ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাসেলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় রাজশাহীর

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

রাসেলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় রাজশাহীর

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ফাইনালে উঠে গেছে রাজশাহী রয়্যালস। আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটিং তা-বে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বুধবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ২ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে রাজশাহী। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উত্তেজনাকর ম্যাচটিতে রাসেলের ২২ বলে করা অপরাজিত ৫৪ রানের অসাধারণ ইনিংসে ফাইনালে খুলনা টাইগার্সের প্রতিপক্ষ হলো রাজশাহী। যে দল জিতবে, তারাই ফাইনালে উঠবে। ‘সেমিফাইনাল’ হয়ে ওঠা ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী রয়্যালস। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আগে ব্যাটিং করার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি। ক্রিস গেইল ব্যাটিং ঝড় তুললেন। ২৪ বলেই ৬০ রান করলেন। তবে শেষপর্যন্ত চট্টগ্রামের রান ১৬৪ রানের বেশি হলো না। গেইলসহ আরও দুই ব্যাটসম্যান শুধু দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৩৩ ও আসেলা গুনারত্মে ৩১ রান করেন। পাকিস্তানের দুই বোলার মোহাম্মদ নাওয়াজ ও মোহাম্মদ ইরফান ২ উইকেট করে শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে রাজশাহীকে জেতান রাসেল। শুরুতে ইরফান শুকুরের (৪৫) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর ২২ বলে ২ চার ও ৭ ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রান করা রাসেল এমনই ব্যাটিং ঝড় তুলেন, তাতে ৪ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারে ১৬৫ রান করে ম্যাচ জিতে রাজশাহী। চট্টগ্রামকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনালেও উঠে যায় রাজশাহী। রাজশাহী শুরুতেই বিপদে পড়ে। দলের ১৪ রানেই দুই ওপেনার আফিফ হোসেন ধ্রুব (২) ও লিটন কুমার দাস (৬) আউট হয়ে যান। ৬ ওভারে ৪০ রান করে রাজশাহী। রানের গতি দুর্বল থাকে। আবার অলক কাপালীও (৯) আউট হয়ে যান। এরপর ইরফান শুকুর ও শোয়েব মালিক মিলে বিপদ দূর করার চেষ্টা করতে থাকেন। ১০ ওভারে গিয়ে ৬৪ রান করে রাজশাহী। দলের যখন ৬৮ রান হয়, ৪০ রানে থাকা ইরফান ‘রিভিউ’ নিয়ে এলবিডব্লিউ হওয়া থেকে বাঁচেন। দুইজন টিকে থাকেন। কিন্তু রানের গতি কম থাকে। টানা চার ওভার তো কোন বাউন্ডারিই মারতে পারেননি ইরফান ও মালিক। এভাবে খেললে কী আর জেতা সম্ভব? দলের ৮০ রানে গিয়ে মালিক (১৪) আউটও হয়ে যান। রাসেলের মারমুখি ব্যাটিং ছাড়া ম্যাচ বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাসেল ব্যাটিংয়ে নামার পর ইরফানও (৪৫) সাজঘরে ফিরেন। রাসেলের ছক্কা মারার মধ্য দিয়ে টানা ৩৭ বল পর গিয়ে বাউন্ডারির দেখা মিলে। রাসেল ধামাকা শুরু করেন। দলও ১৬তম ওভারে ১০০ রানে যায়। রুবেল হোসেনের করা এই ওভারেই দুই ছক্কা ও এক চারে ১৯ রান নেয়া হয়ে যায়। শেষ ৪ ওভারে ২৪ বলে রাজশাহীর জিততে ৫৭ রান লাগে। রাসেলের সঙ্গে মোহাম্মদ নাওয়াজও যেভাবে মারমুখী ব্যাটিং করা শুরু করেন, তাতে আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। তবে দলের ১১৬ রানে লং অনে ইমরুল কায়েস যেভাবে শূন্যে লাফিয়ে নাওয়াজের (১৪) ক্যাচটি ধরেন, তাতে খুলনা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ফরহাদ রেজা (৬) ব্যাট হাতে নেমেই ছক্কা হাঁকিয়ে আউট হয়ে যান। রায়াদ এমরিট নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে দুই উইকেট তুলে নিয়ে রাজশাহীর জয়ের সম্ভাবনায় আঘাত হানেন। তবে রাসেল তখনও উইকেটে থাকেন। আর তাতে রাজশাহীর জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়নি। ১৮ বলে জিততে ৩৭ রান লাগে। এমন মুহূর্তে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে আউট করে দেন রুবেল। তাতে ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায় রাজশাহীর। এবার আসল বিপদ দেখা দেয়। রুবেল বল করতে এসে ১৮তম ওভারটিতে ৬ রান দেন। ওভারের শেষ বলে রাসেল ছক্কা না হাঁকালে মেডেন ওভারই হয়ে যেত। ১২ বলে জিততে তখন ৩১ রান লাগে। মেহেদি হাসান রানার ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান রাসেল। পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকান। খেলায় চরম উত্তেজনা তৈরি করে দেন রাসেল। চতুর্থ বলে আবার ছক্কা হাঁকান রাসেল। পঞ্চম বলে এক রান নেন রাসেল। ষষ্ঠ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন