি হিসেবে আজও বিদ্যমান। আর এ ইদারার (কুয়া) জলে নাকি সীতা দেবী ¯œান করতেন। তারই স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় পরবর্তীতে এই জামগ্রামে মেলা বসিয়ে বিশেষ করে পৌষ সংক্রান্তির দিনে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে এই স্থানটিকে ধর্মীয়ভাবে স্মরণ করে আসছেন। ইতিপূর্বে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এটি আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ মেলাতে এখন হিন্দু-মুসলিম সকলেই অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও মেলাটিকে ঘিরে এলাকায় এখন উৎসবমুখর হয়ে পড়ে। এলাকার বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে জামাই,আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব বেড়াতে আসে। পিঠা পুলি মিঠাইসহ রকমারি খাবারের আয়োজন করা হয়। বিবাহিত মেয়েদের নাইয়র আনা হয় এই মেলা উপলক্ষে। এই মেলায় প্রচুর মাছের আমদানি হয়ে থাকে। যেহেতু নদী এবং বিলাঞ্চল এটি সেহেতু নদী এবং বিভিন্ন বিল থেকে প্রচুর মাছ এই মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। জামগ্রাম এবং আশপাশের গ্রামের জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনাথী। তা ছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সব চেয়ে বড় মাছটি কিনে শ^শুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। মেলার প্রথম দিনে একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের ভীষণ জটলা। ৬/৭ কেজি ওজনের একটি চিতল মাছ। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় জামগ্রাম এলাকার জামাই আলীমুদ্দিন শেখ মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮হাজার ৪শ’ টাকা হেঁকেছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলে দর কষাকষি।
×