ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে আলোচনা

মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ধর্ষকদের ক্রসফায়ার দাবি

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ধর্ষকদের ক্রসফায়ার দাবি

সংসদ রিপোর্টার ॥ শিশু ও নারী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এ ধরনের অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড নিরসনে প্রয়োজনে ধর্ষকদের ক্রসফায়ার দেয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। বিরোধী দলের দু’জন সিনিয়র সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানালে তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সরকারী দলের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদও। তারা বলেছেন, ধর্ষকদের প্রয়োজনে ক্রসফায়ারে দিলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক কর্মকা- ঘটাতে সাহস পাবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর এ ইস্যুতে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াস সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষণের পর সরকারের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে সেই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হলেও জনমনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পরপরই সাভারে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ধামরাইয়ে একই ঘটনা ঘটে। পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ধর্ষণের মহোৎসব ঘটেছে। কেন ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এ বিষয়ে সংসদে দুই ঘণ্টার জন্য সাধারণ আলোচনার সুযোগ দিতে স্পীকারের কাছে দাবি জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের দলের প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ওই সময় এসিড নিক্ষেপ করে হত্যাকা- বেড়ে যায়। তখন এরশাদ সাহেব এটা প্রতিরোধে এসিড মারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করেছিলেন। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ-। কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে এটা কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। তাই সময় এসেছে চিন্তা করার, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ- করা হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, এত ঘটনা ঘটছে, মাদকের জন্য এত ক্রসফায়ার হচ্ছে। সমানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু এই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ, এখন পর্যন্ত কেন একজন ধর্ষক ক্রসফায়ারে মারা যায় না? বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে যদি ব্যবস্থা না নেয়া যায়, তবে কোনক্রমেই এটা কন্ট্রোল করা যাবে না। একই দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষণের পর পর পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করল। সেদিন যদি পুলিশ ওই পাঁচ ধর্ষককে মধুপুরে নিয়ে গুলি করে মারত, তাহলে কিন্তু অন্য কেউ আবার ধর্ষিত হত না। তিনি বলেন, একটার পর একটা ধর্ষণ হচ্ছে। মেয়েরা বাসে ওঠে, ওই বাসে আগে থেকেই ৪-৫ জন থাকে। নারীরা ওঠার পর দেখা যায় ওরা যাত্রী না, ওরা ধর্ষক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, সেখানে গুলি করে মারা হোক। তিনি বলেন, ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এনকাউন্টারে দিয়ে মেরে ফেলা। যাতে আর কোন ধর্ষক যেন সাহস না পায়। ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নিয়ে ওইখানে গুলি করে মেরে ফেলা হোক। কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর এমন দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেককে এভাবে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ভারতে একবার বাসে এক নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওই পাঁচ ধর্ষককে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে গেছে। কাজেই আমি অন্য দুই সংসদ সদস্য’র সঙ্গে একমত। আমি যদি চিনি যে সে ধর্ষক, সেই এই জঘন্য কাজ করেছে- তার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারি ফ্লোর নিয়ে বলেন, আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে বলছি, এসব ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দিয়ে কোন পাপ হবে না, বরং বেহেস্তে যাওয়া যাবে। কোন অসুবিধা নেই।
×