ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাকে বিদায় করে কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকাকে বিদায় করে কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাঁ হাতের তালুতে ১৪ সেলাই নিয়েও খেলতে নেমেছিলেন ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট হাতে নেমে ২ বল মোকাবেলা করেন আবার ৪ ওভার বোলিংও করেন। কিন্তু এমন আত্মনিবেদন নিয়েও দলের বিদায় রুখতে পারেননি মাশরাফি। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কাছে ৭ উইকেটে হেরে গেছে ঢাকা। এর ফলে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলে ফাইনালে ওঠার একটা সুযোগ তৈরি হলো চট্টগ্রামের। বুধবার সেই কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। আগে ব্যাট করে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও শাদাব খানের ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান তুলেছিল ঢাকা। জবাবে ১৪ বল হাতে রেখেই ১৭.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৭ রান তুলে কাক্সিক্ষত জয় তুলে নেয় চট্টগ্রাম। এ পরাজয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএল থেকে বিদায় ঘটল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল ঢাকা প্লাটুনের। শনিবার রাতেই মাশরাফিকে নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে শুরু হয়ে যায় শঙ্কা। সেদিন রাতের ম্যাচে রাইলি রুশোর শটকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচে পরিণত করতে গিয়ে বাঁ হাতের তালু ফেটে গিয়েছিল তার। পরে ১৪টি সেলাই দিতে হয়, চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন ৩ দিন আগে এই হাত নিয়ে কিছুই করতে পারবেন না তিনি। কিন্তু মাশরাফি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন এলিমিনেটর ম্যাচ খেলবেন। সত্যি সত্যি হাতে ভারি ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে তিনি টস করতে নামেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে, আর তা দেখে পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক উল্লাসধ্বনি দিয়েছেন। লড়াকু মাশরাফি দলের জন্য আরেকটি আত্মনিবেদনের দারুণ নিদর্শন রাখলেন। তবে টস হেরে তার দল ঢাকা আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুধু হতাশাই উপহার দিতে থাকে। শুরু থেকেই রুবেল হোসেন আর মেহেদী হাসান রানার দারুণ বোলিংয়ে রান করতে হিমশিম খেয়েছেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক সৌরভ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে তামিমকে (১০ বলে ৩) বোল্ড করে দেন রুবেল। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারের মধ্যে সাজঘরে ফিরে যান এনামুল হক বিজয় (০) ও লুইস রিস (০), রান ওঠে মাত্র ২৮! বিপিএলের ইতিহাসে সর্বাধিক ১১ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার লজ্জাজনক রেকর্ড গড়েন বিজয়। তার পেছনে পড়ে গেছেন ইমরুল কায়েস ১০ ও সাব্বির রহমান ৯ বার করে শূন্যতে আউট হয়ে। শুরুর এই বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঢাকা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিপর্যয় বাড়তে থাকে ঢাকার। দলীয় ৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ঢাকা। রায়াদ এমরিট বল হাতে ঝড় তোলেন। তার করা নবম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে মেহেদী হাসান (৭) ও জাকের আলী অনিক (০) সাজঘরে ফেরেন। অপরপ্রান্তে মুমিনুল দেখেশুনে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তাকেও ১১তম ওভারে এসে সাজঘরের পথ দেখান এমরিট। মুমিনুল ৩১ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩১ রান করতে পেরেছিলেন। দলের চরম বিপর্যয়ে এসে আসিফ আলীও (৫) কিছুই করতে