ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্স এসেছে ১০ বিলিয়ন ডলার

৬ মাসে প্রবাসীরা প্রণোদনা পেলেন ১৪২৭ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

৬ মাসে প্রবাসীরা প্রণোদনা পেলেন ১৪২৭ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স (প্রবাসীদের আয়) প্রেরণে উৎসাহিত করতে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে অর্থাৎ ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। ইতোমধ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠিয়ে গত ছয় মাসে (১ জুলাই থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মোট ১ হাজার ৪২৭ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকা প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত পেয়েছেন প্রবাসীরা। প্রণোদনায় ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ১০২ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫২ টাকা। তাই রেমিটেন্সে প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে বরাদ্দকৃত অর্থের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অবশিষ্ট ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার পুরোটাই একসঙ্গে অর্থবিভাগের কাছে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে দুই কিস্তি না দিয়ে আপাতত তৃতীয় কিস্তি অর্থাৎ ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড় করতে সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণার পর তা বাস্তবায়ন করছে সরকার। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স প্রেরণের বিপরীতে প্রণোদনার তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছে। আবেদনে বলা হয়, বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স প্রেরণের বিপরীতে প্রণোদনা প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার মধ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলো বরাবর গত ১ জুলাই থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৪২৭ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকা ছাড় করা হয়েছে। যা প্রণোদনা হিসেবে রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের দেয়া হয়েছে। ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ১০২ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫২ টাকা । চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট রেমিটেন্স এসেছে ৭৭১ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে যা এসেছিল ৬২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এই হারে রেমিটেন্স আহরণ অব্যাহত থাকলে ছাড়কৃত অর্থেও অবশিষ্ট অংশ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। সেজন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অবশিষ্ট ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার পুরো অর্থেরই প্রয়োজন হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই ২০১৯-২০ অর্থবছরের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির মোট ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা একত্রে ছাড়করণের জন্য জরুরিভাবে অনুরোধ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় না করে শুধু তৃতীয় কিস্তির টাকা ছাড় করার জন্য অর্থ বিভাগের বাজেট শাখাকে অনুরোধ জানায়। মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন অর্থ সচিব। সুতরাং ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে তৃতীয় কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে ছাড়করণের নিমিত্তে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে এর একটি তালিকাও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তালিকায় দেখা গেছে, গত ছয় মাসে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা প্রণোদনা পেয়েছেন ৯৯ কোটি ৯২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৭ টাকা। তারা জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনা পেয়েছেন ৭৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪৮ হাজার ২১ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৯২ হাজার ৩৯০ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়েছেন ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৮০ টাকা। এছাড়া প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে বেসরকারী খাতের ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনা পেয়েছেন ২৭১ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৯ টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে পেয়েছেন ৩০ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯৬ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়েছেন ১৪ কোটি ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৭ টাকা। এভাবে দেশের ৫৫টি তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে গত জুলাই থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ৪২৭ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকা প্রণোদনা হিসেবে পেয়েছেন প্রবাসীরা। এদিকে পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর প্রণোদনা পেতে সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। তবে রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অঙ্কের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।
×