ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পূজার দিন সিটি নির্বাচন

আজ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচী

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

আজ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ এবার দেশজুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন সরস্বতী পূজার দিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রতিবাদে রাজপথে নামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুসারে আজ সকাল থেকেই সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ডাকসু নেতারা নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের ‘হাইকোর্ট’ দেখাবেন না। তাহলে আপনাদের সুপ্রীমকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ব। আগের দিনের ঘোষণা অনুসারে বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও করার উদ্দেশে যাওয়ার অভিমুখে রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় সব আবাসিক হল থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে শাহবাগ মোড় টানা আড়াই ঘণ্টা অবরোধ রেখে নতুন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন তারা। আগামী ৩০ জানুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার দিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশ নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড় অবরোধের কারণে বাংলামোটর থেকে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ ও টিএসসি থেকে শাহবাগমুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টানা আড়াইঘণ্টারও বেশি সময় শাহবাগ মোড় অবরোধ থাকায় শাহবাগের আশপাশ এলাকায় এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোন যান চলাচল করতে পারেনি। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা পড়েন দুর্ভোগে। আন্দোলনে যোগ দিয়ে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ। হাইকোর্টের উপর বন্দুক রেখে নির্দেশ দিয়ে আমাদের গায়ে আগুন ঢেলে দেবেন না। আপনারা (ইসি) নিজে তার উদ্যোগ নেন, আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। আমাদের হাইকোর্ট দেখালে আপনাদের সুপ্রীমকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ব। জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেন, একইদিনে সার্বজনীন উৎসব সরস্বতী পূজা এবং নির্বাচন কখনও হতে পারে না। কারণ শিক্ষার্থীরাসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে পূজা পালিত হয়। একই তারিখে যদি নির্বাচন হয় তাহলে উৎসবের আনন্দ হবে না, তাই আমরা চাই এ দিনে যেন নির্বাচন না হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের নির্বাচন, মানি না মানব না; জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো; ৩০ তারিখ নির্বাচন, মানি না মানব না; তুমি কে আমি কে, বাঙালী বাঙালী; জেগেছেরে জেগেছে, ঢাবি জেগেছে; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; পূজার দিনের নির্বাচন, মানি না মানব না; ৩০ তারিখের নির্বাচন মানি না, মানব না বলে স্লোগান দেন। এদিকে সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। কোন ষড়যন্ত্র বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই পরিকল্পিতভাবে পূজার দিনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পূজার দিনে নির্বাচন হতে পারে না। ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভিপি নুরুল হক এসব কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা সরকারের নীলনক্সা। বর্তমান নতজানু নির্বাচন কমিশন সরকারের কনসার্ন ছাড়া নিশ্চয়ই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। কোন ষড়যন্ত্র বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই পরিকল্পনা করে এ কাজটি করা হয়েছে। ভিপি নূর বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি দেশ। সরস্বতী পূজা সনাতন ধর্মের একটি বড় উৎসব। এই দিনে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে বা পিছিয়ে দেয়া উচিত। পিস্তল উঁচিয়ে আন্দোলনকারীদের হুমকি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেয়ায় আসিফ রশিদ খান মুন নামের এক আদম ব্যবসায়ীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের জন্য বারডেমের সামনের সড়কমুখেও বেরিকেড দেয়া ছিল। এ সময় একটি প্রাইভেটকার থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে এসে সাইড দিতে বলায় তার সঙ্গে তর্ক শুরু হয় জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী কপিল দেব বর্মণের। ওই ব্যক্তি পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করে কপিল দেব বর্মণ। পরে শিক্ষার্থীরা ওই ব্যক্তিকে মারধর করে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে হেলমেট পরিয়ে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। যদিও থানায় যাওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে, তার পিস্তলটি খোয়া গেছে। সেটি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। লোকটিকে কেউ কেউ বিদেশী বলছেন আবার কেউ বলছেন বাংলাদেশী। শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, পিস্তল উঁচিয়ে ধরা ব্যক্তি আদম ব্যবসায়ী। তার পিস্তল ও শর্টগান দুটি লাইসেন্স করা। গাড়িতে তিনি তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে ছিলেন তারা। বিরক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করতে গিয়েই কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তিনি পিস্তল উঁচিয়ে ধরেন।
×