ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সতীর্থ হয়েও মুশফিক-রুশোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

সতীর্থ হয়েও মুশফিক-রুশোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) প্রায় শেষের পথে। এবারের আসরে ব্যাটসম্যানরা রানের উৎসব করেছেন। আগের ৬টি আসরের চেয়ে এবার রান করার দিক থেকে ব্যাটসম্যানরা অনেক বেশি সফল হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৬ ব্যাটসম্যান ৪ শতাধিক রান করেছেন। এর আগে কোন একটি আসরে এত ব্যাটসম্যান চার শতাধিক রান করতে পারেননি। এবার খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৪৭০ রান করে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে। তারই সতীর্থ দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো ৪৫৮ রান করে দ্বিতীয় অবস্থানে। একই দলের এ দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যেই মূলত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। খুলনা ফাইনালে ওঠার কারণে এখন এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরস্পরের মধ্যে লড়াই বাকি আর মাত্র একটি। তবে এ দু’জনকে পেছনে ফেলা কিংবা ছুঁয়ে ফেলার সুযোগ আছে আরও তিন ব্যাটসম্যানের। এর মধ্যে রাজশাহী রয়্যালসের দুই সতীর্থ পরস্পরের সঙ্গে লড়ছেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য। লিটন দাসের (৪২৪) চেয়ে অবশ্য পাকিস্তানের শোয়েব মালিক (৪৩২) কিছুটা এগিয়ে আছেন। এ ২ জনের চেয়েও আরেকটু এগিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইমরুল কায়েস (৪৩৭)। তবে আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে জয়ী দলে থাকাদের সুযোগ ফাইনালেও উন্মুক্ত হবে। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ব্যাট হাতে স্মরণীয় দু’টি ইনিংস খেলেছেন মুশফিক। এবার চট্টগ্রাম পর্বে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ৫১ বলে ৯ চার, ৪ ছক্কায় ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন। সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও হাতছাড়া করেন। আবার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষেও সেঞ্চুরির আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন মিরপুরে লীগপর্বের শেষ ধাপে। সেদিনও ৫৭ বলে ১২ চার, ৩ ছক্কায় ৯৮ রান করে অপরাজিত থেকে আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মুশফিককে। এ দু’টি ইনিংসে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন তিনি। তিনটি দারুণ রেকর্ডও গড়েছেন। বিপিএল ইতিহাসে এখন সর্বাধিক ২২৩২ রানের মালিক হয়ে গেছেন তামিম ইকবালকে পেছনে ফেলে। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩ বার বিপিএলের এক আসরে চার শতাধিক রান করার রেকর্ড গড়েছেন। আবার ভারতের বিরাট কোহলির পর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে ২ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। এখন ১৩ ম্যাচে ৪টি অর্ধশতকে তার রান সর্বাধিক ৪৭০। গড় ৭৮.৩৩ ও স্ট্রাইকরেট ১৪৭.৩৩। এর আগে বিপিএলের এক আসরে তার সেরা ছিল ২০১৩ সালে ৪৪০ রান। সেবার সবার ওপরে থেকে শেষ করেছিলেন তিনি। এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। প্রথমবার এক আসরে ৫০০ রান করতে মাত্র ৩০ রানের প্রয়োজন তার। এখন পর্যন্ত বিপিএলে এক আসরে ৫ শতাধিক রান হয়েছে একবারই। রাইলি রুশো গত আসরে করেছিলেন ৫৫৮ রান। আর বাংলাদেশীদের পক্ষে সর্বাধিক রান এক আসরে তামিমের। তিনি ২০১৬ সালে ৪৭৬ রান করেছিলেন। তাকে ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে মুশফিকের প্রয়োজন মাত্র ৭ রান। ইতোমধ্যেই তামিমের দল ঢাকা প্লাটুনের বিদায় ঘটেছে, তাই ৩৯৬ রান করা তামিমের সুযোগ নেই নিজেকে এগিয়ে নেয়ার। তবে মুশফিকের সতীর্থ রুশোই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। প্রোটিয়া এ তারকা এবার ১৩ ম্যাচে ৪৫.