ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ধোনি- আর কত!

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

ধোনি- আর কত!

ক্রিকেট কেবলই সফলদের জয়গান করে। আজ খারাপ করলে গতকাল কী করেছেন তার মূল্য নেই। এটা বাস্তবতা, এটাই নিয়তি। নইলে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো চলমান কিংবদন্তিকে ঘিরে এত বিতর্ক তৈরি হয়? যার হাত ধরে ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেই বাজিমাত করেছিল ভারত, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১১ সালে পুনরুদ্ধার করেছিল ওয়ানডের শিরোপা। তিনি কেবল ভারতেরই নন, বিশ্বক্রিকেটের বড় নাম। ক্রিস গেইল আর মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর নিয়ে যতটা না আলোচনা, ধোনির ক্ষেত্রে সেটা ঢের বেশি। কারণ দেশটা ভারত। ২০১৯ বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই তাই প্রশ্নটা শুনতে হয়েছে ধোনিকে; সেটি এখন রীতিমতো স্লোগানে রূপ নিয়েছে! সংবাদ মাধ্যম, সাবেক তারকা ক্রিকেটার, বড় বড় বিশ্লেষক, সবাই কথা বলছেন, কেউ বাদ নেই। নতুন ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলিও দায়িত্ব নেয়ার পরদিন বলেছিলেন, ধোনি নিজেই ভাল বোঝেন, কখন শেষ টানতে হবে। তবে প্রধাণ কোচ রবি শাস্ত্রীর এখন যা বক্তব্য, তাতে যেকোন দিন অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন ধোনি! বয়স ৩৯ ছুঁই ছুঁই। সময়টা যে শেষ হয়ে এসেছে, পরিষ্কার সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন শাস্ত্রী। বর্তমান প্রধান কোচের ইঙ্গিত ঘোষণাটা হয়ত শীঘ্রই আসছে। এ বিষয়ে ধোনির সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। শাস্ত্রী বলেন, ‘আমি ধোনির সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে শুধু আমরা দু’জনই ছিলাম। সে তার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেছে, খুব দ্রুতই সম্ভবত ওয়ানডেকেও বিদায় বলবে। মনে হচ্ছে, ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেবে সে। আর মানুষেরও তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত। কেননা দীর্ঘদিন ধরে সে টানা সব ফরমেটে খেলেছে।’ ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের চলমান কিংবদন্তি। তার নেতৃত্বে ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জিতে মাত করেছিল দেশটি। এরপর ২০১১ সালে পুনরুদ্ধার করেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি। এমন একজনকে কি তবে মাঠের বাইরে থেকে নীরবে বিদায় বলতে হবে? ‘এই বয়সে সম্ভবত সে টি২০ ক্রিকেটটাই খেলতে চায়। তার মানে তাকে আবারও খেলায় ফিরতে হবে, ফিরতে হবে আগের অবস্থায়। সে আইপিএলে খেলবে, দেখা যাক ওর শরীর কেমন সায় দেয়।’ শাস্ত্রী যোগ করেন, ‘যদি সে টি২০ ক্রিকেটটা ধরে রাখতে চায়, তবে অবশ্যই আইপিএলে খেলতে হবে। আমি ধোনি সম্পর্কে একটা বিষয় জানি যে, সে নিজেকে দলে বোঝা হিসেবে দেখতে চায় না। তবে যদি আইপিএলে দুর্দান্ত কিছু করে...।’ প্রায় পাঁচ বছর আগে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ধোনি বিশ্বকাপ খেলে অবসরে যাচ্ছেন, এমন গুঞ্জন ছিল। