ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ সমাজসেবা কেন্দ্র বেদখল

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

১৪ সমাজসেবা কেন্দ্র বেদখল

সংবাদদাতা, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, ১৪ জানুয়ারি ॥ সোনারগাঁয়ে সমাজসেবা অফিসের অধিভুক্ত ১৪টি সমাজসেবা কেন্দ্রে কোন প্রকার কার্যক্রম না থাকায় বেশিরভাগই এখন বেদখল হয়ে গেছে। যেগুলো নির্মাণধীন ভবন টিকে আছে সেগুলোও জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তথ্যানুযায়ী সোনারগাঁয়ের একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে মোট ১৪টি সমাজসেবা কেন্দ্র (গণমিলনায়তন) রয়েছে। ১৯৮৫ সালে এ কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দানকৃত সম্পত্তিতে সেবা কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এখানে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু বহুদিন যাবত এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সোনারগাঁয়ের সব কেন্দ্রই এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তার কারণে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে তৈরি করেছে গোয়ালঘর ও ব্যক্তিগত অফিস কার্যালয়। সরেজমিনে সমাজসেবা কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে সোনারগাঁও পৌরসভার আমিনপুরে ৩ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটির অবস্থা বেশ জরাজীর্ণ। বর্তমানে এখানে কোন কার্যক্রম না থাকায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ১০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত পৌরসভার গোয়ালদী গ্রামের সেবা কেন্দ্রটি স্থানীয়রা সংস্কার করে একাংশে নামাজের স্থান তৈরি করেছেন অপরাংশে স্থানীয় যুবকরা খেলার সরঞ্জাম রাখেন। এছাড়া কেন্দ্রটির সামনের ১ শতাংশ জায়গা দখল করে ওয়াসা একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। অপরদিকে পিরোজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলেরগাঁও গ্রামে ৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এখানে স্থানীয় মঙ্গলেরগাঁও বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একই ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামে ৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি আংশিক সংস্কার করে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের থাকার বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে। উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চৌধুরীগাঁও গ্রামে ৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত পরিত্যক্ত সেবা কেন্দ্রটি দখল করে স্থানীয় লোকজন বসবাস করছেন একই ইউনিয়নের হোসেনপুর সেবা কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে ফলে জমিটি এখন চলে গেছে স্থানীয়দের দখলে। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের লাধুরচর গ্রামে ১৭ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি দখল করে গরুর খামার করেছেন স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেনের ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মিয়া। জামপুর ইউনিয়নের বুরুমদী গ্রামে ১৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি ভগ্ন অবস্থায় পরিত্যক্ত রয়েছে। একই ইউনিয়নের বাগবাড়িয়া এলাকায় ৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নুরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জমিটি দখলে নিয়ে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়াপাড়ায় ১৭ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত পরিত্যক্ত সেবা কেন্দ্রটি সংস্কার করে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঊর্মি আক্তার তার নিজস্ব কার্যালয় তৈরি করেছেন। উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের নানাখী গ্রামে ১০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কাঁচপুর ইউনিয়নের কুতুবপুরে সেবা কেন্দ্রের ৮ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া বারদী ইউনিয়নের সেবা কেন্দ্রের ৬ শতাংশ ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের আলাবদী গ্রামে সেবা কেন্দ্রের ১০ শতাংশ জমিও বেদখল হয়ে গেছে। বেদখল হওয়া সেবা কেন্দ্রগুলোর বর্তমান দখলদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তাই আমরা এগুলোকে একটু সংস্কার করে ব্যবহার করছি। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে তখন সরকার আবার এগুলো নিয়ে যাবে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবিকা সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সেবা কেন্দ্রগুলোতে কোন কার্যক্রম না থাকায় এগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত রয়েছে। ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে কুতুবপুর, বারদী, ভবনাথপুর, আলাবদী, গোয়ালদী ও নানাখী এ ৬টি সমাজসেবা কেন্দ্রের দলিল আমাদের হাতে নেই। এগুলোর দলিল উদ্ধার ও বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে সেবা কেন্দ্রগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
×