ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নীল নদের উজানে বাঁধ নিয়ে মুখোমুখি মিসর-ইথিওপিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

নীল নদের উজানে বাঁধ নিয়ে মুখোমুখি মিসর-ইথিওপিয়া

নীল নদের ওপর বিশাল জল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাঁধ তৈরি নিয়ে মিসর ও ইথিওপিয়ার অনেকদিন ধরেই বিরোধ চলছে। এই নিয়ে দুই দেশ চলতি বছর ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসবে। বৃহস্পতিবার বৈঠকটি হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। বিবিসি। ইথিওপিয়া বাঁধটি তৈরি করলে সেটি হবে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুত কেন্দ্র। ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে নীল নদের উৎস নদী ব্লু নীলে ২০১১ সালে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ওই স্থান থেকে নীল নদের ৮৫ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয়। বিশাল এই বাঁধ নিয়ে মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে, যার মধ্যে পড়েছে সুদান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইথিওপিয়া নদীটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। জলবিদ্যুত কেন্দ্র কোন নদীর পানি সরিয়ে ফেলে না তবে এর ফলে নদীটির স্রোত প্রবাহের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। জল বিদ্যুত কেন্দ্রের ৭৪ বিলিয়ন ঘনমিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার পূর্ণ হতে যত সময় লাগবে নদীটির প্রবাহ ততই কমে যাবে। মিসর, সুদান এবং ইথিওপিয়া মিলে চার বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে এখন মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইথিওপিয়ার পানিসম্পদ ও জ্বালানিমন্ত্রী বেকেলে সেলেশি অভিযোগ করেছেন, কোন চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা নেই মিসরের। তবে মিসরের পানি সম্পদ মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়ছে, আলোচনায় সবগুলো পক্ষ সব বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। মিসর পানির জন্য নীল নদের ওপর ৯০ ভাগ নির্ভর করে। স্থিতিশীল পানি প্রবাহ মিসরের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২৯ সালের একটি চুক্তি (পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালের আরেকটি চুক্তিতে) মিসর এবং সুদানকে নীল নদের পানির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হয়। ইথিওপিয়া বলেছে, শতবর্ষ পুরনো ওসব চুক্তি মানতে তারা বাধ্য নয় এবং ২০১১ সালে আরব জাগরণের পরপরই তারা বাঁধের কাজকর্ম শুরু করে। কিন্তু মিসরের উদ্বেগ হলো, নীল নদে যদি পানি কমে যায়, তাহলে সেটি লেক নাসেরকে প্রভাবিত করবে। মিসরের আসওয়ান বাঁধে পানির প্রবাহ কমে যাবে, যেখান থেকে মিসরের বেশিরভাগ বিদ্যুত উৎপন্ন হয়। ইথিওপিয়ার ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও বিদ্যুত সুবিধার বাইরে। এই বাঁধ থেকে যে বিদ্যুত উৎপন্ন হবে, তা দেশটির নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত হলে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও রফতানি করা যাবে। নিজেদের সক্ষমতার একটি প্রতীক হিসেবেও এই বাঁধকে দেখতে চায় ইথিওপিয়া। এই বাঁধ তৈরিতে বাইরের অর্থায়ন নিচ্ছে না দেশটি। সরকারী বন্ড এবং প্রাইভেট ফান্ড থেকে বাঁধটি তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এই বাঁধের বিষয়ে অন্য দেশের কথা বলাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে ইথিওপিয়া।
×