ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাক লাগানো পরিবর্তন আসছে শাহজালাল বিমান ও পর্যটনে

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

তাক লাগানো পরিবর্তন আসছে শাহজালাল বিমান ও পর্যটনে

আজাদ সুলায়মান ॥ সেবা, সৌন্দর্য ও নান্দনিকতায় সবার শীর্ষে থাকার লক্ষ্য নিয়ে মুজিববর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। তাক লাগানো পরিবর্তন আনা হচ্ছে শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে। বিমানের টিকেটে বছরব্যাপী দেয়া হবে বিশেষ ছাড়। পর্যটনের হোটেল-মোটেলগুলোতেও দেয়া হবে বিশেষ সেবা। আন্তর্জাতিক মেলা করা হবে বান্দরবানে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও সোনারগাঁওয়ে থাকছে বিশেষ ডিসকাউন্ট। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও পর্যটন কর্পোরেশন। মুজিববর্ষ পালনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে নজর কাড়া পদক্ষেপ। অপরূপ রূপে সাজানো হচ্ছে গোটা শাহজালালের ভেতর ও বাহির। আলোকবর্তিকায় দ্যূতি ছড়াবে রাতের বিমানবন্দর। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করতে পারাটাও তো একটা সৌভাগ্যের বিষয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মুজিববর্ষ পালনে আমাদের সবার মাঝে আলাদা অনুভূতি কাজ করছে। সবার শীর্ষে থাকার মানসিকতা নিয়েই সিভিল এভিয়েশন এ কর্মসূচীকে সফল করার জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একজন যাত্রী বিদেশ থেকে নেমেই যাতে বুঝতে পারেন এটাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ। এখন চলছে তার জন্মশতবার্ষিকী। উল্লেখ্য, জাতির জনকের জন্মদিন আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। মুজিববর্ষের সঙ্গে সঙ্গে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তীও পালন করা হবে। সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা গেছে, চলতি মাস থেকে মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নান্দনিকতার শীর্ষে রাখার টার্গেট নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। সবার চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য ইতোমধ্যে বৈঠকের পর বৈঠক করছেন- বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান, এয়ার কমোডর খালিদ হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ উল আহসান। মুজিববর্ষের এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে এখন তা বাস্তবায়নে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- শাহজালাল বিমানবন্দরের সমস্ত বিলবোর্ডের মুজিববর্ষের থিম সংযোজন, বঙ্গবন্ধু কর্নার, ম্যুরাল ও মুক্তিযুদ্ধের সচিত্র। থাকছে যাত্রীর সেবার নানা উদ্যোগ। গোটা বিমানবন্দরে সাজানো হচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্যের ছোঁয়ায়। জানা গেছে, বিমানবন্দরের আগমনী ও বহির্গমন বোর্ডিং ব্রিজ এরিয়ায় থাকা সমস্ত বিজ্ঞাপন চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনার জন্য গত সম্প্রতি সকল বিলবোর্ড ব্যবসায়ীকে ডেকে জরুরী বৈঠকে বসেন মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর খালিদ হোসেন। তিনি তাদের মুজিববর্ষের থিম ঠিক রেখে সমস্ত বিজ্ঞাপনী ম্যাটার সম্পাদনা করার নির্দেশ দেন। আটটি বোর্র্ডিং ব্রিজের ঠিক বিপরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন দুর্লভ ছবি টানানোর পাশাপাশি ইতিহাস ঐতিহ্য প্রদর্শনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সম্পর্কে এয়ার কমোডর মোঃ খালিদ হোসেন বলেন, ফ্লাইট থেকে নেমেই একজন যাত্রী হোক তিনি দেশী-বিদেশী, যাতে বুঝতে পারেন, সময়টা এখন মুজিববর্ষের। বাংলা, ইংরেজী ও আরবী ভাষায় থাকবে নানান বার্তা। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে আসার পর পাবেন বিশেষ সেবা। একই সময়ে যারা বিদেশ যাবেন তারা ইমিগ্রেশন পেরিয়ে অপেক্ষার সময়টুকু বসতে পারবেন বঙ্গবন্ধু কর্নারে। যেখানে থাকবে তার জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বহুমাত্রিক বইপুস্তক, জার্নাল ও অডিও-ভিডিও। তাদের দেয়া হবে চা-কপি পানের বিশেষ সুবিধা। প্রচারের পাশাপাশি সেবার আতিথেয়তায় যাত্রীরা যাতে সন্তুষ্ট থাকে সেটাই হবে মুজিববর্ষের অন্যতম লক্ষ্য। এদিকে বিমানবন্দরে প্রবেশ মুখেই নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও মুিক্তযুদ্ধের বিশেষ পরিচিত দৃশ্যের সমাহার। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দর বাগানের দুপাশে বিশালাকার ভাস্কর্য তৈরি কাজ চলছে। প্রায় ত্রিশ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের একটি প্রতিচিত্র ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও খ্যাতনামা শিল্পী মৃণাল হকের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে ম্যুরাল। আগামী ১৭ মার্চের আগেই এটি যে কোন মূল্যে উদ্বোধন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী। বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণের কাজটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যাতে বিন্দুুমাত্র ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে, কোন ধরনের সমালোচনার সুযোগ যাতে কেউ না পায় সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক ও মনোযোগে চলছে এ কাজ। জানা গেছে, বিমানবন্দরের প্রবেশ মুখে ও ভেতরের বিউটিফিকেশনের জন্যও চাওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সহযোগিতা। মুজিববর্ষকে ফুটিয়ে তোলার নতুন নতুন আইডিয়া সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করার কাজ চলছে। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এ বিষয়টির দেখভাল করছেন। এ সম্পর্কে বিজ্ঞাপনী সংস্থা সমকালীন প্রচারণীর স্বত্বাধিকারী শহীদ উল্লাহ পাটওয়ারী বলেন, বিমানবন্দরে যারাই এতদিন ধরে সততা দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে এ জাতীয় কাজ করছেন, তাদের মুজিববর্ষে অংশীদারিত্বের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্তে আমরা সবাই আনন্দিত। এমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এমন মহান নেতার জন্মশতবার্র্ষিকীতে বিন্দুুমাত্র কাজও করার সুযোগ যদি পাই সেটা হবে অনেক গৌরবের। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের প্রডাক্টের ওপর মুজিববর্ষের থিম তৈরি শুরু করেছি। সেটা অনুমোদনের পর সংযোজন করব। পর্যটনের বিশেষ চমক একইভাবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশানও বছরব্যাপী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে মুজিববর্ষ পালনে। এতে থাকছে বিশেষ চমক। পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রামচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পর্যটনের পক্ষ থেকে তৈরি করা হবে ১০০ পাউন্ড ওজনের বিশেষ কেক, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাটবেন। বিপিসি সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। এ ছাড়া বছরব্যাপী দেশের প্রতিটি হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের জন্য থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে পছন্দের মেনু সংবলিত খাবার। দেশের শীর্ষ আলোচকদের অংশগ্রহণে করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে পর্যটন ভাবনার ওপর বিশেষ সেমিনার। কক্সবাজারে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আর বিশেষ সাজসজ্জায় সজ্জিত হবে গোটা পর্যটনের প্রতিটি কেন্দ্র। বিমান দেবে ছাড় ও সেবা বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সিনিয়র সচিব মহিবুল হকের সার্বিক দিক নির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে কর্মপরিকল্পনা। টিকেটে ছাড়, বিশেষ সেবাপক্ষ পালন, বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনসহ নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে আটটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- এ বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতিমাসের ১৭ তারিখে ১৭টি রুটের টিকেটে ১৭ জন যাত্রীকে ১৭ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে। তবে এ সুবিধা শুধু বিমানের ওয়েবসাইটে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে পাওয়া যাবে। কর্মসূচীর মধ্যে আরও রয়েছে- মুজিববর্ষের লোগো ও ছবি বিমানের প্রতিটি টিকেট ফোল্ডারে ও বোর্ডিং পাসে থাকবে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ সেবাপক্ষ পালন করা হবে। এছাড়া ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্টে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন করা হবে। এর বাইরে সরকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেশ কিছু কর্মসূচী পালন করা হবে। ২০২০ সালের ১৭ নবেম্বর বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিশেষভাবে তৈরি লিফলেট, ফ্লাওয়ার উড়োজাহাজের যাত্রীদের প্রতি সিটের পেছনের পকেটে রাখা হবে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতিমাসের ১৭ তারিখে বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের মুজিববর্ষের লোগো-সংবলিত উপহার দেয়া হবে। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ বুকলেট মুদ্রণ করা হবে। মুজিববর্ষে দেশের প্রধান পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের প্রবেশমুখেই বিশাল বিলবোর্ডে প্রদর্শনীতে প্রচার করা হবে বৃঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। হোটেলের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান আবদুল আউয়াল জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এ ছাড়াও বিশেষ কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সেবার উৎকর্ষতায় আকর্ষণীয় প্যাকেজ।
×