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর আর জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি তাকে। বিশ্বকাপের পর দুই মাসের জন্য সাময়িক অবসর নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ভারতীয় টেরিটোরিয়ার আর্মির কর্নেল হিসেবে দুই সপ্তাহ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করার পর সেনা পোশাক খুলে রাখলেও আর দলের সঙ্গে যোগ দেননি। একের পর এক সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্বকাপের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশের পর চলতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেও নেই। ধোনি যেহেতু উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান তার অবসর এভাবে ঝুলে থাকা ভারতের জন্যও কিছুটা সমস্যা তৈরি করেছে। কারণ এই একটা পজিশনে ঋষভ পন্থসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রস্তুত রয়েছেন। কিছুদিন আগেও শাস্ত্রী বলেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁকে সামনের দিকেই তাকাতে হবে। ধোনিকে নিয়ে কেন এত লুকোছাপা? কোন পথে হাঁটছে ভারতীয় বোর্ড? এমন সব প্রশ্ন যখন বড় হতে চলেছে, তখন বস্ সৌরভ জানিয়েছেন পেশাদারি মন আর সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের সম্মানের বিষয়টি মাথায় নিয়েই এগুচ্ছেন তারা, ‘পুরো বিষয়টিই খুব স্বচ্ছ। তবে কিছু বিষয় থাকে যা সবার সামনে বলা যায় না। কিন্তু সব খুব স্বচ্ছ রয়েছে এমএস ধোনির বিষয়ে এবং আপনারা সব কিছু সময় মতো জানতে পারবেন।’ ধোনিকে কবে বিদায় দেওয়া হবে, কি উপায়ে করা হবে তা হবে স্বচ্ছ কিন্তু সব সিদ্ধান্ত খোলামেলাভাবে নেওয়া হবে না, এমন ইঙ্গিত ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ কর্তার, ‘বোর্ড, ধোনি ও নির্বাচকদের কাছে পুরো বিষয়টি একদম পরিষ্কার। ধোনির মতো একজন চ্যাম্পিয়নকে নিয়েই যখন পুরো বিষয়, তখন কিছু জিনিস বন্ধ দরজার ভিতরে হওয়া উচিত। আর সেটাও খুব স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এবং সবাই জানে বিষয়টি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।’ তবে সৌরভ এটাও জানেন, নিয়মিত পারফর্ম না করলে দলে জায়গাটা ধরে রাখা কঠিনই হয়ে যায়, ‘নিয়মটা আসলে সবার জন্যই এক। আপনি যদি শীর্ষ পর্যায়ে পারফর্ম না করতে পারেন, তাহলে আপনি যত অভিজ্ঞই হন না কেন, আপনার বয়স যত বেশি হোক না কেন, অতীতে আপনি যত ভাল পারফর্মই করুন না কেন, নতুনদের কাছে জায়গা হারাতেই হবে।’ গ্রেট সৌরভ মানেন, ধোনি একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার, আর চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারদের বিদায়টাও হওয়া চাই রাজসিক, ‘ধোনিকে আমার শুভকামনা। আমরা সব সময়েই চাই আমাদের চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের বিদায়টা যেন সম্মানজনক হয়। ধোনিও তার ব্যতিক্রম নয়।’ ধোনির অবসর নিয়ে বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলির কি বলেন? কোহলিও সৌরভের মতো কূটনৈতিক ভাষায় জানিয়েছেন, কবে অবসর নিতে হবে মাহী সেটা ভাল করে জানেন। ২০১৮ সালে অফফর্মের জন্য ধোনির দলে থাকা উচিত কি না, চারদিকে যখন এমন সমালোচনা তখন নিজের সাবেক অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিরাট। বিশ্লেষকদের ধারণা, উইকেটের পেছনে ধোনি থাকলে কোহলির জন্য অধিনায়কত্ব করা সহজ হয়ে যায়। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রায় পুরোটা দারণ কাটলেও সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ভারত। ওই ম্যাচে ঠিক সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি ধোনি। অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপেও ধোনিকে আগের মতো প্রয়োজন আছে কি না, এখন অধিনায়ক কোহলির কথায় কিন্তু সেটি স্পষ্ট নয়! উল্লেখ্য, ২০০৪ থেকে এ পর্যন্ত ভারতের হয়ে ৯০ টেস্ট, ৩৫০ ওয়ানডে ও ৯৮টি টি২০ খেলেছেন ধোনি। অনেক রেকর্ডেও রয়েছে তার নাম।
×