ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে চীনের প্রতি প্রেসিডেন্ট সাই

তাইওয়ানকে সম্মান করা উচিত

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

তাইওয়ানকে সম্মান করা উচিত

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইন ওয়েন বলেছেন, চীনকে প্রকৃত বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া দরকার এবং দেশটির তাইওয়ানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। এই নারী প্রেসিডেন্ট বেজিংয়ের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। শনিবারের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়ে তাইওয়ানের দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সাই ইন ওয়েন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে চীনের পক্ষ থেকে অব্যাহত হুমকির বিষয়গুলো তিনি জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এতে তার পক্ষে সমর্থন বাড়ে। খবর বিবিসি ও ফরচুনের। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখ- দাবি করে আসছে। দলটি মনে করে, তাইওয়ান দ্বীপকে প্রয়োজনে জোরপূর্বক চীনের সঙ্গে একীভূত করা উচিত। বুধবার নির্বাচন পরবর্তী বিবিসির সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে ৬৩ বছর বয়সী সাই ইন ওয়েন, স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে এখন আর প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি এখন আর সমঝোতার পর্যায়ে নেই। স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সাই ইন ওয়েন বলেন, আমাদের এখন আর স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দরকার নেই। কেননা আমরা ইতোমধ্যে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত। কারণ আমরা আমাদের রিপাবলিক অব চায়না, তাইওয়ান-হিসেবে জানি। এদিকে সাই ইন ওয়েনের এই ধরনের বক্তব্য চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। কারণ বেজিং তাইওয়ানের ক্ষেত্রে ‘একক চীন নীতি’ গ্রহণ করতে উদগ্রীব। সাই ইন ওয়েনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কুয়োমিন্টাং পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট হান কো ইয়োর সময় থেকেই বেজিং তাইওয়ানের ক্ষেত্রে একক চীন নীতি গ্রহণের চেষ্টা করে আসছে। দলটি চীনা গৃহযুদ্ধের সময় জাতীয়তাবাদী শক্তিতে পরাজিত করে তাইওয়ানকে আলাদা করে। কিন্তু এরপর থেকে তাইওয়ানকে বৃহৎ চীনের অংশ মনে করে বেজিং। চীন তাইওয়ানের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পূবশর্ত হিসেবে দেশটির কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা দাবি করেছিল। অবশ্য তাইওয়ান বরাবরই চীনের নিয়ন্ত্রণ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। সাই ইন ওয়েনের এই জয়ে ফের প্রমাণিত হয় তাইওয়ানের জনগণ একক চীন নীতিতে আবদ্ধ হতে অনাগ্রহী। সাক্ষাতকারে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমানে মানুষের ধারণা পাল্টেছে। তারা আর কোন দেশের উদ্দেশ্য সাধন করতে চায় না। তিনি বলেন, পরিস্থিতি আসলেই বদলে গেছে। বিষয়টি চীনের বোঝা উচিত। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে আমরা চীনের অব্যাহত হুমকি প্রত্যক্ষ করছি। দেশটি তাইওয়ানের চারপাশে রণতরী ও জঙ্গী বিমান দিয়ে ঘিরে রেখেছে। হংকংয়ে চলমান চীনবিরোধী বিক্ষোভের উদাহরণ টেনে সাই ইন ওয়েন বলেন, আপনারা দেখুন হংকংয়ে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে। ওখানকার মানুষ এখন সজাগ হয়েছে। তারা চীনের হুমকি বুঝতে পেরেছে। হংকংয়ের জনতা বুঝতে পেরেছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের হুমকি আরও বাড়তে পারে। তাইওয়ানের তরুণ সমাজ বিষয়টি বোঝার পর তার প্রতি সমর্থন দিয়েছে বলে মনে করেন সাই। চীন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আলাদা আলাদা সত্তা রয়েছে। কিন্তু এর প্রতি যখন কেউ অপর কোন সত্তা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে-তখন মানুষ জেগে উঠবে। বিষয়টি জনগণ গ্রহণ করতে চাইবে না। এখানে (তাইওয়ানে) সফল ও শক্তিশালী গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। আমাদের অর্থনীতির ভিত মজবুত। তাই আমরা চীনের কাছ থেকে সম্মান আশা করি। অবশ্য সাই ইন ওয়েনের কঠোর সমালোচকরা এই নারী নেতার পদক্ষেপসমূহকে অপ্রয়াজনীয় ও উস্কানিমূলক হিসেবে সমালোচনা করে। এতে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাদের ধারণা। এসবের উত্তরে সাই ইন ওয়েন বলেন, আমি বরাবর ধৈর্য ধারণের পক্ষে। কারণেই আমি এখনও তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে বিরত রয়েছি। তাই তিনি সবকিছু পর্যায়ক্রমে করার পক্ষে। চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন চালালে দেশটিকে এর চড়া মাসুল গুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাই। শনিবার প্রকাশিত নির্বাচনের ফলাফলে দ্য ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির এ নেতা জয় পান। চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, সাই ইং ওয়েন মোট প্রদত্ত ভোটের ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চীনপন্থী নেতা হান কুয়ো ও। তিনি ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পান। ওয়েনের প্রাপ্ত ভোট ৮১ লাখ ৭০ হাজার। নির্বাচনে জয়লাভের পর দেয়া বক্তৃতায় সাই ওয়েন বলেন, চীনের উচিত এ দ্বীপটিকে জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার চিন্তা থেকে সরে আসা। তিনি তার ওপর আস্থা রাখার জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানান।
×