৮০ গড়ে করেছেন ৪৫৮ রান। দ্বিতীয় অবস্থানে তিনি। ফাইনালে পরস্পরকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় নামবেন তারা। ফাইনালের আগেই মুশফিক-রুশোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ আছে তিন ব্যাটসম্যানের। আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নামবে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। রাজশাহীর পাক ব্যাটসম্যান মালিক ১৩ ম্যাচে ৪৩.২০ গড়ে করেছেন ৪৩২ রান। তারই সতীর্থ লিটন সমান ম্যাচে ৩৫.৩৩ গড়ে করেছেন ৪২৪ রান। এ দু’জনেরই সুযোগ আছে ৫শ’ রান ছুঁয়ে ফেলার। সেটি না হলেও মুশফিক-রুশোকে পেছনে ফেলার মোক্ষম সুযোগও পাচ্ছেন মালিক ও লিটন। ব্যাটিং পারফর্মেন্সে মুশফিককে পেছনে ফেলে শীর্ষে ওঠার জন্য মালিকের দরকার ৩৯ আর লিটনের প্রয়োজন ৪৭ রান মাত্র। তবে একই দলের তরুণ ওপেনার আফিফ হোসেন ধ্রুবও এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে আনতে পারেন। আফিফ এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে ৩৫৮ রান করেছেন। আজ তার বড় ইনিংস খেলে শীর্ষ চারে থাকা মুশফিক, রুশো, মালিক ও লিটনকে পেছনে ফেলার সুযোগ থাকছে। যদি রাজশাহী আজ জিতে যায় সেক্ষেত্রে ফাইনালে এ তিন সতীর্থই এক নম্বরে ওঠার জন্য পাবেন আরেকটি সুযোগ। আর হেরে গেলে চট্টগ্রামের ইমরুল সুযোগ পাবেন আজকের ম্যাচসহ ফাইনালেও। দারুণ ফর্মে থাকা ইমরুল এবার ১২ ম্যাচে করেছেন ৫৪.৬২ গড়ে ৪৩৭ রান। মুশফিককে ছাড়িয়ে যেতে তার মাত্র ৩৪ রান প্রয়োজন। এবারই প্রথম তিনি বিপিএলের এক আসরে চার শতাধিক রান করতে পেরেছেন এবং এবারই সুযোগ রুশোর পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে ৫০০ রানের মাইলস্টোন ছোঁয়ার। সে জন্য ইমরুলকে আজ করতে হবে ৬৩ রান। তবে চট্টগ্রাম জিতে গেলে ফাইনালে আরেকটি সুযোগ থাকছে ইমরুলের। ব্যাটসম্যানদের এ লড়াইয়ে না থেকেও আছেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ডেভিড মালান। ১১ ম্যাচেই তিনি ৪৪৪ রান করেছেন। কিন্তু কুমিল্লা লীগপর্ব থেকেই বিদায় নেয়াতে এখন বাকিদের লড়াই দেখে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই মালানের। শীর্ষ এ কয়েকজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে স্ট্রাইকরেটে সবচেয়ে এগিয়ে রুশো ১৫৬.৩১। তার পরে আছেন মুশফিক (১৪৭.৩৩), মালান (১৪৫.০৯) ও লিটন (১৩৯.০১)। আর সর্বাধিক ৪টি করে অর্ধশতক হাঁকিয়ে এগিয়ে আছেন মুশফিক, রুশো ও ইমরুল। এর আগে বিপিএলের কোন আসরেই এক সঙ্গে এতজন ব্যাটসম্যান চার শতাধিক রান করতে পারেননি। ২০১২ সালে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪ শতাধিক রান ছিল পাকিস্তানী ওপেনার আহমেদ শেহজাদের (৪৮৬)। ২০১৩ সালে ৪ জন ব্যাটসম্যান পেয়েছিলেন ৪ শতাধিক রান। ২০১৫ সালের তৃতীয় আসরে কেউ চার শতাধিক রান করতে পারেননি। ২০১৬ সালে শুধু তামিম (৪৭৬), ২০১৭ সালে শুধু ক্রিস গেইল (৪৮৫) ও সর্বশেষ আসরে ৩ ব্যাটসম্যান করতে পেরেছিলেন চার শতাধিক রান। সেখানে এবার ৬ ব্যাটসম্যান এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সংখ্যাটা ৭ হয়ে যেতে পারে আজ যদি আফিফ আর ৪২ রান করতে পারেন। ব্যাটসম্যানদের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটা এবার কতখানি জমজমাট এই পরিসংখ্যানই তা বলে দিচ্ছে। তাছাড়া ৩টি সেঞ্চুরিও হয়েছে এবার। ব্যাটসম্যানরা কতটা দুর্দান্ত বঙ্গবন্ধু বিপিএলে তার আরেকটি প্রমাণ দলগত সংগ্রহ থেকেও অনুমান করা যায়। ৮ বার দলীয় সংগ্রহ ২ শতাধিক রান পেরিয়েছে। এক ম্যাচে সর্বাধিক ৪৬০ রানের বিপিএল রেকর্ড হয়েছে এবার গত ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার মধ্যে হওয়া ম্যাচটিতে।
×