ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইমপিচমেন্ট শুনানি মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে অনৈতিক ঘটনা ॥ ট্রাম্প

ট্রাম্পের ভাগ্য ম্যাককনেলের হাতে

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

ট্রাম্পের ভাগ্য ম্যাককনেলের হাতে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট ভাগ্য এখন মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান মিচ ম্যাককনেলের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান রাজনীতিক ম্যাককনেল ২০১৫ সাল থেকে মার্কিন সিনেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। খবর এপির। সিনেটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি ট্রাম্প ও ম্যাককনেলের মধ্যেকার সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে। গত তিন বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ম্যাককনেলের মধ্যে এই সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। এখন এই সম্পর্ক এক চরম সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ম্যাককনেলকে অবশ্য এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। কারণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট সাক্ষ্য চলাকালে তিনি সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যদের এক প্রকার কোণঠাসা করে রাখেন। এই সব সিনেটর মূলত ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের জন্য ডেমোক্র্যাট শিবিরের সঙ্গে সুর চড়িয়েছিলেন। সোমবার ম্যাককনেল ও মার্কিন সিনেটের কিছু রিপাবলিকান সদস্য মিলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ কিভাবে সহজেই খারিজ করে দেয়া যায়-তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ওই আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা এই তথ্য জানান। কেন্টার্কির এই রিপাবলিকান নেতা অবশ্য হোয়াইট হাউসেই কর্মরত রয়েছেন। অবশ্য তিনি নিজেকে একজন পুরোপুরি নিরপেক্ষ লোক হিসেবে দাবি করেননি। বৈঠকের পর সোমবার সিনেট অধিবেশন শুরুর আগে মিচ ম্যাককনেল ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধি পরিষদ ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি করেছে। কিন্তু সিনেট তার সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ইমপিচমেন্ট শুনানির জন্য মার্কিন সিনেট প্রস্তুতি নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই শুনানি হতে চলেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট শুনানির যাবতীয় নথি সিনেটে প্রেরণ করবে। প্রতিনিধি পরিষদ মূলত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনেছে। প্রথমত ক্ষমতার অপব্যবহার। দ্বিতীয়ত প্রতিনিধি পরিষদে ক্ষমতা খাটানো। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনন্সিকে অস্ত্র সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর প্রতিনিধি পরিষদে এই বিষয়ের তদন্ত আটকে দেয়ার চেষ্টা করেন। ম্যাককনেলের সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী জোস হোমস বলেন, ইমপিচমেন্ট শুনানিতে ম্যাককনেলকে পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। আবার এই বিচার প্রক্রিয়ায় একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই এই বিচার প্রক্রিয়ায় ম্যাককনেলকে প্রেসিডেন্টের আস্থা ধরে রাখা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মাথায় রেখে এগুতে হবে। মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। দলটির রয়েছে ৫৩ ভোট। অপরদিকে ডেমোক্র্যাটদের ৪৭টি ভোট রয়েছে। এখন ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৬৭টি ভোট দরকার। এদিকে সিনেটে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। এ জন্য ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি, পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির প্রধান এ্যাডাম শিফ এবং যে হুইসেল ব্লোয়ার জেলেনেস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের বিষয়টি ফাঁস করেছিলেন তাকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। কার্যত এই অজ্ঞাত হুইসেল ব্লোয়ারের তথ্যের ভিত্তিতেই ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হয়েছেন ট্রাম্প। ফাঁসকৃত তথ্যে বলা হয়, ট্রাম্প জেলেনেস্কির সঙ্গে তার ফোনালাপের রেকর্ড মুছে দেয়ার জন্য চাপ দেন। চলতি সপ্তাহান্তে ট্রাম্প সিনেটে এই ইমপিচমেন্ট শুনানি বিষয়ে বলেন, সিনেট চাইলে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সহজেই খারিজ করে দিতে পারে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি যখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সিনেটে প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখন এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, এই ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে অনৈতিক ও অন্যের মিথ্যা দোষ খুঁজে বেরানোর উদাহরণ হিসেবে পরিগণিত হবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি মিচ ম্যাককনেল আমার বিরুদ্ধে একজন মার্কিন নারীর (ন্যান্সি পেলোসি) ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে রেহাই দেবেন। ট্রাম্পের আগে দুইজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। বিল ক্লিনটন ও রিচার্ড নিক্সন ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান।
×