পারেননি। ৬০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ঘোর বিপদে থাকা ঢাকাকে উদ্ধার করেন শাদাব ও থিসারা পেরেরা। অষ্টম উইকেটে দু’জন মিলে তুলে ফেলেন ৩০ বল থেকে ৪৪ রান। এতেই ১৮তম ওভারের মাঝামাঝি দলীয় রান একশ’ পেরোয় ঢাকা। কিন্তু এরপরই সাজঘরে ফেরেন থিসারা। ১৩ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ২৫ রান করেছিলেন। তবে শাদাব তার টি২০ ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পেয়ে যান মাত্র ৩৬ বল থেকে। তার সঙ্গে যোগ দেন মাশরাফি, দুই বল মোকাবেলাও করেন। এরপর আর মাশরাফিকে সুযোগই দেননি শাদাব। দলের রানকে তিনি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ৪১ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় শাদাব অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে। এই ম্যাচের আগে শাদাব ১১১ টি২০ খেলে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন। তার ক্যারিয়ারসেরা এই ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে ঢাকা। চট্টগ্রামের পক্ষে এমরিট ৩টি এবং রুবেল ও নাসুম আহমেদ ২টি করে উইকেট নেন। চট্টগ্রামের হয়ে জবাব দিতে নেমে ক্রিস গেইলের সঙ্গী হয়ে জিয়াউর রহমান ইনিংস উদ্বোধন করে ঝড় তোলেন। ব্যাটিং তা-বে সিদ্ধহস্ত গেইলই ছিলেন নিস্পৃহ। কিন্তু জিয়া ১২ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ২৫ রানের ইনিংস উপহার দেন। ষষ্ঠ ওভারে তাকে অফস্পিনার মেহেদী সাজঘরে ফেরালে প্রথম সাফল্য পায় ঢাকা। ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গে গেলেও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৩ রান তুলে বেশ ভালই এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম। প্রথম থেকেই দারুণ বোলিং করছিলেন অবশ্য মাশরাফি। কিন্তু ধীরস্থির গেইলও কোন ঝুঁকি নেননি। তিনি দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে আরও ৪৯ রানের জুটি গড়েন যার মধ্যে ইমরুলের অবদান ছিল ২২ বলে ১ চার, ৩ ছক্কায় ৩৩! ১৩তম ওভারে ইমরুল আউট হওয়ার পর ১৫তম ওভারে গেইলও সাজঘরে ফেরেন ফাইন লেগে মাশরাফির দারুণ এক ক্যাচে। বাঁ হাতে ভারি ব্যান্ডেজ থাকায় শুধুমাত্র ডানহাতে ক্যাচ লুফে তিনি গেইলকে সাজঘরে ফিরতে বাধ্য করেন। স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে গেইল ৪৯ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেছিলেন। ইনিংসের ১৬ ওভার শেষে মাঠের বাইরে যান মাশরাফি। মারাত্মক ইনজুরি নিয়েও ৪ ওভার বোলিং করেন তিনি। ৩৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্যই থেকেছেন। শেষে দেখা গেছে মাহমুদুল্লাহ তা-ব। তিনি মাত্র ১৪ বলে ৪ ছক্কায় ৩৪ রানের অপরাজিত এক ধ্বংসাত্মক ইনিংস উপহার দেয়াতে ১৪ বল আগেই জয় তুলে নেয় চট্টগ্রাম। শাদাব ২ উইকেট নিতে পারলেও ২.৪ ওভারে খরচা করেছেন ৩২ রান। মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং ঝড়ে ৩ ওভারেই ৪৫ রান তোলে তারা। ১৭.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৭ রান তুলে জয় পাওয়া চট্টগ্রাম দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে আগামী বুধবার। আর বিদায় নিল ঢাকা। স্কোর ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-ঢাকা প্লাটুন এলিমিনেটর ম্যাচ (মিরপুর) টস ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স (ফিল্ডিং)। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ১৪৪/৮; ২০ ওভার (শাদাব ৬৪*, মুমিনুল ৩১, থিসারা ২৫; এমরিট ৩/২৩, নাসুম ২/১১, রুবেল ২/৩৩)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস- ১৪৭/৩; ১৭.৪ ওভার (গেইল ৩৮, মাহমুদুল্লাহ ৩৪*, ইমরুল ৩২, জিয়া ২৫, ওয়ালটন ১২*; শাদাব ২/৩২)। ফল ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রায়াদ এমরিট (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।
×