আবু জায়েদ রাহী। ওভারটিতে ২৩ রান আসে। তাতে করে ছয় বলে জিততে ৮ রানের দরকার থাকে। গুনারত্মে বোলিং করতে এসে প্রথম বলে কোন রান দেননি। দ্বিতীয় বলেও কোন রান হয়নি। ওয়াইড দিয়ে বসেন গুনারত্মে। তৃতীয় বলটিতে ডি ফরওয়ার্ড অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন রাসেল। আবার ‘নো’ হয়। তাতে করে ম্যাচ জিতেও যায় রাজশাহী। রাসেল একাই ২২ বলে ২ চার ও ৭ ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রান করে দলকে ১৬৫ রানে নিয়ে গিয়ে ম্যাচ জেতান। ফাইনালেও ওঠান। চট্টগ্রামকে শুরু থেকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন গেইল। দ্বিতীয় ওভার থেকেই ক্রিস গেইল যে ধামাকা শুরু করে দেন, তাতে মনে হয় ‘দিনটি’ তারই হতে চলেছে। ফরহাদ রেজার করা ওভারটিতে কাভার দিয়ে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান। আর ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কাও মারেন। জিয়াউর রহমান (৬) দ্রুতই বোল্ড হয়ে গেলেও গেইল তার ব্যাটিং ঝড় তোলার ইঙ্গিত ভালভাবেই দেন। শোয়েব মালিকের করা প্রথম ওভারেই যেমন সুইপের পর সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকান গেইল। আবার লং অফ দিয়ে ছক্কাও হাঁকান। এক ওভারেই ১৮ রান নিয়ে ফেলেন। গেইল দ্রুত স্কোরবোর্ডে রান যুক্ত করতে থাকলেও বাকিরা ব্যর্থ হতে থাকেন। জিয়ার পর যেমন ইমরুল কায়েসও (৫) ব্যর্থ হন। রানের খাতা খোলার আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আউট হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ‘রিভিউ’ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই ৫৮ রান হয়ে যায় চট্টগ্রামের। গেইলতো ২১ বলেই হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। মোহাম্মদ নাওয়াজের করা নবম ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেন গেইল। ৯ ওভারেই ৯১ রান হয়ে যায় চট্টগ্রামের। আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা দশম ওভারের প্রথম বলেও ছক্কা হাঁকান। দ্বিতীয় বলেই বিপদ আসে। আফিফ নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই চট্টগ্রামকে ধাক্কা দেন। গেইলকে বোল্ড করে দেন। আউট হওয়ার আগেই অবশ্য যা করার গেইল করে যান। দলের ৯৭ রানে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৬০ রান করে বোল্ড হন গেইল। গেইল আউটের পর মনে হয়, এবার বুঝি রানের গতি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ টানা দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ১০০ রানের ওপরে নিয়ে যান। ১০ ওভারেই ১১১ রান করে ফেলে চট্টগ্রাম। বোঝাই যায়, অনেক বড় স্কোর হতে চলেছে। ১৮০ রানের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যখন এমন ভাবনা হয়, তখনই নাওয়াজের লো বলটিতে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ (১৮ বলে ৩৩ রান)। তখন দলের উপর চাপ পড়ে। নুরুল হাসান সোহান ব্যাট হাতে নামেন আর সাজঘরে ফিরেন। তখন বিপদেই পড়ে যায় চট্টগ্রাম। যেখানে ৯৬ রান পর্যন্ত ২ উইকেট হারায় চট্টগ্রাম, দ্রুত রানও তুলে। সেখানে ৯৭ রান থেকে ১১৫ রানের মধ্যে ১৮ রানেই নেই ৩ উইকেট! রানরেট ঠিকই থাকে। কিন্তু ৫ উইকেট পড়ে যায়। তাতে বড় স্কোর গড়ার যে সম্ভাবনা, তা যেন ভেস্তে যেতে শুরু হয়। দলের ১২৪ রানে গিয়ে যখন মিড উইকেটে লিটন কুমার দাসের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন চাডউইক ওয়ালটন (৫), তখন বিপত্তিই নেমে আসে। রায়াদ এমরিট (৩) নামেন আর রান আউট হয়ে যান। ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ায় অলআউট হওয়ারই সম্ভাবনা তৈরি হয়। শ্রীলঙ্কার আসেলা গুনারত্মে (২৫ বলে ৩১ রান) শেষদিকে যদি ঝলক না দেখাতেন, তাহলে ১৬৪ রানও হত না। যেখানে চট্টগ্রাম ১০ ওভারেই ১১১ রান করে ফেলে, সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলে। ইনিংসের শুরুটা এত জাঁকজমকপূর্ণ হয়। কিন্তু ইনিংসের শেষটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে করে বড় স্কোর আর গড়া যায়নি। গেইল ঝড়ের পরও অল্প রানেই আটকে থাকে চট্টগ্রাম। এই রানেও খেলা জমে ওঠে। শেষপর্যন্ত রাসেল ঝড়ে ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠে রাজশাহী। স্কোর ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-রাজশাহী রয়্যালস ম্যাচ-মিরপুর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস ১৬৪/৯; ২০ ওভার; গেইল ৬০, মাহমুদুল্লাহ ৩৩, গুনারত্মে ৩১; নাওয়াজ ২/১৩, ইরফান ২/১৬। রাজশাহী রয়্যালস ইনিংস ১৬৫/৮; ১৯.২ ওভার; রাসেল ৫৪*, ইরফান ৪৫, নাওয়াজ ১৪; রুবেল ২/৩২। ফল ॥ রাজশাহী রয়্যালস ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী রয়্যালস)।
×