ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২৫৮ জনকে দ-, ১৪৫ গাড়ি ডাম্পিং

বছরজুড়ে বিআরটিএর ১৭১১ মোবাইল কোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

বছরজুড়ে বিআরটিএর ১৭১১ মোবাইল কোর্ট

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর গণপরিহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত এক বছরে এক হাজার ৭১১ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিআরটিএ)। অভিযানে মোটরযান অধ্যাদেশ আইন-২০১৮ ও অন্যান্য আইনে দ-প্রাপ্ত হয়েছেন ২৫৮ জন। এই শহরের রাস্তায় হরহামেশা লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলেও বছরজুড়ে মাত্র ১৪৫ গাড়িকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। এক বছরে মোটা অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি ২০ হাজার ৩১৩ মামলা হয়েছে। তিন কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩০ টাকা জরিমানা আদায়েই কি পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথেষ্ট? এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কি বলছেন বিআরটিএসহ পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও নৌ সড়ক রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, শুধুমাত্র জরিমানা করে আইনভঙ্গের প্রবণতা থেকে চালকদের শোধরানো কঠিন। এজন্য নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বছরের পর বছর মাঠ পর্যায়ে বিআরটিএ অভিযান পরিচালনা করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। এতে ফলাফল খুব একটা সুখকর নয়। তাই দণ্ড কার্যকর করার কোন বিকল্প নেই। যত দ- বাড়ানো হবে ততো চালকদের মনে ভয় বাড়বে। অপরাধ কমে আসবে। সড়কে ফিরবে শৃঙ্খলা। তাছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণ খুবই দুর্বল। এ কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক মহাসড়কে বিশৃঙ্খলার চিত্র আমরা দেখতে চাই। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতিসহ পুলিশ ও বিআরটিএ বিভিন্ন পর্যায়ে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সচেতনতা বাড়বে। যার প্রভাব আমরা সড়কে দেখতে পাব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কিছু রুটিন ওয়ার্ক আছে। যা নিয়মিত করতে হয়। এরমধ্যে মোবাইল কোর্ট অন্যতম। এখন ঢাকায় ১১টি মোবাইল কোর্ট দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কম বেশি কোর্ট রাস্তায় থাকে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সবকটি উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি বলেন, মোটা অঙ্কের জরিমানা করেই পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরবে না। তবে সচেতনতা বাড়বে। অপরাধ প্রবণতা কমবে এমন আশা থেকেই আইন মেনে জরিমানা ও দণ্ড দেয়া হয়। তবে বিআরটিএ অভিযানে পরিবহন সেক্টরকে শৃঙ্খলায় আনা কঠিন। এজন্য সব পক্ষের সমান সহযোগিতা ও সচেতনতা জরুরী বলেও মনে করেন তিনি। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসের মধ্যে জুলাই-আগস্টে কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়নি। এক নবেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও বিআরটিএসহ পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিগত সমস্যা থাকায় তা ১৭ নবেম্বর থেকে কার্যকর শুরু হয়। যদিও আইনের বিশেষ কয়েকটি ধারা স্থগিত করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। পরিবহন মালিকদের আপত্তির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যদের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। দুই মাসের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট দেয়ার কথা। এরপর আইনের সব ধারা কার্যকর হবে, নাকি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। বছরজুড়ে মোবাইল কোর্ট বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৪৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৭৫০টি মামলা ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও ১৫ দণ্ড দেয়া হয়েছে। নবেম্বরে ৬১টি মোবাইল কোর্ট পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা ও ৪৪৬টি মামলা হয়েছে। অক্টোবরে ১৬৪টি মোবাইল কোর্ট এক হাজার ২৩৯টি মামলা করেছে। ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১৮ জনকে দণ্ড ও চারটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় এক হাজার ৩১৩টি মামলা, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা, ২১ জনকে দণ্ড ও চারটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। জুলাই-আগস্টে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বন্ধ থাকে। জুন মাসে ১৭৮টি মোবাইল কোর্টে এক হাজার ৬৩৯টি মামলা হয়, চার লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা আদায় ও ১২ জনকে দ-সহ ২২টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠায়। মে মাসে ২২৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় দুই হাজার ৬৮১টি মামলা, ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বেশি জরিমানা ও ৪৩ জনকে দণ্ড, ৪৬টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। এপ্রিলে ২০৭টি মোবাইল কোর্ট তিন হাজার ৯৪৮টি মামলা দায়ের করেছে। ৬১ লাখের বেশি জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি ৩১ জনকে দণ্ড ও ৫২টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠায়। ১৭৮টি কোর্ট পরিচালনা হয় মার্চ মাস জুড়ে চলা অভিযানে। এতে দুই হাজার ৪২১টি মামলায় ৪৭ লাখ টাকার বেশি জরিমানা, ৫৭ জনকে দণ্ড ও চারটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। ১৭২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে। এতে দুই হাজার ৫০৯টি মামলা, ৪৩ লাখ ২২ হাজার টাকার বেশি জরিমানা ও ৪৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- দেয়া হয়। আর বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে ২৪১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তিন হাজার ৩৬৭টি মামলা ৫৪ লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায়, ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- ও আটটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।
×