ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

সেরেনার সুসময়ে ফেরা

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

সেরেনার সুসময়ে ফেরা

সেরেনা উইলিয়ামসের ব্যাপারে নতুন কিছুই বলার নেই। কোর্টের অসাধারণ পারফর্মেন্সই অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তাকে। তবে মাঝের সময়টাতে কিছুটা নিঃষ্প্রভ ছিলেন তিনি। বিশেষ করে ২০১৭ সাল থেকে সন্তান জন্মের পর অনেকটা সময় সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। গত মৌসুমে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছালেও তীরে গিয়ে তরী ডুবিয়েছেন আমেরিকান কিংবদন্তি। কিন্তু হাল ছাড়েননি ২৩ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। নতুন মৌসুমের শুরুতেই দেখা গেছে দুর্দান্ত সেরেনা উইলিয়ামসকে। ২০২০ সালের প্রথম টুর্নামেন্ট অকল্যান্ড ক্ল্যাসিকে অসাধারণ পারফর্ম করে শিরোপা জয়ের হাসিও হেসেছেন তিনি। রবিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি ৬-৩ এবং ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন স্বদেশী জেসিকা পেগুলাকে। সেইসঙ্গে নতুন বছরের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। দীর্ঘ তিন বছর পর এটাই সেরেনার প্রথম শিরোপা। শুধু তাই নয়, মা হওয়ার পরও প্রথম কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। ৩৮ বছর বয়সী সেরেনা উইলিয়ামসের এটা ৭৩তম ডব্লিউটিএ শিরোপা। এর আগে ২০১৭ সালে সর্বশেষ মহিলা এককের কোন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সেরেনা। সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাধ্যমে ওপেনযুগে সর্বোচ্চ ২৩ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ডও গড়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে ৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতে গোটা টেনিস দুনিয়াকেই বাজিমাত করেছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। সন্তান জন্মের পর গত মৌসুমে আবারও টেনিস কোর্টে ফেরেন সেরেনা উইলিয়ামস। কিন্তু শিরোপার দেখা পাননি এই সময়ে। নতুন মৌসুমেই দেখা যায় সেরেনার নতুন উদ্যম। অকল্যান্ড ক্ল্যাসিকের শুরু থেকেই দাপুটে পারফর্ম করেন তিনি। একক এবং ডাবলসেও ফাইনালে জায়গা করে নেন সেরেনা উইলিয়ামস। দ্বৈতে হেরে গেলেও মহিলা এককে দাপট দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন বিশ্ব টেনিসের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা। টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর অকল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। দীর্ঘ সময় পর শিরোপার স্বাদ পেয়ে রোমাঞ্চিত সেরেনা। নিউজিল্যান্ডে মেয়েকে নিয়েই শিরোপা উচ্ছ্বাস করেন আমেরিকান তারকা। এই টুর্নামেন্টে এবার দাপট দেখিয়েছে আমেরিকানরা। কেবল সেরেনাই খেলেছেন তার তিন স্বদেশী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। তারা হলেন, ক্রিস্টিনা ম্যাকহেল, এ্যামান্ডা এ্যানিসিমোভা এবং জেসিকা পেগুলা। সেরেনার সুযোগ ছিল দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। একদিনে দুই শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা হলো না আমেরিকান তারকার। দীর্ঘদিন পর দ্বৈতে জুটি বেঁধে খেলছিলেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকির সঙ্গে। অসাধারণ খেলে ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছিলেন দুই বান্ধবী। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে পেরে উঠতে পারেননি তারা। অবাছাই আসিয়া মুহাম্মদ এবং টেইলর টাউনসেন্ডের কাছে হেরে যান তিনি। এদিন তারা ৬-৪ এবং ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন সাবেক দুই শীর্ষ তারকাকে। সেরেনার মতো শিরোপা জিতে নতুন বছর শুরু করেছেন ক্যারোলিনা পিসকোভাও। ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়েই নতুন বছরের প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ পান চেক প্রজাতন্ত্রের এই তারকা খেলোয়াড়। ফাইনালে তিনি ৬-৪, ৪-৬ এবং ৭-৫ সেটে পরাজিত করেন ম্যাডিসন কেইসকে। সেই সঙ্গে ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টের তৃতীয় শিরোপা জেতেন। যা তার ক্যারিয়ারের ১৬তম ডব্লিউটিএ ট্রফি। ব্রিসবেনের ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পান ম্যাডিসন কেইসকে। এখানেও লড়াই চলে হাড্ডাহাড্ডি। প্রথম সেটে পিসকোভাকে হারিয়ে দেন কেইস। কিন্তু পরের দুই সেটেই জয় তুলে নেন পিসকোভা। যার ফলে ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টে টানা চার ম্যাচ জিতে বছরের প্রথম শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন চেক তারকা। শেষ দুই ম্যাচে নাওমি ওসাকা এবং ম্যাডিসন কেইসের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা ছিল খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তা স্বীকার করে নিয়েছেন পিসকোভাও। শিরোপা জিতে নতুন বছর শুরু। স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে ক্যারোলিনা পিসকোভার। এ প্রসঙ্গে চেক তারকা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা আপনাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। অন্তত আপনার অবস্থান কোন পর্যায়ে আছে সেটা জানতে পারবেন। আমি মনে করি, বছরটা দুর্দান্ত শুরু হয়েছে আমার। কেননা, ব্রিসবেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন মৌসুম শুরু করাটা মোটেও সহজ ব্যাপার না। বিশেষ করে এই টুর্নামেন্টের শেষ দুই ম্যাচে নাওমি ওসাকা এবং ম্যাডিসন কেইসকে হারানোটা ছিল খুব কঠিন কাজ।’ সেরেনা-পিসকোভার শুরুটা দারুণ হলেও হতাশা দিয়ে নতুন বছরের সূচনা করেছেন বেশিরভাগ তারকাই। যাদের মধ্যে রয়েছে মারিয়া শারাপোভা, এ্যাঞ্জেলিক কারবার, পেত্রা কেভিতোভা, এ্যাশলে বার্টি, এলিনা সিতলিনা কিংবা নাওমি ওসাকার নাম। রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল শারাপোভা দারুণ আশা নিয়ে শুরু করেছিলেন নতুন বছর। কিন্তু ব্রিসবেনে রাউন্ড অব ৩২ থেকেই ছিটকে যান তিনি। আমেরিকার জেনিফার ব্র্যাডির কাছে হেরে ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশায় ডুবান পাঁচ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। এই ব্র্যাডি হতাশ করেছেন এ্যাশলে বার্টিকেও। বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তারকাকে শেষ ষোলোতে হারিয়ে দেন তিনি। তাও আবার সরাসরি সেটে। ব্রিসবেনে এই ব্র্যাডির জয়রথ থামান পেত্রা কেভিতোভা। কোয়ার্টার ফাইনালে তাকে হারিয়ে দেন চেক তারকা। কিন্তু কেভিতোভাও শেষের হাসিটা হাসতে পারেননি। বরং মেডিসন কেইসকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যান। জার্মান তারকাকে রাউন্ড অব বত্রিশ থেকে বিদায় করেন সামান্থা স্টোসার। একই গ্রুপ থেকে ইউক্রেনের এলিনা সিতলিনাকে হারিয়ে দেন ড্যানিয়েল কোলিন্স। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। মেলবোর্নের এই টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওসাকা। জাপানি তারকা ব্রিসবেনের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছেন ক্যারোলিনা পিসকোভার কাছে হেরে।
×