ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ মোজাম্মেল হকের কাজ চিরদিন বেঁচে থাকবে

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ডাঃ মোজাম্মেল হকের কাজ চিরদিন বেঁচে থাকবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ ‘মাটি ও মানুষের নেতা প্রয়াত খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হক এমপি একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ছিলেন। অত্যন্ত সাধাসিধে, অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী প্রয়াত এই সংসদ সদস্য, রাজনীতি, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি সামাজিক উন্নয়নে, দুঃখী মানুষের পাশে থেকে কাজ করে গেছেন। ডাঃ মোজ্জামেল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও তার কর্ম আমাদের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবে। তার জনসেবা, মানবসেবার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’ স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সদ্য প্রয়াত চলতি সংসদের বাগেরহাট-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেছেন। শোক প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর কারণে স্পীকার দিনের সকল কার্যক্রম স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশন আজ মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্তু মুলতবি ঘোষণা করেন। শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের প্রবীণ নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হক অত্যন্ত অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় শরণার্থীদের ক্যাম্পে একজন চিকিৎসক হিসেবে দুঃখী মানুষের সেবা করতেন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় বিধবা ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছেন। রাজনৈতিক কারণে অনেকবার বাগেরহাট গেছি। সবসময় দেখেছি তার অমায়িক ও মার্জিত ব্যবহার। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেকমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি চলে গেলেও তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, আমাদের ভবিষ্যত পথ চলতে অনুপ্রেরণা দেবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হক একজন গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতেন, একজন উচ্চবিত্তের সঙ্গেও সেভাবেই আচরণ করতেন, কথা বলতেন। তার বাড়ি ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য অবারিত, সাধারণ মানুষের জন্য ছিল অবারিত। চিকিৎসা প্রদানে কোন রোগীর কাছ থেকে তিনি কোন টাকা নিতেন না, বরং তাদের ওষুধ কেনা পর্যন্ত ব্যবস্থা করে দিতেন। তার জনসেবা, মানবসেবার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। অপর সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হক একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, এলাকার মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ডাঃ মোজাম্মেল হক একজন জনপ্রিয় চিকিৎসকও ছিলেন। বিশেষ করে মা-বোনের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন তিনি। তিনি প্রসূতি মায়েদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতেন। সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজুলুল করিম সেলিম বলেন, মানুষের সঙ্গে তার ব্যবহার ছিল অমায়িক। তিনি আমৃত্যু মানুষের সেবা করে গেছেন। তিনি সমাজের জন্য কাজ করেছেন। ডাঃ মোজাম্মেল হক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু তার কর্ম আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী আবুল কামাল আজাদ বলেন, ডাঃ মোজাম্মেল হক একজন চিকিৎসক হিসেবে মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতেন। এক সমাজ সেবক ছিলেন। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমরা যারা ৮০ বছরের বয়সের ওপরে তারাও যে কোন সময় চলে যেতে পারি। তাই যদি কোন ভুল-ত্রুটি করে থাকি, সবাই আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, তিনি একজন ভাল বক্তা ছিলেন। রাজনীতি, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি সামাজিক উন্নয়নে, দুঃখী মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন। নৌপরিবহন প্রতিন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত স্বজ্জন ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হক। তার কর্মকা- এবং পরামর্শ শুনে আমরা উৎসাহিত হতাম। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মংলা বন্দরে গেলে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী অনেক পরামর্শ দিয়ে আমাকে উৎসাহিত করেছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন। প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী নিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। শোক প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, আসম ফিরোজ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান প্রমুখ। পরে শোক প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
×